অভিমত

নদী অর্থনীতির সুরক্ষায় সমন্বিত কর্মসূচি অপরিহার্য

ড. মিহির কুমার রায়

নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বিভিন্ন কারণে অনেকে আগের মতো আর সেভাবে সম্বোধনের ইচ্ছা প্রকাশ করছে না। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জনসৃষ্ট তথা প্রাকৃতিক কারণে নদ-নদীগুলোর অকাল মৃত্যু, যা আমাদের কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যনিরাপত্তার জন্য এক বড় হুমকি। অথচ একসময় শুধু প্রাকৃতিক নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবন-জীবিকা, নৌযান চলাচল তথা পরিবহনে খাল-বিল, নদী-নালার এক অপূর্ব ভূমিকা ছিল। নদী-নালাগুলো সারা দেশজুড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকত যেন পরম করুণাময়ী মায়ের মতো। বাংলাদেশের নদ-নদী কী সাহিত্যে, গানে, নাটকে ও জীবন-জীবিকায় কী অসামান্য অবদান রেখেছে! নৌকাডুবি উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘নদী শুধু নারী নয়, পুরুষের মতো আছে নদ। মানুষের মতো সেও হাসে-কাঁদে, ভাঙে-গড়ে, আছে তার ক্রোধ।’ এ সত্যটা প্রাচীনকাল থেকে উপমহাদেশের সমাজ-সংস্কৃতিতে স্বীকৃত। কেবল তার কোনো আইনি স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। 

মানুষের চেয়েও নদ-নদীকে বেশি সম্মান দিয়েছে উপমহাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই আদিকাল থেকে তারা গঙ্গা নদীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করে। বিশ্বাস করে, গঙ্গা স্নানে সব পাপ মোচন হয়। লাখ লাখ মানুষ এখনো প্রতি বছর গঙ্গা স্নানে যায়। বিশ্বাস করে, গঙ্গা স্নানে তারা পাপমুক্ত হলো। গঙ্গাকে শুধু দেবত্ব নয়, মায়ের সম্মানও প্রদর্শন করে। কিন্তু উপমহাদেশে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এসব নদ-নদী দেবতা হিসেবে পূজিত হলেও কখনো তাদের সংরক্ষণ, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা রক্ষার চেষ্টা হয়নি। এরপর রবীন্দ্র-পরবর্তী বলয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান ‘পদ্মার ঢেউরে’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, গোলাম মোস্তফার ‘পদ্মা নদী’, ড. নীহার রঞ্জন গুপ্তের ‘নদীর নামটি মধুমতি’ ভৈরব প্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রিক্তা নদীর বাঁধ’ আমাদের সাহিত্য অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে। নদ-নদী প্রকৃতির দান কিন্তু আমাদের নদীগুলো, যেমন চিত্রা, মধুমতি, নবগঙ্গা, আন্ধার মানিক, পুনর্ভবা, ডাকাতিয়া, বংশাই, সুবর্ণখালী, পেয়াই, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, নারদ, গড়াই, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, মাথাভাঙ্গা, মেঘনা, পদ্মা, যমুনা, পিয়াইন, বাঙালি, মিনাই, সুবর্ণখালী, কালীগঙ্গা, ময়নাকাটা ইত্যাদি ঐতিহ্যের বাহক। কিন্তু এসব ঐতিহ্য এখন বাংলাদেশের শুধু গবেষক কবি কিংবা সাহিত্যিকের সৃষ্টিশীলতার উপাদান। কিন্তু এগুলো এখন এক শ্রেণীর মানুষের অর্থবিত্তের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে বসেছে যার প্রাদুর্ভাব নদী দখল, নদী দূষণ ইত্যাদি, যা বেশির ভাগ নদীর মৃত্যুর কারণ। বিভিন্ন পত্রিকা দেশের নদ-নদীগুলোর দুর্দশার ওপর ধারাবাহিকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নদীবহুল বাংলাদেশ এখন নদীহীন দেশে পরিণত হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, তথা মানুষের জীবন-জীবিকা। এখন অনেক নদী হয়েছে খেলার মাঠ, বসতবাড়ি, চাষের কৃষিজমি কিংবা শিল্প-কারখানার স্থাপনা, আবাসন প্রকল্প, দলীয় স্থাপনা যা হলো সবই অবৈধ। এমন সময় এসে গেছে যে দেশের এ নদীগুলোয় সহজেই বাঁধ দিয়ে চলছে মাছের চাষ, বনায়ন, গরু ও মুরগির খামার। এতে করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় কিংবা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নদী অর্থনীতি কিংবা হাওর অর্থনীতি এখন বিপাকে পড়েছে। দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী সাতটি জেলার জনপদ সম্পূর্ণভাবে সমুদ্র সংযোগ নদীর ওপর নির্ভরশীল যার মধ্যে আছে নৌকা, নৌযানভিত্তিক ব্যবসা, মৎস্যজীবী শ্রেণীর মাছের আহরণ ইত্যাদি। আবার সমতলে নদী হারিয়ে যাওয়া মানেই দুই পাড়ের মানুষের সভ্যতা বিপন্ন হওয়া। তার মধ্যে গ্রামীণ অর্থনীতির কৃষি ব্যবস্থা, খাদ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। অথচ অনেকেই বলছেন নদী হচ্ছে গ্রাম-বাংলার প্রাণ, যাকে ঘিরে হয় মানুষের জীবনচক্র, বাজার, কল-কারখানা, নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শহর, সভ্যতা, তাই নদী হলো জীবন কিংবা নদী হলো মরণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ৫৪টি নদী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং এসব অভিন্ন নদীর ওপর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য কৃষিতে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না আবার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার সেচ পাম্পও কাজ করছে না। ষড়ঋতুর দেশ বলতে যা বোঝানো হতো এখন তার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়, বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি নেই, বসন্তের আগেই বসন্তের আগমন, শীতের ব্যাপকতা থাকলেও স্থায়িত্ব কমে গেছে, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতেই বন্যা ইত্যাদি এখন দেশের মানুষের নিত্যদিনের সাথী। তথ্য বলছে, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলোর প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার তলদেশ এরই মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। রাজশাহী জেলার মানচিত্র থেকে সাতটি নদী এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে আর ১৩টি নদীর মধ্যে ১১টি নদী পানিশূন্য হয়ে গেছে। এ ধরনের চিত্র প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে। খোদ রাজধানী ঢাকার বুড়িগঙ্গার দূষণ ও দখল নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন এবং মিডিয়া প্রায় সংবাদ প্রচার করে চলছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয় না। বিষয়টি প্রশাসন তথা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার হলেও রাজনীতির প্রভাবের বলয় থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়ে উঠছে না। কারণ এ কথা সত্য যে স্বল্পবিত্ত কোনো ব্যক্তি বা সমাজ নদী, বন, জলাশয় কিংবা পাহাড় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কর্মী, স্থানীয় সরকার সদস্য কিংবা ধর্মীয় গুরুদের প্রতিপত্তিকে সমাজে আরো বেশি প্রতিফলিত করতে এ দখল মহোৎসবে লিপ্ত রয়েছে। অর্থাৎ এসব কাজ ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়েছে ক্ষমতার বলয়ের অন্তরালে আর যাদের দায়িত্ব এগুলো রক্ষা করার তাদের সব সময়ই নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায় যা সার্বিক অর্থে দুর্ভাগ্যজনক তথা লজ্জাকর।

এ ধরনের একটা পরিস্থিতিতে ‘মরছে নদী, ধুঁকছে মানুষ’ নামে স্লাগান প্রায়ই শোনা যায় পরিবেশবাদীদের কাছ থেকে। কিন্তু তাদের শক্তি কতটুকু আছে এক বিশাল দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়তে। প্রাকৃতিক কারণে নদী বা শাখা নদীগুলো তার নাব্যতা হারিয়েছে বিশেষ করে দীর্ঘদিনের পানি কিংবা বর্জ্য জমানোর কারণে এবং আমাদের দেশের মানুষ এখন প্রকৃতির খুব একটা শক্তিশালী প্রতিযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে কী নদী দখলে বা বন দখলে যার ফলে প্রাণিকুল একেবারেই বিপন্ন প্রায় যা আমরা চ্যানেল আইয়ের ‘প্রকৃতি ও জীবন’ অনুষ্ঠান থেকে জানতে পারি। কিন্তু এতে প্রকৃতি নিধন হয় না যদি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে।

গবেষকরা বলছেন, এই প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনায় যে অনিয়ম-অনাচার চলছে তা যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা হয় তবে বাড়তি জনসংখ্যার চাপে প্রকৃতি বিপর্যয় অনিবার্য। এমন একটা সময়ে সেগুলো ঘটছে যেখানে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে এবং একে টেকসই বেগবান রাখতেই এসব বিষয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণ জরুরি বিধায় প্রথমত, ছোট বা বড়, শাখা কিংবা প্রশাখা যেকোনো ধরনের নদীই হোক না কেন তার নাব্যতা ফেরাতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই, যার মাধ্যমে মূল নদীর সঙ্গে শাখা নদীগুলোর সংযোগমুখ প্রশস্ত হবে এবং নৌযান চলাচলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে কিছুসংখ্যক অসাধু প্রকৌশলী, ঠিকাদার, কনট্রাক্টরের কারসাজিতে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয় না। কিংবা বরাদ্দের টাকার অর্ধেকও যদি ব্যয়িত হতো তাহলেও অনেক কাজ সম্পন্ন হতো যা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নদ-নদীগুলো দূষণসহ মৃত হওয়ার প্রধান কারণ শিল্পের বর্জ্য নদীতে প্রেরণ, যা আইনবিরোধী এবং একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু শিল্প-কারখানার মালিকরা তা কোনোভাবেই প্রতিপালন করছে না কেবল পরিবেশ দপ্তরের উদাসীনতার কারণে। শিল্প-কারখানার অনুমোদনের সময় পরিবেশের দিকটি বিবেচনায় রেখেই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়, অথচ পরবর্তী সময়ে তা আর মানা হচ্ছে না। আবার মানুষের কি এতটুকু বিবেচনা নেই যে তাদের শিল্পের বর্জ্যগুলো ফেলে নদীর এত বড় ক্ষতি করছে নদীর পানির ব্যবহারে জীবন-জীবকায় ও প্রাণিজ বসতিতে স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করছে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় একটি নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে সত্যি কিন্তু তাদের গবেষণার ফলাফল নদ-নদীর রক্ষার কী কাজে লাগছে তার কোনো আলামত পাওয়া দুষ্কর। কারণ বিষয়গুলো এতই টেকনিক্যাল যে সাধারণ কেন অনেক বিশেষজ্ঞই বুঝতে বা প্রায়োগিক বিষয় জানতে অপারক হন। তাই প্রশাসনিক সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা উদ্যোগী মন্ত্রণালয় যেমন পানিসম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয় তাদের গবেষণার ফলাফলের সফল প্রয়োগ করে দেশের নদীগুলোকে কীভাবে রক্ষা করবে তা ভাবনার সময় এসেছে। চতুর্থত, নদী-নালা, খাল-বিল জলাধার ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ দেশজুড়েই ছড়িয়ে আছে এবং সেগুলোর গুণগত প্রাকৃতিক মান ধরে রাখার দায়িত্ব জনগণের যা থেকে সমাজ উপকৃত হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে সমাজ কাঠামোয় নিঃস্বার্থ লোক একেবারেই কমে গেছে এবং আর যারা আছে তারা ভোগ-দখল নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়। এখন প্রশ্ন হলো, দেশের রাজনীতি সমাজ উন্নয়নের জন্য নাকি ব্যক্তি উন্নয়নের জন্য? পঞ্চমত, নদীসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় জনগণের সম্পৃক্তকরণ কিংবা অংশীদারত্ব যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে জনগণই এগুলোর পাহারাদার হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু সেই ধরনের উদ্যোগ সৃষ্টিতে জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের একটি ভূমিকা রয়েছে যা ভুলে গেলে চলবে না; ষষ্ঠত, যারা অবৈধভাবে নদী থেকে মাটি কিংবা বালি উত্তোলন করছে কিংবা লিজ গ্রহণ তথা জলমহাল দখল করে বেড়াচ্ছে, প্রকৃতির ভারসাম্যের বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তা-ই নয় নদী রক্ষা করতে প্রতিবেশীর দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। নদী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে নদ-নদী দখল মুক্ত করে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে। সপ্তমত, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নদী ভাঙনরোধ ও ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ রয়েছে কিন্তু নদ-নদী ও খাল-বিল উদ্ধারের ভিশন অনুপস্থিত রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন যখন প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ঘোষণা করেন তখন অনেকেই তা বুঝতে পারেননি কিন্তু আজকে তা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন নদী ব্যবস্থা চালু রাখতে হলে প্রতিবেশী ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীতে পানি ব্যবস্থাপনাকে চালু রাখতে হবে। এটা নির্ভর করে নদীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ধরনের ওপর। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ব্যাপক ড্রেজিংসহ নদীভাঙন রোধ, নদী তীর রক্ষা ও নদীগর্ভ থেকে ভূমি পুনরুদ্ধার করতে হবে। তবে কাজটি এত সহজ হবে না। এজন্য প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সমন্বিত প্রয়াস; অষ্টমত, বাংলাদেশে তো আবার নদ-নদীর বড় শত্রু মানুষই। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে নদী খনন, নদী সংস্কার না হওয়ায় তার গভীরতা ও নাব্যতা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। তার ওপর অসাধু মানুষ নদীতে বালি ফেলে নদী মজিয়ে দিয়ে বসতি স্থাপন ও দোকানপাট করার জন্য অবৈধভাবে তার দখল নিচ্ছে। এ সমস্যা রাজধানী ঢাকার বুড়িগঙ্গা এবং বন্দরনগর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর জন্যও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অসৎ ও অসাধু কাজের সঙ্গে ক্ষমতাশালীদের যোগাযোগ এত প্রবল যে নদী রক্ষার জন্য আইন হয়; সেই আইন কার্যকর হয় না। ফলে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে উঠছে, প্রাণিসম্পদ রক্ষা করা দুরূহ হচ্ছে। এ পরিবেশ দূষণ এবং নদী, পানি ও বনসম্পদ রক্ষায় বিশ্বময় জোরালো আন্দোলন চলছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বময় এ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের একজন অগ্রনায়ক। বাংলাদেশে নদ-নদী, বনসম্পদ রক্ষা (সুন্দরবন রক্ষাসহ) ও পরিবেশ দূষণ বন্ধ করার জন্য বহুদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি দেশের হাইকোর্টের রায়ে দেশবাসীর এ দাবি পূরণ হতে চলছে মনে হয়। নদ-নদী রক্ষা সম্পর্কে এক ব্যক্তির করা রিট সম্পর্কে রায় দিতে গিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তুরাগ নদকে লিগ্যাল পারসন বা ‘জীবিত ব্যক্তি’ বলে ঘোষণা করেন। তার পরই পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ হলে দেখা যায়, কেবল তুরাগ নদ নয়, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদীকে একই মর্যাদা দিয়ে লিগ্যাল পারসন বা আইনি ব্যক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। হাসিনা সরকারের আমলে এ রায়ের ঘোষণা হওয়ায় পরিবেশ দূষণ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করা এবং নদ-নদী, বনাঞ্চল রক্ষায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে শেখ হাসিনার যে ভূমিকা, তার আন্তরিকতা প্রমাণিত হলো।  

ড. মিহির কুমার রায়: ডিন, ব্যবসা ও অর্থনীতি অনুষদ

সিটি ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন