শিল্পে ব্যবহৃত বয়লার পরিদর্শন ও এর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়ের। আর শিল্পের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই)। এ প্রেক্ষাপটে বয়লার নিরাপত্তা পরিদর্শনের কর্তৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে শ্রম মন্ত্রণালয়।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আইন অনুযায়ী বয়লার পরিদর্শন, রেজিস্ট্রেশন ও বয়লার পরিচারকদের পরীক্ষা গ্রহণ করে সনদ প্রদানের কাজটি করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়। অন্যদিকে শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব শ্রম মন্ত্রণালয়ের। ফলে শিল্পে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রায়ই সমন্বয়হীনতার সমস্যায় পড়তে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বয়লার নিরাপত্তা পরিদর্শনের এখতিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়ের ডিআইএফইকে দেয়ার উদ্যোগ চলছে।
সূত্র জানিয়েছে, ডিআইএফইর মাধ্যমে বয়লার নজরদারি করার বিষয়ে আলোচনা করতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রুলস অব বিজনেস পরিবর্তনের মাধ্যমে বয়লার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বয়লার দুর্ঘটনার কারণে অনেক মানুষ হতাহত হয়। কল-কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্য সব যন্ত্রপাতির সঙ্গে বয়লার নিরাপত্তা বিধানও জরুরি। কিন্তু ডিআইএফইর পরিদর্শকদের বয়লার পরিদর্শনের এখতিয়ার নেই। এ প্রেক্ষাপটেই বয়লারের দায়িত্ব নিজেদের আওতায় নিতে চাইছে শ্রম মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বলা হয়, কারখানার দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ডিআইএফইর ওপর দায় বর্তায়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে প্রয়োজনে রুলস অব বিজনেস পরিবর্তনের মাধ্যমে বয়লার পরিদর্শনের বিষয়টি ডিআইএফইর আওতায় আনা প্রয়োজন।
সূত্র জানিয়েছে, সভায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়ের প্রতিনিধি জানান, বয়লার পরিদর্শনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধির কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া গত ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভিন্ন এক সভায় বয়লার সেফটি গাইডলাইন প্রকাশ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে প্রধান বয়লার পরিদর্শনের কার্যালয়ের হিসাব বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বয়লার বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ৬৫ জন। সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি নামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার করা ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, উল্লেখিত সাত বছরে বয়লার বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ জন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মারা গেছেন ৪৩ জন। এ হিসাবে ১০ বছরে বয়লার বিস্ফোরণে প্রাণহানি হয়েছে ১০৩।
মূলত পরিচালন অদক্ষতার কারণেই শিল্প-কারখানাগুলোয় বয়লার দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের কর্মক্ষেত্র ও শ্রম পরিস্থিতি মূল্যায়নে এবার বয়লারে নজর দিয়েছে ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা ও শ্রম অধিকার সংস্থার জোট অ্যাকর্ড অন বিল্ডিং অ্যান্ড ফায়ার সেফটি (অ্যাকর্ড)। ক্রেতা জোটটি চলমান পরিদর্শন কর্মসূচির আওতায় বয়লারও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এ প্রেক্ষাপটে বয়লার নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। এছাড়া বয়লার-সংক্রান্ত ডিআইএফই পরিদর্শকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকেও বয়লার নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেদের আওতায় আনার বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের বিষয়টি জানা গেছে।