কোনো শর্ত মেনে বিদেশে যাবেন না খালেদা জিয়া —মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোনো শর্ত মেনে খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে বলেছেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই। কোনো শর্ত মেনে বিদেশে যাবেন না তিনি।’ রাজধানীতে একটি কনভেনশনে গতকাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কনভেনশনটির আয়োজন করে। এতে ২২টি পেশাজীবী সংগঠন অংশ নেয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ৪০১ ধারায় সরকারের ক্ষমতা আছে দণ্ড মওকুফ করে বিদেশ পাঠানোর, সরকারই পারে সে ব্যবস্থা করতে। বিদেশে চিকিৎসায় বাধা দেয়ায় প্রমাণ করে খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় সরকার, তাই তাকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। উনাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে না। সরকার তার দণ্ড স্থগিতের শর্তগুলো প্রত্যাহার করে নিলে উন্নত চিকিৎসাপ্রাপ্তি থেকে আর বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আইনের কোথাও উল্লেখ নেই চিকিৎসার জন্য শর্ত প্রত্যাহার করার সুযোগ থাকবে না।’ 

তিনি বলেন, ‘অসুস্থ জেনেই সরকার তাকে বাড়িতে থাকার শর্তে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছিল। সুতরাং যে অসুস্থতার সুচিকিৎসার সুযোগ দেশে নেই, সেই রোগের চিকিৎসা যে জায়গায় রয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে না। অন্যদিকে সুচিকিৎসার সুযোগ পাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার দেশের সংবিধানই নিশ্চিত করেছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখছেন না চিকিৎসকরা। লিভারের জটিল সমস্যার পাশাপাশি তার দুটি কিডনি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ১৫ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তাকে বিদেশে নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে না দিয়ে সরকার সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা পাওয়া খালেদা জিয়ার মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী, দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। খালেদা জিয়াকে সংবিধানে দেয়া চিকিৎসা সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে যা অন্যায়, অমানবিক ও অসাংবিধানিক। সরকার তাকে ইচ্ছা করে আটকে রেখেছে। অথচ এর আগে দণ্ডপ্রাপ্ত অনেকেই বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। সারা বিশ্বে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে। তাই তাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিলে তা কোনো নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে না বরং প্রতিষ্ঠিত মানবিক ও আইনানুগ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি দুই বছর ধরে রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে, এবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ আঘাত করলে বিএনপি প্রত্যাঘাত করবে না এমনটা নয়। এ আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্বাচন নির্বাচন করে এবার কোনো লাভ নেই। আগে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, এরপর নির্বাচনের কথা আসবে। অতীতের মতো সরকার আবারো একতরফা নির্বাচনের জন্য একটা বাগান সাজিয়েছে। কিন্তু এবার জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায় এদের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। তারা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।’ 

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন