বিএনপি নেতাদের বাসায় পুলিশি অভিযান, মামলা মির্জা ফখরুল কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদালতে নেয়ার পথে মির্জা ফখরুল ইসলাম

গ্রেফতারের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার মামলায় পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি-জামায়াতের আট শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। দল দুটি বলছে, গতকাল সারা দেশ থেকে তাদের নয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকায় বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। 

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আটকের পর মির্জা ফখরুলকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নেয়া হয়। রাত ৮টা ১০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে মির্জা ফখরুলের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান, মহসিন মিয়া, ওমর ফারুক ফারুকী, মোসলেহ উদ্দিন জসিমসহ কয়েকজন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু। পরে রাত ১০টার দিকে জামিন আবেদন নাকচ করে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম শফিউদ্দিন। মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা তাকে কারাগারে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন করলে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। 

মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগমের অভিযোগ, অসুস্থ অবস্থায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার বলার কোনো ভাষা নেই। তিনি অসুস্থ, প্রচণ্ড অসুস্থ। এটা বাইরের কেউ বুঝবেন না।’ 

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের আগে গত শনিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। ওই সময় তারা বাসায় ছিলেন না। আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ছেলে তাজওয়ার এম আউয়ালকে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের লালমাটিয়া ও বনানীর বাসায়ও তল্লাশি চালিয়েছে ডিবি। বেলা পৌনে ১১টার দিকে তার লালমাটিয়ার বাসায় যান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বড় ছেলে আশিকের কাছে তার বাবার খোঁজ জানতে চান। আশিকের অভিযোগ, তার বাবার পরোয়ানার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির সদস্যরা তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। একপর্যায়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তারা। 

পরে আলালের বনানীর বাসায় যান ডিবি সদস্যরা। সেখানে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের বাসায় তল্লাশি চালায় ডিবি। তিনি তখন বাসায় ছিলেন না। এ সময় পুলিশ তার ছোট ভাই ইশফাক হোসেন এবং তাদের গাড়িচালক রাজিবকে নিয়ে যায়। পরে অন্যদের সঙ্গে আদালতে নেয়া হলে ইশফাক হোসেনসহ ছয়জনকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। রিমান্ডে পাঠানো আসামিদের মধ্যে রাজবাড়ী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলীও রয়েছেন। বাকিরা হলেন জহির হাসান, মফিজ, বাবুল ও আজিম উদ্দিন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘাতের ঘটনায় ঢাকার ২১ থানায় ২৮টি মামলা হয়েছে। ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, এসব মামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছয়টি হয়েছে শাহজাহানপুর থানায়। 

মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতারের পর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে এ নিয়ে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ধৈর্যই ধরব না, এবার প্রতিরোধ গড়ে তুলব। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের দায় তারা এড়াতে পারে না। হুকুমদাতা হিসেবেই মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করেছে সরকার। বাকিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, গর্তে ঢুকে গেছে।’ 

সেদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো মামলা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ, আগুন, ভাংচুর, পুলিশ সদস্য নিহত এবং অনেকে আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা শুরু হয়েছে। অনেকেই মামলা দেবে। পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দেবে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা হয়েছে, এ মামলা তো হবে। সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে মামলা দেয়া হবে।’ মির্জা ফখরুলের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা মিটিং করেছেন, মিটিংয়ের জন্য বসেছিলেন, তখনই ঘটনাগুলো ঘটেছে। তাহলে এর দায় কি তারা এড়াতে পারেন?’ 

এদিকে রাজধানীর ফকিরাপুলে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ওই ঘটনায় তারা সরাসরি জড়িত ছিল। রাজারবাগে নিহত পুলিশ সদস্যের জানাজায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল পারভেজকে হত্যার ঘটনায় শামীম রেজা ও মো. সুলতান নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে শামীম গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর যুবদলের আহ্বায়ক। তাকে গাইবান্ধা এবং সুলতানকে ঢাকার ডেমরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা আমাদের পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে আমরা যা যা করা দরকার তাই করব।’ 

পুলিশ হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গাজীপুরে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কথা দিলাম, এটার বিচার ত্বরিত গতিতে করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন