প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থকে বৈধতা দেয়ার সুযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটা প্রশ্ন আসছে, কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা নিয়ে আমি শুনি, অনেকে বলে কালো টাকা! তাহলে তো আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা না, জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার, সেও কোটিপতি। কিস্তু সরকারি যে হিসাব, সে হিসাবে কেউ বেচে না, বেশি দামে বেচে। অতিরিক্ত টাকাটা তারা গুঁজে রাখে। গুঁজে না রেখে সামান্য একটা কিছু দিয়ে সেই টাকাটা আসল পথে আসুক, জায়গামতো আসুক। তারপর তো ট্যাক্স দিতেই হবে।’
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গতকাল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ সভা আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়, দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এটা আসলে আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু করেছিল, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করে। সেই সুযোগটা আমরাও দিয়েছি, অল্প ট্যাক্স দিয়ে সেই টাকাটা তোমরা ব্যাংকে নিয়ে আসো, সেই ব্যবস্থাটাই হয়েছে। এটা নিয়ে নানা জনের নানা কথা। কিন্তু তার পরও যেগুলো মানুষের প্রয়োজন সেই ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি।’
আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিশেষ করে খাদ্যমূল্য। পাশাপাশি উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপাদনমুখী হলে কোনো দিন খাদ্যের অভাব হবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাজেট দিয়েছি, বিএনপির আমলে সবশেষ বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার। সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেছি। এ বাজেটে এবার কতগুলো চাহিদা যেমন— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, দেশীয় শিল্প, সামাজিক নিরাপত্তায় প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কভিড-১৯ মহামারী দেখা দিল। এ মহামারীর ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এরপর এল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে, আমাদের রিজার্ভ কত আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার আমার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা পানির মতো টাকা খরচ করেছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যা কোনো উন্নত দেশ করেনি; আমরা বিনা পয়সায় কভিডের টিকা দিয়েছি। সেটা দিয়েছে কেন? মানুষ বাঁচাতে।’
মানুষের চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকেই এ বাজেট দেয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে বসে বসে হিসাব কষে, আগে এত পার্সেন্ট বেড়েছে, এবার কম পার্সেন্ট বাড়ল কেন? এখন সীমিতভাবে খুব সংরক্ষিতভাবেই আমরা এগোতে চাই। মানুষের যে চাহিদা, সেটা যেন পূরণ করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পারিবারিক কার্ড আমরা দিচ্ছি, কারণ এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। সব থেকে অবাক কাণ্ড আমাদের উৎপাদন বেড়েছে, চাল উৎপাদনই আমরা চার গুণ বাড়িয়েছি। প্রত্যেকটা জিনিস আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে, মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কম পক্ষে দুবেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ।’