বিএনপির সমাবেশে তারেক রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘মনে রাখতে হবে, এ সরকারের ব্যর্থতা মানে আমাদের সবার ব্যর্থতা। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরা যেন নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়, সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে দেশ নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে। সুতরাং আসুন, আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস-ভালোবাসা অর্জন করি। জনগণের সঙ্গে থাকি। জনগণকে সঙ্গে রাখি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার হাতবদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি। তাই আমার আহ্বান হলো কোনো প্রলোভন কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজে নেতৃত্বদানের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখুন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন দেশ গড়ার পথে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে হয়তো আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে; আরো কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে সেই পথ সন্ত্রাস-সংঘর্ষ-প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসার নয়; সেটা হবে ধৈর্য-সহনশীলতা ও সমঝোতার পথ।’ 

গতকাল বেলা আড়াইটার পর পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টনে জড়ো হন। এক পর্যায়ে সমাবেশ নয়াপল্টন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড়, নাইটিঙ্গেল হয়ে বিজয়নগর, ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। দুপুরের আগেই বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকার বেশির ভাগ সড়কে যান চলাচল।

তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো দেশেই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং রাখবে। তবে কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই এ সরকারের সকল সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হওয়াটা জরুরি। এজন্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া দরকার। কারণ জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া এবং সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই ও কার্যকর হয় না।’

তিনি বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। সে লক্ষ্যে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে গণ-অভুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারীরা নানা সুযোগ নিতে পারে। এর কিছু আলামত এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’ 

তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা শহীদি মৃত্যুবরণ করেছেন, যারা আহত হয়েছেন, হাত-পা-চোখ হারিয়েছেন কিংবা চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজীবন তাদের এ আত্মত্যাগ ও অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। হতাহতদের প্রতিটি পরিবারের প্রতি অবশ্যই রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি শাসন কিংবা প্রশাসন হওয়ার কথা ছিল “‍গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’’।’ অথচ গত ১৫ বছর বাংলাদেশে মাফিয়া শাসন চালু ছিল। দেশ-বিদেশে পলাতক স্বৈরাচার বিনাভোটের সরকারের পরিচয় হয়ে উঠেছিল “‍গভর্নমেন্ট অব দ্য মাফিয়া, বাই দ্য মাফিয়া, ফর দ্য মাফিয়া।” এ মাফিয়া চক্র দেশকে সর্বক্ষেত্রে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। গত দেড় দশকে তারা দেশ থেকে ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার করে দিয়েছে।’ 

গতকালের সমাবেশটি হওয়ার কথা ছিল ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুদিন পিছিয়ে দেয়া হয়। সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ফ্যাসিজমের অনেক প্রেতাত্মা অবস্থান করছে। তারা এখনো ছাত্র-জনতার বিজয়কে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। শুধু ’৫২ ও ’৭১ নয়, গণতন্ত্র যেন সাসটেইনেবল হয় সেজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ পেয়েছি, সেটি যেন হেলায় ফেলে না দিই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ স্বৈরাচার ও লুটেরামুক্ত হয়েছে, কিন্তু জনগণের অধিকারের এখনো ফয়সালা হয়নি। সেই অধিকারের প্রধান হচ্ছে জনগণের ভোটের অধিকার। সে অধিকার আমরা ফিরে পেতে চাই।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবীব উন নবী খান ও শহীদউদ্দীন চৌধুরী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন