দেশে সুতার বৃহত্তম পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে সব ধরনের সুতার দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে এসব সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি ২-৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়লেও বেচাকেনায় বেশ মন্দা ভাব চলছে।
গতকাল টানবাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০
কাউন্টের তানা (মোটা সুতা) এবং সাইজিং (চিকন সুতা) সুতা প্রকারভেদে পাউন্ডপ্রতি ৩৪-৫১ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, এক
মাস আগেও যা বেচাকেনা হয়েছিল ৩২-৫০ টাকা দরে। সে হিসাবে ১০ কাউন্টের সুতার দাম
পাউন্ডপ্রতি ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর ২০ কাউন্টের সুতা প্রকারভেদে প্রতি পাউন্ড
বিক্রি হচ্ছে ২০-৫৫ টাকায়। যেখানে একই মানের সুতা ২০-২২ দিন আগে বিক্রি হয়েছে
১৮-৫৩ টাকা দরে। সে হিসাবে এ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি বেড়েছে ২ টাকা।
এর বাইরে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির ২৪, ২৬, ২৮
ও ৩০ কাউন্টের সুতা প্রতি পাউন্ড ৯৫-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একই সুতা
বাজারে এক মাস আগেও বেচাকেনা হয়েছিল ৯৪-৯৮ টাকায়। কিন্তু বর্তমানে চিকন সুতার
চাহিদা বাড়ায় বাজারে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির সুতার দাম বেড়েছে। যদিও এ বন্ডের সুতা
বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ। এর পরও টানবাজারে
প্রকাশ্যেই বেচাকেনা হচ্ছে এক্সপোর্ট
কোয়ালিটির এসব সুতা।
বাজার ঘুরে আরো দেখা গেছে, ৪০
কাউন্টের সুতা প্রকারভেদে পাউন্ডপ্রতি ১১২-১২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সুতা
বাজারে এক মাস আগেও বেচাকেনা হয়েছিল ১১১-১২৪ টাকা দরে। সে হিসাবে এ কাউন্টের সুতার
দাম পাউন্ডপ্রতি বেড়েছে ১ টাকা। এছাড়া ৫০ কাউন্টের সুতা পাউন্ডপ্রতি ২-৩ টাকা বেশি
দামে ১১৫-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে গেঞ্জিসহ বিভিন্ন উন্নত
মানের কাপড় তৈরিতে ব্যবহূত ৬০ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি ২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে
১২৫-১৪০ টাকায় এবং ৮০ কাউন্টের সুতা ১৮০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
টানবাজারের সুতা ব্যবসায়ী হারুন-অর-রশিদ বণিক
বার্তাকে বলেন, এক মাস ধরে সুতার ব্যবসায় চরম মন্দা নেমে এসেছে। এক্সপোর্ট কোয়ালিটির
গার্মেন্টসে ব্যবহূত সুতা খোলা বাজারে অবাধে বেচাকেনা হওয়ায় দেশীয় স্পিনিং মিলে
তৈরি সুতার ক্রেতা কমেছে। কারণ বন্ডের সুতা গুণগত মানে দেশীয় স্পিনিং মিল থেকে
ভালো হওয়ায় ক্রেতারা সেই সুতার দিকে ঝুঁকছেন।
এ ব্যবসায়ীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে
পাঁচ শতাধিক স্পিনিং মিল গড়ে উঠেছে। কিন্তু ব্যবসায়িক মন্দার কারণে শতাধিক স্পিনিং
মিল তাদের সুতা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। বন্ডের সুতার ব্যাপারে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না
নিলে এ শিল্পে ধস নেমে আসতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে বাজার চাঙ্গা হলেও বেচাকেনায়
মন্দাভাবের কথা উল্লেখ করে আরেক সুতা ব্যবসায়ী শাহ জামাল খোকন জানান, টানাবাজারে
বেশির ভাগ ক্রেতাই বাকিতে সুতা কেনেন। এসব ক্রেতার কাছে এক ট্রাক সুতা বিক্রি করলে
৮-১০ হাজার টাকা লাভ হয়। কিন্তু সেই টাকা তুলে আনতে চার-পাঁচ সপ্তাহ
লেগে যায়। একটি চালান আটকে গেলে সুতা ব্যবসায়ীদের বড় অংকের লোকসান গুনতে হয়।
একই কথা জানালেন আরেক সুতা ব্যবসায়ী
সামসুদ্দিন আহমেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন,
প্রতি বছরই এ মৌসুমে সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি ১-২
টাকা বাড়ে। কিন্তু টানবাজারে আগে সুতার যে রমরমা বাণিজ্য ছিল, তা
অনেকাংশেই ম্লান হয়ে গেছে।
তার মতে, মাধবদী, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুতার মোকাম গড়ে ওঠায় ক্রেতারা টানবাজারে আসেন না। যেসব
ক্রেতা বাকিতে ব্যবসা করেন,
তারাই কেবল টানবাজার থেকে সুতা কেনেন। তিনি মনে
করেন, বিদেশী পণ্যে বাজার সয়লাব এবং তাঁতিরা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় সুতার
চাহিদা কমে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।