দয়ারামপুর রাজবাড়ি

আহসান হাবিব

বাংলার রাজা-জমিদারদের মধ্যে দিঘাপতিয়া রাজবংশ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। দয়ারাম রায় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তার জন্মবৃত্তান্ত আজও রহস্যাবৃত। কারো মতে, দয়ারাম রায় কলম গ্রামের এক তিলি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রামজীবন যখন পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণ ঠাকুরের অধীনে সাধারণ একজন কর্মচারী তখন দয়ারাম তার মাসিক আনা বেতনে চাকরি করতেন। পরে সামান্য লেখাপড়া করে জমা খরচ রাখার মতো যোগ্যতা অর্জন করেন এবং রামজীবন তাকে মাসিক আনার পরিবর্তে টাকা বেতনের মুহুরী নিযুক্ত করেন। পরবর্তী সময়ে পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের স্নেহ, ভালোবাসা সহানুভূতি, নবাব সরকারের ভ্রাতা রঘুনন্দনের প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং বাংলার নবাব দেওয়ান মুর্শিদকুলী খানের নেকনজর সবকিছু মিলিয়ে যখন রামজীবন জমিদারি লাভ করেন তখন তারও ভাগ্য খুলতে থাকে। অনেকের মতে, রামজীবন জলবিহারোপলক্ষে চলনবিলের মধ্য দিয়ে কলম গ্রামে পৌঁছেন। সে সময় দুজন বালক রাজার নৌকার সামনে উপস্থিত হয়। দুটি বালকের একজনের কথাবার্তা বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে তিনি তাকে নাটোরে নিয়ে আসেন। বালকটিই দয়ারাম রায়।

দয়ারাম রায় সিংড়া থানার কলম গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কলমের নরসিংহ রায়ের সন্তান তিনি। অনুমান ১৬৮০ সালে তার জন্ম। প্রথমে রাজা রামজীবনের একজন সাধারণ কর্মচারী এবং প্রতিভাবলে নাটোর রাজের দেওয়ান পর্যন্ত হয়েছিলেন। রামজীবন তাকে অত্যন্ত বিশ্বাস করতেন এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদ তার কাছে গচ্ছিত রাখতেন। রাজা সীতারাম রায়ের পতনের পর দয়ারাম নাটোর রাজ্যের একজন পরাক্রমশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। যশোরের রাজা সীতারাম রায় বিদ্রোহী হলে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ নাটোর রাজের দেওয়ান দয়ারাম রায়ের সাহায্যেই তাকে দমন পরাজিত করে নাটোর কারাগারে বন্দি করেন। সীতারাম রায়কে পরাজিত করায় নবাব সরকারের প্রভাব বেড়ে যায় এবং দয়ারাম রায় রাই রাইখাখেতাবে ভূষিত হন। সীতারাম রায়কে পরাজিত করে তিনি তার মূল্যবান সম্পদ লুণ্ঠন করেন, কিন্তু গৃহদেবতা কৃষ্ণজীর মূর্তি ছাড়া সব রামজীবনের হাতে তুলে দেন। দয়ারামের এহেন ব্যবহারে তিনি খুশি হয়ে কৃষ্ণজীর মূর্তি স্থাপনের জন্য দিঘাপতিয়ায় একখণ্ড জমি কয়েকটি পরগনা দান করেন। নিঃসন্তান রামজীবন দেওয়ান দয়ারামের পরামর্শেই রামকান্তকে দত্তক গ্রহণ করেন এবং পুত্র রামকান্ত ভ্রাতুষ্পুত্র দেবী প্রসাদের মধ্যে জমিদারি ভাগ করে দিতে চান। কিন্তু দেবী প্রসাদের একগুঁয়েমি মনোভাবের জন্য সমগ্র জমিদারি রামকান্তের নামে উইল করে দেন। রামকান্তের বিবাহের সময় তিনিই ছিলেন সর্বময় কর্তা। কন্যা পছন্দ, দিন-তারিখ নির্ধারণ, যৌতুক আদায়, আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ সবকিছুর ভারই অর্পিত ছিল দেওয়ান দয়ারামের ওপর। রামজীবন মৃত্যুকালে দয়ারাম রায়কেই পুত্রের একমাত্র অভিভাবক নিযুক্ত করে যান।

রামকান্ত বালকমাত্র, তাই রাজশাহীর মতো ব্যাপক বিস্তৃত জমিদারি পরিচালনা করা তার পক্ষে অসম্ভব। এজন্য প্রকৃত কর্তৃত্ব ছিল দয়ারাম রায়ের ওপর। তার সুদক্ষ নিপুণ পরিচালনায় জমিদারির মর্যাদা উত্তরোত্তর

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন