এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় এক কোটি হেক্টর বা ২ কোটি ৫০ লাখ একর জমি পুড়ে গেছে। এসব জমির বেশির ভাগই গরু কিংবা ভেড়ার চারণভূমি ও বন। দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির প্রায় পাঁচ কোটি পশু-পাখি। আগুনে পুড়ে মারা গেছে লক্ষাধিক গবাদিপশু। উৎপাদিত ফসল ক্ষেতেই পুড়েছে অস্ট্রেলিয়ান খামারি বেলিন্দা অ্যাট্রে। দেশটির সাম্প্রতিক দাবানল কেড়ে নিয়েছে তার মুখের হাসি। আগুনের ছোবল থেকে কোনো রকমে স্বামী-সন্তানসহ নিজের জীবন বাঁচাতে পেরেছেন। তবে বাঁচাতে পারেননি নিজেদের খামার। খামারে থাকা গবাদি পশু। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে খামারে ফিরে ধ্বংসস্তূপে পেয়েছেন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ১১টি গরু। আহত অবস্থায় ছিল আরো অসংখ্য গবাদি পশু।
অনেকটা একই রকম অবস্থা দেশটির অন্য কৃষক ও খামারিদের। ২০১৯ সাল ছিল অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। বছরজুড়ে বাড়তি তাপমাত্রার সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে দেখা দেয় তীব্র দাবানল। নানামুখী উদ্যোগের পরও এখন পর্যন্ত ধিকিধিকি জ্বলছে অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ প্রান্তর। দাবানলে ২৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির কৃষি ও প্রাণ-প্রতিবেশ।
সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলের বিরুদ্ধে টানা লড়াই চালিয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশটির এক কোটি হেক্টর বা ২ কোটি ৫০ লাখ একর জমি পুড়ে গেছে। আয়তন হিসেবে এটি পুরো দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা পর্তুগালের চেয়েও বড়। এসব জমির বেশির ভাগই ছিল বন, গরু কিংবা ভেড়ার চারণভূমি। দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির প্রায় পাঁচ কোটি পশুপাখি। আগুনে পুড়ে মারা গেছে লক্ষাধিক গবাদি পশু। উৎপাদিত ফসল ক্ষেতেই পুড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি ও পরিবেশ।
অস্ট্রেলিয়া সরকার এখনো দাবানলের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব নিরূপণ করতে পারেনি। কাজ চলছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার দাবানলের কারণে ১৩৮ কোটি ডলারের ত্রাণ তহবিল করেছে। এ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তাত্ক্ষণিকভাবে ৫১ হাজার ৬৫০ ডলার অনুদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
দেশটির বিভিন্ন এলাকায় দাবানল এখনো চলছে। তাই এর প্রভাব নিরূপণের সময় এখনো আসেনি। মনে করা হচ্ছে, এ দাবানলের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে আসতে পারে। আর্থিক ধাক্কা সামলাতে কোনো কোনো খামারির পাঁচ-ছয় বছর লেগে যেতে পারে। তীব্র এ দাবানল অস্ট্রেলিয়ার কৃষি, পরিবেশ ও প্রাণ-প্রতিবেশের ইতিহাসে ২০১৯ সালকে কালো অধ্যায়ে জায়গা দিয়েছে।
বিবিসি, সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে