অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) কার্যক্রম। কেন্দ্রের অবশিষ্ট ভেন্টিলেটরটিও গত মঙ্গলবার বিকল হয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালের আইসিইউর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল স্থাপনের মাত্র আড়াই বছরেই।
শেবাচিম হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই হাসপাতালের পূর্বপাশে রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউ চালু করা হয়। শুরুতেই সেখানে ১০টি শয্যা, ১০টি বড় ও ৩টি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন এবং একটি সেন্ট্রাল মনিটর স্থাপন করা হয়। আইসিইউ পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেয়া হয় প্রশিক্ষিত নার্স। কিন্তু শুরু থেকেই এখানে চিকিৎসক সংকট ছিল।
সূত্র আরো জানায়, গত মঙ্গলবার সকালে সচল থাকা একমাত্র ভেন্টিলেটর মেশিনটি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে আইসিইউতে সেবা না পেয়ে ওইদিনই মারা যান ডা. মারুফ হোসেন নয়ন (৩০) নামে এক চিকিৎসক। এ নিয়ে খোদ চিকিৎসকদের মধ্যেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ডা. নয়ন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আইসিইউ ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সেবিকারা বলেন, গত ২ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র দুটি ভেন্টিলেটর মেশিন চালু ছিল। এর কয়েকদিনের মধ্যেই এর একটি বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে অবশিষ্ট ভেন্টিলেটর দিয়ে একজন করে রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হতো। কিন্তু সেটিও গত মঙ্গলবার বিকল হয়ে যায়।
আইসিইউর দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হুদা বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকেই অবশিষ্ট সচল ভেন্টিলেটর মেশিনটি আর কাজ করছে না। ফলে ওইদিন ডা. মারুফ হোসেন নয়নকে আইসিউতে রাখা যায়নি। এতে তার মৃত্যু হয়। তিনি বরিশাল ডায়াবেটিক হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
ডা. নাজমুল হুদা আরো বলেন, ডা. নয়নের অ্যাজমা ছিল। এজন্য তাকে খুব দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটা করা সম্ভব হয়নি। তার আগেই হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়, যা আমাদের জন্য খুব দুঃখজনক। তিনি বলেন, ভেন্টিলেটর বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমানে ভেন্টিলেটরের অভাবে এ হাসপাতালের আইসিইউর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে