খসড়া নির্মল বায়ু আইন, ২০১৯ বিষয়ক সংলাপ

দূষণের জন্য মামলার চেয়ে জরিমানায় গুরুত্ব দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতিনির্মল বায়ু আইন, ২০১৯’-এর খসড়া সাধারণ জনগণের মতামতের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া আইনটির ওপর সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত গ্রহণের জন্য গতকাল সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাফর আলম, বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন। সভায় অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহম্মদ ও অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরউল আলম।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বন অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরে চাহিদা যাচাইপূর্বক একটি কার্যকর অর্গানোগ্রাম দাঁড় করাতে হবে। একই সঙ্গে আইনে ব্যবহূত ভাষাকে আরো সুস্পষ্ট করে দিতে হবে। এ আইনটিকে আমরা একটি ফ্ল্যাগশিপ আইন হিসেবে আনতে চাই। আমাদের দেশে অনেকে ভালো ভালো আইন হয়, কিন্তু এ আইনগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানে না। যার একটি উদাহরণ হলো তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯। নির্মল বায়ু আইন, ২০১৯-কে আমরা এমনভাবে নিয়ে আসতে চাই, যাতে মানুষ এ আইনটি সম্পর্কে জানতে পারে।

খসড়া আইনটি নিয়ে পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এ আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য হলো নাগরিকের জীবন ও বিশুদ্ধ বায়ু সেবনের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান। এ আইনের প্রয়োগ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কতামূলক, টেকসই উন্নয়ন এবং দূষণকারী কর্তৃক ব্যয়ভার বহন সংক্রান্ত নীতিগুলো অনুসরণ করতে হবে।

বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, নতুন খসড়া এ আইনে আগে প্রস্তুতকৃত খসড়া থেকে যা যা বাদ পড়েছে সেগুলো হলো সংজ্ঞার ক্ষেত্রে-বিষাক্ত বায়ু উপাদান, অনুমোদিত জ্বালানি, নিয়ন্ত্রিত নিঃসরক, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য, শিল্প-কারখানা, -অর্জিত এলাকা বা অঞ্চল, -অর্জিত এলাকার বা অঞ্চলের বায়ুমান উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা, দুর্গন্ধ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। গুরুত্বপূর্ণ যেসব ধারা বাদ দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো নিয়ন্ত্রিত নিঃসরকের ঘোষণা ও ব্যবস্থাপনা, উপদেষ্টা পরিষদ গঠন, উপদেষ্টা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি, উপদেষ্টা পরিষদের সভা, অধিদপ্তরের ভূমিকা, জাতীয় বায়ুমান প্রতিবেদন, জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, জনমত এবং জনগণের অংশগ্রহণ, সরকারি সংস্থা কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ। অসম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বায়ুদূষণ বিষয়ে গবেষণা, শিক্ষা ও প্রচারণা এবং বায়ুমান উন্নয়ন তহবিল।

বিসিকের উপসচিব নোপাল চন্দ্র কর্মকার বলেন, বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দূষণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে চিহ্নিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় কিনা, সেটি বিবেচনা করা যেতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলে অধিদপ্তরের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর হবে। তিনি বলেন, আইনটিতে সুনির্দিষ্ট করতে হবে যে বায়ুমানের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কে হবে এবং কে কোন দায়িত্ব পালন করবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্ল্যানিং) মো. সোলায়মান হায়দার বলেন, আইনে জনমত গ্রহণের জন্য একটি কাঠামো নির্দিষ্ট করতে হবে, তা না হলে জনমত গ্রহণ করা হলেও সেটিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে না।

সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক হাফিজুল ইসলাম খান বলেন, আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোয় বাংলাদেশ সরকারের করা অঙ্গীকারগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্মল বায়ু আইনের প্রাথমিক খসড়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়বদ্ধ করার বিষয়টি থাকলেও পরবর্তী সময়ে খসড়া আইনে সেটিকে বাদ দেয়া হয়েছে।

টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাকির হোসাইন খান বলেন, এ আইনে মামলার চাইতে দূষণের জন্য জরিমানা আদায়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত। তিনি বলেন, আইনে দূষণ কর সহজে আরোপ ও আদায়ের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।

নির্মল বায়ু আইনে বিদ্যমান বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আলোচকদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহম্মদ বলেন, এ আইনে কেবল সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিস্তারিত বিষয়গুলো আইন প্রণয়নের পর বিধিমালায় সুনির্দিষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরউল আলম বলেন, পরিবেশের সুরক্ষা প্রদান সরকারের মূল লক্ষ্য আর এটিকে সামনে রেখে নির্মল বায়ু আইনকে যতটুকু শক্তিশালী করা সম্ভব, আমরা সেটি করব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন