দেশের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা চরম
পর্যায়ে রয়েছে। অতিগুরুত্বপূর্ণ এ খাতের কোনো নির্দিষ্ট অংশের সংস্কার কোনো কাজে আসবে
না, করতে হবে পরিপূর্ণ সংস্কার। অন্তবর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করলেও স্বাস্থ্য খাতের
সংস্কারে কোনো কমিশন করেনি। ফলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ বাস্তবায়ন না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার বিষয়ে এক আলোচনায় বিষয়টি উঠে এসেছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য খাতের
সংস্কার: নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এআরএইচবি)। আলোচনায়
দেশের স্বাস্থ্য খাত বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্যবিদ, রোগতত্ত্ববিদ, সাংবাদিক, গবেষক, একাডেমিশিয়ান
ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা মতামত দেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক
ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আছি যেখানে আমাদের পরিবর্তন
ও সংস্কারের সুযোগ রয়েছে। ছাত্র-জনতার মহান আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
আমরা অনেক বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারিনি। তবে আমরা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। চিকিৎসায়
রোগীদের নিজস্ব ব্যয়ের (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার বা পেমেন্ট) কারণে জনগণ আর্থিকভাবে
বিপর্যস্ত হচ্ছে। রোগীদের জন্য নিজ পকেটের খরচ বাদ দেয়া আমাদের প্রধান এজেন্ডা।’
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শক্তিশালী করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘প্রাথমিক
স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নগর অঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা
সুবিধা নেই।’ পর্যায়ক্রমে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে মনোযোগী
হতে হবে, এ খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের
(বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক
ডা. রশিদ-ই-মাহবুব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড.
সৈয়দ আবদুল হামিদ স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের জন্য তিন স্তরে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
যার মধ্যে স্বল্পমেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলা হয়। তিনি প্রস্তাব
করেন, বিচার ব্যবস্থার মতো স্বাস্থ্যসেবা কমিশন গঠন করতে হবে। চিকিৎসা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা,
স্বাস্থ্য প্রশাসনের পৃথক শাখা (স্ট্রিমিং) প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. এ এম জাকির হোসেন
বলেন, ‘কেন স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের প্রয়োজন? কারণ স্বাস্থ্যসেবা জনগণকে সন্তুষ্ট
করছে না। সারা দেশে ১৮ হাজার প্যারামেডিক রয়েছে। কিন্তু আমাদের পাঁচগুণ বেশি দরকার।’ দেশে চিকিৎসা
সেবা রেফারেল ব্যবস্থাপনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল
সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) চিকিৎসক ডা. ফাতেমা আশরাফ।
বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহবায়ক ড. আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে
সভায় বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি)
জ্যেষ্ঠ পরিচালক ডা. শামস এল আরিফীন, বাংলাদেশের পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি
অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল।