কে এই কাসেম সোলাইমানি

বণিক বার্তা অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে ইরাক নিয়ে বেশ বেকায়দায় আছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৩১ ডিসেম্বর দেশটির রাজধানীতে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে একদল বিক্ষোভকারী। তবে এই বিক্ষোভকারীদের চেয়ে ইরাকে মার্কিন প্রশাসনের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। এই টানাপোড়ের মাঝে রাজধানী বাগদাদে হামলা চালিয়ে ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘটনা ইরাক তথা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে এই কাসেম সোলাইমানি? তিনি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে?

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া কাসেম সোলাইমানি ছিলেন ইরানের অন্যতম প্রধান রণকৌশলী। নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে আশেপাশের দেশগুলোতে ইরানের সরব সামরিক উপস্থিতির অনুঘটক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। ১৯৯৮ সালে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর থেকে অন্তরালে লেবানের হিজবুল্লাহ, সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ এবং ইরাকে শিয়া মতাদর্শী মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক জোরদার করেন তিনি।

সোলাইমানির নেতৃত্বে কুদস ফোর্স নিজেদের সক্ষমতা ব্যাপক মাত্রায় বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়। এসময়ে বাহিনীটি ইরানের সীমা ছাড়িয়ে আশেপাশের দেশগুলোতে গোয়েন্দাগিরি, আর্থিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেইনি এবং অন্যান্য শীর্ষ শিয়া নেতাদের সঙ্গে দেখা যেতে থাকে। এতে তিনি বিভিন্ন পক্ষের আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হন।

সোলাইমানির জন্ম ইরানের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের কেরমান প্রদেশের এক দরিদ্র পরিবারে। পরিবারকে সহায়তায় ১৩ বছর বয়সেই তিনি উপার্জন করা শুরু করেন। অবসর সময়ে তিনি শরীর গঠন এবং খোমেইনির নসিহত শুনতেন।

ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন জানিয়েছে, মাত্র ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সোলাইমানি। ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের সময়ে সামরিক বাহিনীতে তিনি নিজের অবস্থান জোরদার করতে শুরু করেন। প্রথমবারের মত তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা যায় দেশটির পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশে। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় সীমান্তে সামরিক মিশন পরিচালনা করে তিনি জাতীয় বীরে পরিণত হন।

২০০৫ সালে ইরাকে সরকার পুনর্গঠনের পর দেশটিতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন সোলাইমানি। বিশেষ করে ইব্রাহিম আল-জাফরি এবং নুরি আল মালিকি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন। ওই সময়ে বদর অর্গানাইজেশন ইরাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনে পরিণত হয়। এ সংগঠনটিকে বলা হয় ইরাকে ইরানের সবচেয়ে পুরনো প্রতিনিধি। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সোলাইমানি আসাদ সরকারকে সহায়তায় ইরাকি মিলিশিয়াদের দেশটিতে পাঠান।

গুরুত্ব বাড়ার পর থেকেই বেশ কয়েকবার সোলাইমানির মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে ২০০৬ সালে উত্তরপূর্ব ইরানে বিমান দুর্ঘটনায় সামরিক কর্মকর্তাদের মৃত্যু এবং ২০১২ সালে সিরিয়ার দামেস্কতে বোমা হামলায় বাশার আল আসাদের শীর্ষ সহযোগীদের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালের নভেম্বরে সিরিয়ার আলেপ্পোতে যুদ্ধে আসাদের অনুগত বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়ার সময় সোলাইমানি নিহত বা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।আয়াতুল্লাহ আলী খামেইনির সঙ্গে কাসেম সোলাইমানি

সোলাইমানির কারণে সবচেয়ে বড় অসুবিধায় ছিল মার্কিন মিত্র ইসরায়েল। গত বছর সিরিয়াতে ইরানের রেভল্যুনারি গার্ডের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোর কথা জানায় দেশটি। আগস্টে ইসরায়েল দাবি করে, এসব ঘাঁটি থেকে ড্রোন হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই সময়ে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সোলাইমানিকে  নির্মূলে তার দেশ কাজ করছে। গত অক্টোবরে ইরান জানায়, সোলাইমানিকে হত্যার জন্য ইসরায়েলি এবং আরব সংস্থার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য আইএসকে কোণঠাসা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সোলেইমানি।  ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর পাশাপাশি হাশদ আল শাবি নামে পরিচিত ইরান সমর্থিত শিয়া প্যারামিলিটারি গ্রুপগুলোও অংশ নেয়। এসব প্যালামিলিটারি গ্রুপের মধ্যে বেশ কিছু সোলেইমানির নিয়ন্ত্রণে ছিল।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়েল আমেরিকান স্ট্যাডিজের প্রধান মোহাম্মদ মারান্দি বলেন, আইএসকে পরাজিত করতে সোলাইমানির ভূমিকা তাকে ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মানুষদের কাছে বীরের মর্যাদা পাইয়ে দেয়। তার মত লোক না থাকলে এই অঞ্চলটি আইএসের দখলে চলে যেত।

সূত্র: আল জাজিরা


ইরান-যুক্তরাষ্ট্র তিক্ত-মধুর সম্পর্কের ইতিহাস

ট্রাম্পের নির্দেশে ইরাকে ইরানি জেনারেলকে হত্যা

ইরানি জেনারেল হত্যাকাণ্ডে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম, অস্থিরতার শঙ্কা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন