পলিসি ডায়ালগে বক্তারা

নির্দলীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

দেশে বিগত ১২টি নির্বাচনের আটটিই হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। যার সবক’টিতেই ক্ষমতায় থাকা দল বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া চারটি নির্বাচনের চিত্র ছিল ভিন্ন এবং সেগুলো অগ্রহণযোগ্য ছিল না। শতভাগ সুষ্ঠু না হলেও খুব একটা আপত্তি ওঠেনি। তাছাড়া সরকার ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের বাস্তবতার নিরিখে নির্দলীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। 

গতকাল রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ’ শীর্ষক এক পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে এ পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বস্ত্র ও পাট এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়ার বিধানটি সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির মুখ্য পরিচালক ডা. মো আবদুল আলিম নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকে সেটিও দেখতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এস সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্দলীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী করা হোক না কেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রয়োজন। নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশন দিয়েই হয় না। দেশে চারটি নির্বাচন ভালো হয়েছে। কারণ সেগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয়েছে। আপনি তত্ত্বাবধায়ক করেন, অন্তর্বর্তীকালীন করেন আর যে-ই ফরমেটেই করেন, এটা রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্ধারণ করতে হবে, তারা এ সুযোগটুকু দেবে কি দেবে না। আমার অভিজ্ঞতা পাঁচ বছরের, আরো পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা গবেষণার। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো সুযোগ তৈরি না করলে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যদি সরকার থাকে, তাহলে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার থাকলে আমাদের অভ্যাস হচ্ছে সরকারনির্ভর হয়ে যাওয়া। সে হিসেবে যদি ভালো নির্বাচন করতে হয় তাহলে আমার মনে হয় একটা নির্দলীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদের আইনে অনেক সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। তারা যেটি বলেন যে নির্বাচন করাই তাদের দায়িত্ব। আমি তো মনে করি তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। কারণ সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো হচ্ছে গণতন্ত্র। যে নির্বাচন গণতন্ত্রকে ব্যাহত করে, সেই নির্বাচন সংবিধানসম্মত নয়। তারা এই নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।’

নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটি প্রস্তাব করেছি ছয়-সাতজনের একটি অনুসন্ধান কমিটি হবে। প্রধানমন্ত্রী একজন, বিরোধী দলের নেতা/নেত্রীর একজন প্রতিনিধি থাকবেন এবং সংসদের যারা তৃতীয় বৃহত্তম দল তাদের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। একই সঙ্গে একজন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, একজন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি থাকবেন। আগের যারা থাকবেন তারাই নির্ধারণ করবেন কারা থাকবেন। সরকার নির্ধারণ করবে না। যাতে সব মতের চিন্তার প্রতিফলন ঘটে।’

বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশন ও ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শেষে দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দেন ডা. মো আবদুল আলিম। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন