ফিরতে হলো স্টক কাংরি বেজ ক্যাম্প থেকেই

উঠতেই আকাশ তার রূপ বদলে এক ফালি রোদ ঝলমলে স্বাগতম জানাল! সাদা পাহাড়ের ওপর রোদ পড়ার দৃশ্যটা দু-চারটা বই লিখেও বোঝানো সম্ভব না। উঠে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুপুরের খাবারের ডাক পড়ল। স্যুপ আর নুডলস খেলাম পেটপুরে। ঠাণ্ডায় সবাই জমে গিয়েছিলাম। তাই স্যুপটা খুবই আদর্শ হিসেবে কাজ করল। খেয়ে খানিক আড্ডা দিয়ে সবাই তাঁবুর দিকে গেলাম।

ক্যাম্প পুরোটাই বরফে ঢাকা। সেখান থেকে বরফ সরিয়ে তাঁবু ফেলা হয়েছে। তাই তাঁবুর ভেতর বাইরে সমানতালেই ঠাণ্ডা। তাঁবুর ভেতর ব্যাগ রেখে চারপাশ একটু হেঁটে এলাম পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য। তাঁবুতে ঢুকে দেখলাম ভেতরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, সেই সঙ্গে স্লিপিং ব্যাগটাও ভেজা। মানকারমা থেকে আসতে আসতে বৃষ্টি আর তুষারপাতের কবলে পড়ে অবস্থা। নিজের একটি স্লিপিং ব্যাগ সঙ্গে রাখার প্রয়োজন বেশ অনুভব করলাম। অগত্যা নিরুপায় হয়ে ভেজা স্লিপিং ব্যাগের ভেতরেই ঘুমাতে হলো। একে তো ক্লান্তি, তার ওপর অত্যধিক ঠাণ্ডা, তাতে আবার ভেজা স্লিপিং ব্যাগ-ম্যাট। সব মিলিয়ে আল্টিটুড সিকনেস পেয়ে বসল আমাকে। একটু ঘুমিয়েছিলাম, প্রচণ্ড মাথাব্যথা আর জ্বর নিয়ে ঘুম ভাঙল। স্প্রিংয়ের মতো কাঁপতে থাকলাম। সৈকতও বেশ ভয় পেয়ে অন্যদের ডাকল। রানা ভাই একটা ওষুধ দিয়ে গেল যেটা মাথায় আর কপালে মেখে ভেবেছিলাম কিছুটা কমে যাবে, কিন্তু হলো না। ক্রমেই বাড়তে লাগল অসহ্য যন্ত্রণা।

সন্ধ্যায় খাবারের ডাক এল। কিন্তু আমার শরীরে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। টিমমেটদের সহায়তায় খাবারের তাঁবুতে গেলাম এজন্য যে একটু হাঁটলে ভালো লাগবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। শুধুই স্যুপ খেলাম, খেয়েই আবার তাঁবুতে ঢুকলাম। স্লিপিং ব্যাগ কারোটা পরিবর্তন করব, এমন সুযোগ বা ইচ্ছেও হচ্ছিল না। কারণ কম-বেশি সবই ভেজা আবার কারোটা শুকনো থেকে থাকলে পরিবর্তনের ফলে তারও শরীরের অবস্থা এমনই হতে পারে। রাতটা আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের রাত গেল। অসহ্য যন্ত্রণায় সারা রাত কাঁপলাম, কাতরালাম আর সৃষ্টিকর্তার নাম জপলাম। কোনোভাবেই ঘুম এল না, এভাবেই সকাল হলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হলাম। দেখলাম শরীর কাঁপে। বুঝলাম সামনে এগোনো আর উচিত হবে না। সুস্থ থাকলে হয়তো আবার আসা যাবে। তবে শরীরকে ঝুঁকিতে ফেলতে চাইলাম না। তবে মনও মানছিল না। এতদূর এসে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছিলাম, তবে সেটা অনিচ্ছায়। সবার সঙ্গে কথা বললাম আল্টিটুড সিকনেস নিয়ে পাঁচ হাজার মিটারে থাকাটা কেবল নিজেকে কষ্ট দেয়া, তাই নেমে যাব। সবাই সেটাই সাজেশন দিলেন। তবে টিম লিডার হয়ে নেমে যেতে হচ্ছে, টিমটার চিন্তা হলো বেশ। রানা ভাইকে টিমের দায়িত্ব দিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নামা শুরু করলাম। এখন রাস্তা চেনা, তরতর করে নামতে লাগলাম। নামার সময় আবার তুষারপাত আর বৃষ্টি। মাথাব্যথা আবার বাড়ল কিছুটা। তাই আমিও দ্রুত হাঁটা দিলাম। যেভাবেই হোক পৌঁছাতে হবে স্টক ভিলেজ, না হয় মাঝে অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হবে।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন