সাম্প্রতিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশে দেশে আন্দোলন, বিক্ষোভ, সহিংসতা ও অরাজকতা লেগেই আছে। এসব আন্দোলন প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক কারণে শুরু হচ্ছে, আর পরিণত হচ্ছে রাজনৈতিক আন্দোলনে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখাচ্ছেন এর গহিন গভীরে রয়েছে পুঁজিবাদী মুক্ত অর্থনীতির ব্যর্থতা। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সাময়িক বিপর্যয়ের পর পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় এক ‘লেইসেজ ফেয়ার’ বা অবাধ লুণ্ঠনের অবস্থা বিরাজ করছে। পুঁজিবাদ যখন বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন বিপরীত ধারণা হিসেবে সমাজতন্ত্র জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সভ্যতার ইতিহাস প্রমাণ করে পুঁজিবাদ অবশেষে ‘কল্যাণ অর্থনীতি’ বা কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বা নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা দ্বারা তথাকথিত ‘বিশ্বায়ন’-এর বিস্তৃতি ঘটেছে। পুঁজির প্রভাব তীব্র থেকে তীব্রতরভাবে অনুভূত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের যাপিত জীবন আরো কষ্টদায়ক ও কঠিনতর হয়েছে। শোষণ ও শাসনের মাত্রা বেড়েছে অনেক। আদর্শিক শূন্যতা থাকা সত্ত্বেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আন্দোলন চলছে। বিস্ময়ের ব্যাপার যে পুঁজিবাদী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রগুলো সমঝোতার পরিবর্তে শক্তি প্রয়োগ করছে। সম্ভবত আদর্শিক ও রাষ্ট্রিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের শূন্যতা এর কারণ হতে পারে।
এ মুহূর্তে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে বেশ কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন চলছে। দূর প্রাচ্যের হংকং, মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন, নিকট প্রাচ্যের ইরান ও ইরাকে তীব্রতর আন্দোলন চলছে। আর এরই মধ্যে আন্দোলন আক্রান্ত হয়েছে আল মাগরিব বা দূর আরবের আলজেরিয়া, মিসর ও সুদান। বলতে গেলে গোটা লাতিন আমেরিকায় চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। পেরু, বলিভিয়া, একুয়েডর, পুয়ের্তোরিকো ও চিলি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক আন্দোলনে জর্জরিত। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের হাইতি এ-যাবত্কালের চরম রাজনৈতিক অরাজকতায় আক্রান্ত। এসব দেশের অস্থিরতা ও আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ভাষ্যকার সোনালি কোলহাত্কার বলেছেন, সব ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ কারণ বিরাজমান। অস্থিরতার মূল কারণ হচ্ছে ‘গভীর অর্থনৈতিক অসন্তোষ’। এসব দেশের ধনী বণিক শ্রেণী একক প্রভুত্ব কায়েম করে রেখেছে। সাধারণ মানুষের ওপর চলছে শোষণ ও নিপীড়ন। প্রায় সব রাষ্ট্রে রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদ চেপে বসেছে অথবা বর্তমান ছিল। প্রায় সর্বত্র