চিকিৎসক থেকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেকশিয়ান

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি: রয়টার্স

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন দেশটির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং হার্ট সার্জন মাসুদ পেজেশকিয়ান। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৫ জুলাই) দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয় শনিবার (৬ জুলাই)।

দ্বিতীয় দফার ভোটে কট্টরপন্থি সাঈদ জালিলিকে পরাজিত করে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। নব নির্বাচিত এ প্রেসিডেন্ট স্বল্পপরিচিত মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ।

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার কারণে নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ইরানে।সেই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন পেজেশকিয়ান। অনেকেই বলছেন, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে পেজেশকিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গির বেশ পার্থক্য রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নীতিগত অবস্থানে ভিন্নতা থাকলেও ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টকে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশ স্বাগত জানাবে কি না এমন প্রশ্নও রয়েছে। তবে পেজেশকিয়ান নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় এরই মধ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ভারত, চীন ও রাশিয়ার নেতারা।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরগুলোতে বলা হচ্ছে, পেজেশকিয়ানকে ভোট দেয়া অধিকাংশ মানুষই শহুরে মধ্যবিত্ত এবং তরুণ বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার ভোট গণনা করার পরই পেজেশকিয়ানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী জালিলি পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট।

১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আজারবাইজান প্রদেশের মাহাবাদ শহরে জন্ম নেন পেজেশকিয়ান। স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে এবং প্রথম ডিপ্লোমা অর্জনের পর তিনি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাবুল শহরে সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেছেন।এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে দ্বিতীয় ডিপ্লোমা করবেন। ১৯৭৬ সালে তিনি তাবরিজ মেডিকেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তার ডাক্তারি লেখাপড়া এবং জেনারেল সার্জারির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রী অর্জন করেন।

১৯৯৩ সালে মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে কার্ডিয়াক সার্জারিতে একটি সাব-স্পেশালিটি লাভ করেন এবং পরে হার্ট সার্জারিতে বিশেষজ্ঞ হন। তিনি পাঁচ বছর তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সের প্রধানও ছিলেন।

পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামির প্রশাসনে পেজেশকিয়ান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।ইরানের জাতীয় সংসদে তিনি কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন ২০০৮ সালে।

দশম জাতীয় সংসদে তিনি উপ স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং চলতি বছরের প্রথম দিকে যে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে তিনি আবারো তাবরিজের প্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হন। এর আগেও তিনি দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। 

২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়েও মরহুম আলী আকবর হাশেমি রাফসানজানির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনী দৌড় থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। ২০২১ সালেও তিনি নির্বাচন করার জন্য নাম রেজিস্ট্রার্ড করেন কিন্তু অভিভাবক পরিষদ তাকে অনুমোদন দেয়নি।

চলতি বছর মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে শামিল হন। নির্বাচনে তিনি ন্যায়বিচার, ঐক্য এবং সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে স্বল্পপরিচিত মধ্যপন্থি একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি। ২০২২ সালে ইরানে পোশাক বিধি লঙ্ঘন করায় নৈতিক পুলিশের নির্যাতনে মাশা আমিনি নামের এক তরুণীর মৃত্যুর পরই ওই ঘটনার সমালোচনা করে আলোচনায় এসেছিলেন পেজেশকিয়ান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন