চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের যাত্রা

হুমায়ুন কবির

জীবনের অধিকতর স্বস্তির বাসনা থেকে বিবর্তন-পরিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মেই মানবসভ্যতার কৃষি থেকে শিল্প যুগে উত্তরণ ঘটেছে। সেই বিবেচনায় এতদূর অব্দি কালপর্বে মানবসভ্যতায় শিল্প বিপ্লবের চারটি ধারা চলে এসেছে। প্রথম শিল্প বিপ্লবের সময়কাল সতেরো শতকের মাঝামাঝি থেকে আঠারো শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত। আলোচ্য বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল বৃহত্তর ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রে। বিপ্লবে উৎপাদন প্রক্রিয়া হাত থেকে যন্ত্রের ভিত্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে বাষ্প জলশক্তির ব্যবহার, রাসায়নিক পণ্য লোহা উৎপাদন এবং যন্ত্রচালিত কারখানার উন্নয়ন।

দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময়কাল উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত। মূলত এটি ছিল জোরালো শিল্পায়নের পর্যায়। টেলিগ্রাফ রেল নেটওয়ার্কের ধরনে বড় মাত্রায় রূপান্তর, সরকারি উপযোগগুলোর (যেমন গ্যাস, পানি পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা প্রভৃতি) ব্যাপকতর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কারখানার বিদ্যুতায়ন শিল্প বিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এদিকে তৃতীয় বিপ্লবের যাত্রা ঘটেছিল মধ্য বিশ শতক থেকে। আর এটি সূচিত হয়েছিল পারমাণবিক জ্বালানি, ইলেকট্রনিকসভিত্তিক ট্রানজিস্টর, মাইক্রোপ্রসেসর, কম্পিউটার, টেলিযোগাযোগ, জৈবপ্রযুক্তির উত্থান এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মোটামুটি মাত্রায় স্বয়ংক্রিয়তার মধ্য দিয়ে।

এখন চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পর্যায়। বিশ শতকের শেষের দিক থেকে রূপ নেয়া বিপ্লব প্রধানত তৃতীয় শিল্প বিপ্লব দ্রুত বিবর্তনশীল ডিজিটাল উদ্ভাবনের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনোম এডিটিং, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, রোবোটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস থ্রিডি প্রিন্টিং হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

এবার দেখা যাক কোন কোন বিষয়ের দিক থেকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অতীতের তিনটি শিল্প বিপ্লব থেকে ভিন্নতর।  প্রযুক্তির ব্যাপকতর মেলবন্ধন দ্বারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়; যা ভৌত, ডিজিটাল জীবতাত্ত্বিক পরিসরের ভেদরেখা অস্পষ্ট করে তোলে। অর্থাৎ পর্যায়ে উল্লিখিত তিনটি পরিসর এমনভাবে মিশে যায় যে একে অন্যের পারিসরিক বিভাজন ঠাহর করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণভাবে বলা হয়, চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রযুক্তিচালিত নানা পরিবর্তনের বিপুলতা তীব্রতা পুরো উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা পরিচালন ব্যবস্থাকে এমনভাবে রূপান্তর ঘটিয়ে চলছে, যা নজিরবিহীন। কিন্তু একই সঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, এটি খুব একটা নতুন প্রপঞ্চও নয়। অব্যবহিত অতীত সময়ের তুলনায় প্রতিটি শিল্প বিপ্লবই অনেকনজিরবিহীনউদ্ভাবন বিশ্বকে দেখিয়েছে, উপহার দিয়েছে। সেদিক থেকে প্রতিটি শিল্প বিপ্লবই একার্থে কিছুটা নজিরবিহীন। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিশ্লেষণের সময় প্রত্যেকেরই একটু বাড়তি সতর্ক থাকা জরুরি যে বিশ্লেষণগুলোয় এটি যাতে একটিরহস্যময়প্রপঞ্চ হিসেবে আখ্যায়িত না হয়। রহস্যময় প্রপঞ্চ এই অর্থে যে, যাকে তার পরিবর্তনেরনজিরবিহীনগতির কারণে অনেক সময় যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে না। আগের শিল্প বিপ্লবগুলো থেকে চলতি শিল্প বিপ্লবের স্বাতন্ত্র্য বুঝতে আমাদের এটুকুই মনে রাখলে চলবে। স্মর্তব্য, সব শিল্প বিপ্লবের মূলে রয়েছে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যকার সম্পর্কের রাজনৈতিক অর্থনীতি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবও এদিক থেকে ভিন্ন নয়। কাজেই বিপ্লব সম্পর্কে ভালো বোঝাপড়ার জন্য দরকার প্রযুক্তি উন্নয়নের মধ্যকার সম্পর্কের রাজনৈতিক অর্থনীতির অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ।

বলা বাহুল্য, প্রযুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পর্ক সহজ নয়। সবসময়ই সম্পর্ক জটিল হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। অভ্যন্তরীণ ব্যয়সাশ্রয় মাত্রা বা ইকোনমি অব স্কেল কাজে লাগানো এবং দাম মানের পরিপ্রেক্ষিত থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অধিকতর প্রতিযোগী সক্ষম হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় প্রচলিত মুক্তবাজার অর্থনীতির অধীনে নতুন প্রযুক্তির চাহিদা চালিত

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন