আগাম করের অব্যাহতি চান জাহাজভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পে দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করে আসছিল বাংলাদেশ । কিন্তু ভ্যাট আইনের প্রভাবে এবং করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে শিল্পটি বর্তমানে কঠিন একটি সময় পার করছে । কর্মহীন হয়ে পড়ছে অনেক শ্রমিক। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করনীতিতে আগাম করে অব্যাহতি চান এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। 

শিল্পটির সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) কর্মকর্তারা জানান, জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে আগে কোনো ধরনের আগাম কর দিতে হতো না। কেবল প্রতি টনে ৩০০ টাকা হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু পরে নতুন ভ্যাট আইনে এ শিল্পে জাহাজের মোট মূল্যের ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়, যা আমদানির সময় পরিশোধ করতে হয়। এ আগাম কর পরবর্তীতে সমন্বয় ও ফেরত দেয়ার বিধান থাকলেও তা ফেরত পাচ্ছে না শিল্প মালিকরা। সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আগাম কর ফেরত দেয়ার বিধান থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে একটি টাকাও ফেরত পাননি । ফলে ব্যবসায়ীদের মূলধন ঘাটতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। চলতি অর্থবছরে এখনও পর্যন্ত সরকারের কাছে ২৩৮ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। 

চলমান করনীতিতে ৫ শতাংশ আগাম কর ধার্য্য করায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এর আগের অর্থবছরগুলোতে জাহাজ আমদানির পরিমাণ ও সরকারকে রাজস্ব দেয়ার হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ছিল। নতুন নীতির কারণে সরকারের কোষাগারে অর্থ জমছে কম। জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় বেকার শ্রমিকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। 

মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরোয়ার আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন এবং তার বিপরীতে মোটা অংকের সুদ গোনেন। তাছাড়া সার্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেখানে তারল্যের ব্যাপক সংকট সেখানে আগাম কর আদায় করার ফলে একদিকে যেমন সুদ বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা মূলধন সংকটে পড়ছেন। 

বিএসবিআরএর নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, করোনাভাইরাসজনিত অথনৈতিক মন্দা মোকাবেলা ও এ খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য আসন্ন বাজেটে সরকারের নীতি সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে । শিল্প মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে প্রস্তাব দিয়েছে । এখন এনবিআরের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে শিল্পটাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন পুরনো জাহাজ আমদানি করে যা মোট পুরনো জাহাজের আমদানির ২৫ শতাংশের বেশি। এ শিল্পের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগারে শুল্ক ও অন্য খাতে রাজস্ব হিসেবে জমা হয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন