আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত ১৭৭০

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার ৭৭০। এর মধ্যে গতকাল মারা গেছে ১১৫ জন। তবে টানা চতুর্থ দিনের মধ্যে মৃতের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এর আগে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত সর্বোচ্চ ৪৫০ জন একদিনে মারা যায়। গতকাল মারা যাওয়া সবাই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব হওয়া মূল কেন্দ্রস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। মৃতের পাশাপাশি ভাইরাসটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। এদিকে চীনের বাইরে সর্বোচ্চসংখ্যক আক্রান্ত হওয়া দেশ জাপান ছাড়তে শুরু করেছে দেশটির একটি প্রমোদতরীতে আটকে থাকা বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। খবর এএফপি।

গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এর পর পরই ভাইরাসটি ক্রমান্বয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরই মধ্যে প্রায় ৩০টি দেশে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া চীনের বাইরে হংকং, ফিলিপাইন, জাপান, ফ্রান্স তাইওয়ানে একজন করে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেছে। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের জেরে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বাসিন্দার প্রদেশ হুবেই কার্যত চীন থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রদেশটির বাসিন্দাদের বাইরে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এছাড়া হুবেই কর্তৃপক্ষ পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য সরবরাহের গাড়ি নাগরিক পরিষেবার কাজে নিয়োজিত পরিবহন ছাড়া প্রদেশটিতে যেকোনো ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একইভাবে বেইজিং পৌর কর্তৃপক্ষও ছুটি শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নাগরিকদের ১৪ দিন নিজ উদ্যোগে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে বেইজিং। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুবেই প্রদেশে চলমান মহামারীর মধ্যে মার্চের বার্ষিক পার্লামেন্ট সেশন বাতিল করা হয়েছে। যদিও ৩৫ বছর ধরে মার্চে এটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

চীনের বাইরে আক্রান্তের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাপান। দেশটিতে এরই মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত এক ব্যক্তি মারা গেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালিসহ ৫০টির বেশি দেশের তিন হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে ডায়ামন্ড প্রিন্সেস নামে একটি প্রমোদতরী দেশটির উপকূলে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে আটকে রয়েছে। আটকে থাকা এসব যাত্রীর মধ্য থেকে এরই মধ্যে ৪৫৪ জন কভিড-১৯- সংক্রমিত হয়েছে। গতকাল নতুন করে জাহাজটির আরো ৯৯ যাত্রীর সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশটির স্থলভাগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫। সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধির ফলে টোকিও এখন তার নাগরিকদের যেকোনো ধরনের বড় সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে। এমনকি গতকাল দেশটির রাজার জন্মদিন অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। কারণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে টোকিওতে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশের সম্ভাবনা ছিল।

এদিকে জাপানের প্রমোদতরীতে কোয়ারান্টাইনে থাকা যাত্রীরা দেশটি ছাড়তে শুরু করেছে। জাহাজটিতে আটকে থাকা ৩০০ মার্কিন নাগরিককে গতকাল নিজ দেশে ফেরত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুটি বিমানে করে এসব যাত্রীকে টেক্সাস ক্যালিফোর্নিয়ায় নিয়ে যায় ওয়াশিংটন। এসব যাত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার আগে তাদের মধ্যে ১৪ জনের শরীরে কভিড-১৯-এর পজিটিভ তথ্য দিয়েছে জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। এর পরও এসব নাগরিককে বিমানের মধ্যে কোয়ারান্টাইন করে নিজ দেশে ফেরত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রমোদতরীতে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না ওয়াশিংটন। জানা গেছে, ফেরত নেয়া এসব যাত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আরো ১৪ দিন কোয়ারান্টাইন করে রাখা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অস্ট্রেলিয়াও তাদের নাগরিকদের জাহাজটি থেকে উদ্ধার করে নিজ দেশে ফেরত নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানিয়েছেন, জাহাজটিতে কোয়ারান্টাইনে থাকা ২০০-এর বেশি অস্ট্রেলীয়কে আগামীকাল নাগাদ উদ্ধার করা হবে। এরপর তাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কানাডা, হংকং, ইতালিও তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন