একই সংস্থার অধীন হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অন্যান্য শিল্প কারখানার চেয়ে বেশি দামে গ্যাস কিনছে কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম)। এ কারণে সংস্কার কার্যক্রমও প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানের বৃত্ত থেকে বের করতে পারছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস ক্রয়ে গ্রাহক ক্যাটাগরি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজকলটি।
কেপিএমের অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিসিআইসির
অন্য কারখানাগুলো সব সার উৎপাদন করে। ফলে তারা শুধু সার ক্যাটাগরিতে ন্যূনতম
মূল্যে গ্যাস পায়। যদিও এসব কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে জেনারেটরে এ গ্যাস
ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে কেপিএম বয়লার দিয়ে স্টিম জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও
৭০ শতাংশ ক্যাপটিভ পাওয়ার ও ৩০ শতাংশ শিল্প গ্রাহক হিসেবে গ্যাস বিল পরিশোধ করছে।
এতে গ্যাস বাবদ প্রতিষ্ঠানের মোট লোকসানের প্রায় সমপরিমাণ বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে
হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কেপিএম কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ড. এমএমএ
কাদের বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাসের বাড়তি মূল্য পরিশোধের কারণে কেপিএমের উৎপাদন খরচ দেশের
প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি কর্ণফুলী গ্যাস
ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। ক্যাটাগরি পরিবর্তন হলে কেপিএম
লাভের ধারায় ফিরে আসবে বলে আশা
করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪
সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ৭০ শতাংশ ক্যাপটিভ পাওয়ার ও ৩০ শতাংশ শিল্প গ্রাহক হিসেবে
গ্যাস বিল
পরিশোধ করছে কেপিএম। সাধারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন
ও বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্তমানে ঘনমিটারপ্রতি ৪ দশমিক ৪৫ টাকা দরে গ্যাস কিনতে
হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে জেনারেটর ব্যবহার না করেও কেপিএমকে ক্যাপটিভ পাওয়ার
কোম্পানির মতো সর্বোচ্চ ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা দরে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ
নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর একটি ক্যাম্প, কাপ্তাই
উপজেলোর স্থানীয় জনগোষ্ঠী, কেপিএমের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের আবাসিক ভবনেও সরবরাহ করে কেপিএম।
কেপিএম কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান
মূল্য কাঠামোয় ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতের গ্যাসের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
সাধারণ বিদ্যুৎ উৎপাদক ও ক্যাপটিভ পাওয়ার গ্রাহকের গ্যাসের মূল্য পার্থক্য ৯ টাকা
৪০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি টাকারও বেশি গ্যাসের বিল বাবদ
পরিশোধ করায় কেপিএমে সংস্কার কার্যক্রমের পরও লাভের ধারায় ফেরা যাচ্ছে না।
এসব বিষয় উল্লেখ করে গ্যাস ক্রয়ের
গ্রাহক ক্যাটাগরি পরিবর্তন চেয়ে গত ২১ আগস্ট কেজিডিসিএল ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি
দিয়েছে কেপিএম কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে ক্যাপটিভ ও শিল্প গ্রাহকের পরিবর্তে বিদ্যুৎ (পিডিবি/আইপিপি) অথবা
বিসিআইসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সার গ্রাহক ক্যাটাগরিতে কেপিএমকে অন্তর্ভুক্ত
করার দাবি জানানো হয়েছে।
তবে গ্রাহকের ক্যাটাগরি পরিবর্তনের
ক্ষমতা তাদের হাতে নেই বলে জানিয়েছেন কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং
সার্ভিসেস ডিভিশন) মো. সারওয়ার হোসেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কিংবা
মন্ত্রণালয় যদি চায়, তাহলে কেপিএমের ক্যাটাগরি পরিবর্তনে কেজিডিসিএলের কোনো আপত্তি থাকবে
না।
প্রসঙ্গত, বিল
বকেয়ার কারণে ৩ আগস্ট থেকে কেপিএমের উৎপাদন প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল। প্রায় ৮০ কোটি
টাকার গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল কেজিডিসিএল। পরে প্রায় ৫ কোটি
টাকা দিয়ে সংযোগ ফিরে পায় কেপিএম।
কেপিএমের উৎপাদন বিভাগ সূত্রে জানা
গেছে, কেপিএম প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৮০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। গত অর্থবছর কাগজ উৎপাদন হয়েছে ছয় হাজার টন। চলতি
অর্থবছর উৎপাদন ১০ হাজার টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও ২০০৫-০৬ অর্থবছরে
প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ছিল ২৫ হাজার ৭০৪ টন।