![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_389797_1.jpg?t=1720265493)
চালের
বস্তার গায়ে ধানের জাত লিখতে হবে। এজন্য ধানের জাত চিনতে কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকল মালিকরা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। খাজানগর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদন কেন্দ্র।
রোববার জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তার দপ্তরে চিঠিটি দিয়েছে কুষ্টিয়ার অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই চিঠিকে চালকল মালিকদের কারসাজি বলে উল্লেখ করেছেন কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর ফারুক চিঠিতে উল্লেখ করেন, চালের বস্তার গায়ে ধানের জাত লিখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তারা। এজন্য সরকারের তালিকাভুক্ত ধানের জাতের নাম ও নমুনা সরবরাহের দাবি তার।
সরকার কৃষি গবেষকদের বরাত দিয়ে বারবার বলছে, মিনিকেট বলে কোনো ধান নেই। কিন্তু মিল মালিক নেতার দাবি, তারা এ নামে ধান ক্রয় করছেন কৃষকের কাছ থেকে। তাই এই ধানের ক্ষেত্রে বস্তায় কীলেখা হবে, তা জানার জন্য এ চিঠি দেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানান, মিনিকেট নামে আসলে কোনো ধান নেই। কিন্তু অন্যায়ভাবে অন্য জাতের ধান থেকে মিনিকেট নামে চাল বাজারজাত করে লাভবান হন মিল মালিকরা। এটাকে ন্যায়সংগত আবরণ দিতে এসব চিঠি দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, চিঠিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার অনুমোদিত জাতের ধান ছাড়া অন্য নামে চাল বাজারজাত করার সুযোগ নেই এবং করতে দেয়া হবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের ধান গবেষকরা বারবার বলে আসছেন, মিনিকেট বলে কোনো ধান নেই। এটা চালকল মালিকদের আবিষ্কার!’
কুষ্টিয়ার খাজানগরে ৫০টির বেশি অটোরাইস মিলসহ প্রায় ২৫০টি চালকল রয়েছে। দেশে চালের চাহিদার বড় অংশ সরবরাহ করা হয় এখান থেকে। বেশির ভাগ ‘মিনিকেট’ নামের চাল বাজারজাতও করা হয় এখান থেকে।
অন্যদিকে কৃষকও বারবার বলছেন, তারা মিনিকেট নামে কোনো ধান উৎপাদন করেন না। যে ধান তারা উৎপাদন করেন, সেখানে ধানের জাতের নাম উল্লেখ করেই বিক্রি করেন। এছাড়া কৃষি বিভাগও ধানের জাত উল্লেখ করেই বীজ বিতরণ ও প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎপাদিত ধানের জাত উল্লেখ থাকে।
চালকল মালিকরা এসব ধানকে যন্ত্রে কেটে মিনিকেট বলে বিক্রি করে থাকেন। এভাবে মিনিকেট নামে এখন চালের একটি ব্র্যান্ডও তৈরি হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে চালকল মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো চালের দাম ওঠানামা করিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চালের বাজারের এই অরাজকতা ঠেকাতে সরকার পরিপত্র জারি করে যে, চালের বস্তার গায়ে ধানের জাতের নাম ও চালের দাম লিখে দিতে হবে। আড়াই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ মিল মালিক বস্তার গায়ে এসব তথ্য লিখছেন না। একই সঙ্গে কুষ্টিয়ার চালকল মালিকরা দিনের পর দিন মিনিকেট নামে চাল বাজারজাত অব্যাহত রেখেছে।
কুষ্টিয়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখন ধানের জাত উল্লেখ করে চাল বিক্রি করলে মিলারদের মিনিকেটের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা নতুন করে এ ধরনের চিঠি দিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে চায়। তিনি বলেন, ‘চালকল মালিকরা আরো কালক্ষেপণ করতে এ পথ বেছে নিয়েছে।’