অতিধনীদের মোট সম্পদে কর আরোপের প্রস্তাব

বণিক বার্তা ডেস্ক

মন্টে কারলো রিসোর্টে অভিজাত ইয়ট ছবি: গার্ডিয়ান

অতিধনীদের আয়ে নয়, মোট সম্পদের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি। প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হলে বার্ষিক ২৫ হাজার কোটি ডলার বাড়তি কর সংগ্রহ করা সম্ভব। আর এ তহবিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলার মতো খাতগুলোয় ব্যয় করা যেতে পারে। খবর রয়টার্স

ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির ১০০ সদস্যের করা একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। তারা সেখানে বৈশ্বিক ন্যূনতম বার্ষিক কর ২ শতাংশ ধার্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি আগের মতো আয়ের ওপর শুল্কারোপ না করে সম্পদের ওপর কর ধার্য করতে অনুরোধ জানানো হয়। প্রস্তাবনাটি আনা হয়েছে ২০২১ সালে ১৪০ দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী। সে সময় বৈশ্বিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ন্যূনতম কর ১৫ শতাংশ ধার্য করা হয়। অবজারভেটরি প্রধান গাব্রিয়েল জাকম্যান বলেন, ‘দেশগুলো সম্মত হলে অতিধনীদের সম্পদের ওপরও কর ধার্য করা সম্ভব। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনার পরবর্তী পদক্ষেপও হতে পারে এটি।’ 

বিশ্বে অতিধনী বা বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ২ হাজার ৭০০। তাদের অধীনে থাকা সম্পদের মোট পরিমাণ ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার। বর্তমান আইনে অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে আদায় করের তুলনায় তাদের থেকে আদায় কর অনেক কম। কারণ কর এড়ানোর জন্য তারা সাধারণত শেল কোম্পানিগুলোয় সম্পদ স্থানান্তর করেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে জাকম্যান জানান, বিষয়টিকে মেনে নেয়া কঠিন। এর মধ্য দিয়ে করনীতি ও নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্পদশালী দশমিক শূন্য ১ শতাংশ নাগরিকের জন্য ন্যূনতম ২৫ শতাংশ কর ধার্য করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনাটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। প্রতিবেদনের দাবি, এক্ষেত্রে এককভাবে কোনো দেশ নয়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অতিধনীদের শুল্কের আওতায় আনা প্রয়োজন। তার জন্য দরকার সময়েরও। তবে বিভিন্ন দেশের সরকার অর্থ পাচারের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে নিজে থেকে এগিয়ে আসতে পারে। কারণ প্রায়ই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর এড়ানোর জন্য কম শুল্কের দেশে অর্থ পাঠিয়ে দেয়। জাকম্যান বলেন, ‘‌এত দিন যা অসম্ভব মনে হচ্ছিল, এখন তার অনেক কিছুই সম্ভব। অতিধনীদের ওপরও কর আরোপ করা অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করা জরুরি।’ 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্কের হার নিয়ে দেশে দেশে চলমান প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটবে, যদি ব্যাংক খাতের গোপনীয়তা ও ন্যূনতম বাণিজ্যিক শুল্ক ধার্যের যুগে সমাপ্তি টানা যায়। 

অনেক ক্ষেত্রেই সম্পদশালীরা বিদেশী অর্থ না পাঠিয়ে আবাসন খাতে তাদের সম্পদ গচ্ছিত রাখেন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এক্ষেত্রে বের করতে পারে ফাঁকফোকর। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে। কারণ বিভিন্ন দেশের সরকার বিনিয়োগ পেতে প্রতিযোগিতা হিসেবে করছাড় এমনকি ভর্তুকি দিচ্ছে। বিষয়টি সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ অতিধনীরা আইনকে প্রায়ই প্রভাবিত করে। বিশেষ করে হোল্ডিং কোম্পানিগুলোকে কাজে লাগায় গ্রে এরিয়া হিসেবে। তার পার্থক্যও দৃশ্যমান। প্রতিবেদন অনুসারে, অতিধনীরা তাদের মোট সম্পদের তুলনায় শূন্য থেকে দশমিক ৬ শতাংশ কর দিচ্ছেন। অথচ যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন না, তাদের জন্য কর দাঁড়াচ্ছে ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত করনীতি। 

শেল কোম্পানিগুলো সাধারণত শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কার্যকর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সম্পদশালীরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্ক ফাঁকি দিতে ব্যবহার করে। পাশাপাশি গোপন করে ব্যাংকের সঠিক তথ্য। প্রতিবেদনে এসব সমস্যাকে চিহ্নিত করায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি প্রস্তাবিত কর আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি হয়ে উঠবে অতিধনীদের কর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন