মুজিবনগর দিবসে আলোচনা সভা

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I মেহেরপুর

ছবি : বণিক বার্তা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেছেন, ‘একাত্তরের ১৭ এপ্রিল প্রথম সরকারের শপথের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। মুজিবনগর দিবস ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দিবসটি পালনে দেশব্যাপী আগের মতো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।’

গতকাল দুপুরে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননে মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। আগামী বছর থেকে সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি পালনের ব্যবস্থা নিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কাজী জাফর উল্লাহ। আলোচনা সভায় বক্তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন।

একই মঞ্চে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে যারা সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে সঁপে দিতে চায় তাদের প্রতিরোধ করাই হোক আজকের মুজিবনগর দিবেসের শপথ। পঁচাত্তর-পরবর্তী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপি ও তাদের দেশী-বিদেশী দোসররা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে।’

একাত্তরে প্রথম সরকারের শপথের দিন ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উদযাপন উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দিবসটি পালনে আম্রকানন ঘিরে জাঁকজমকপূর্ণ নানা আয়োজন করে। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘আমাদের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ থেকে আমরা দিবসটি পালন করি। স্বাধীনতাবিরোধী অসাম্প্রদায়িক শক্তি যারা বাংলাদেশ চায় না তাদের প্রতিহত করাই হোক এ দিনটির শপথ।’

জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানি এজেন্ট আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর দালাল আইন বাতিল করে সাড়ে এগারো হাজার যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দিয়েছিল। নিষিদ্ধ ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। তারা এখনো বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা ছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পুত্র রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। বিশেষ বক্তা ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক সাগর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, পারভীন জামান কল্পনা ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। 

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে গার্ড অব অনার এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ, বিজিবি, আনসার, বিএনসিসি, গার্লস গাইড ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কুচকাওয়াজ মুগ্ধ করে উপস্থিত হাজারো মানুষকে। 

দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি অর্কেষ্ট্রা দল ‘সোনালী স্বপ্নের দেশ’ নামের গীতিনাট্য পরিবেশন করে। যেখানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন