ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের অভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না

ড. সায়মা হক বিদিশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিক্ষুদ্রঋণ তহবিল, ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত, দক্ষ জনশক্তি রফতানি ও অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কমছে, রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

এটি যেহেতু আয়-ব্যয়ের হিসাব, একেবারেই তাত্ত্বিকভাবে দেখি। কারেন্ট ও ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট দুটোর ক্ষেত্রেই উপার্জনের ফ্লো বাড়ানো যেতে পারে। এজন্য আমাদের রেমিট্যান্স অর্জন, রফতানি বাড়ানো, ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টকে (এফডিআই) যদি আকর্ষণীয় করতে পারি, সে জায়গায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া, সেগুলো যদি আমরা করতে চাই তখন খরচের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। অর্থাৎ আমাদের আমদানির যে পেমেন্টটা, যখনই আমরা আমদানির কথা বলছি—একটি বিষয় হচ্ছে যে আমদানি কাটছাঁট করতে হবে। সেই সঙ্গে এটিও মাথায় রাখতে হবে যে কাটছাঁট করতে গিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আমদানি করার আছে। কারণ আমাদের মূলধনি পণ্য, বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানি সে জায়গাগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি দেখার বিষয় আছে। আমদানি কমানোর কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, কিন্তু তা সুফল বয়ে আনবে না। সেটা আবার যেটির সঙ্গে সম্পর্কিত, সে জায়গায় আবার সামষ্টিক অর্থনীতির আরেকটি বিষয় বিনিময় হার রয়েছে। এতে কিন্তু বার বার ডিভ্যালুয়েশন করা হয়েছে। মুদ্রার মান ধরে রাখার চেষ্টা কিন্তু ছিল। এখন দেখছি বিভিন্ন ধরনের বৈশ্বিক বিষয়গুলো যখন সামনে এসেছে। তখন এ বিনিময় হার ধরে রাখা জটিল হয়ে যাচ্ছে। তাই দীর্ঘমেয়াদে যদি চিন্তা করা হয়, রিজার্ভের পুরো বিষয়টির সঙ্গে এটাও সংশ্লিষ্ট যে বিনিময় হারের পাশাপাশি সুদের হার ধীরে ধীরে মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়া। এগুলো ধীরে ধীরে করতে হবে। এটার কিছুটা আমরা দেখেছি এবারের মুদ্রানীতিতে, প্রোগ্রেস সেদিকে ধাবিত করার উদ্যোগ আমরা দেখেছি, যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এটা আরো আগেই করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন এটি করতে হবে। এক মাসের মধ্যেই না, তবে ধীরে ধীরে এ পদক্ষেপ নিতে হবে। যেটা এক ধরনের অ্যাডজাস্টমেন্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ সমন্বয়ের ফলাফলস্বরূপ কিছু খরচ আছে। এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ এটি মূল্যস্ফীতি আরো উসকে দিতে পারে। যদি ডলারের মূল্য আরো বেড়ে যায়, সেটার জন্য অন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি এড়ানোর খুব বেশি উপায় নেই। কিছু সমস্যা, চ্যালেঞ্জকে মেনে নিতেই হবে। এর জন্য দেখতে হবে মূল্যস্ফীতি যেন সাধারণ মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে, এক্ষেত্রে অন্যভাবে সহায়তা করতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক ধরনের প্রচেষ্টা দেখছি, তার পরও ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। তার একটা কারণ হচ্ছে, ব্যবসার যে পরিবেশ সেটি এখনো ব্যবসাবান্ধব নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে, এ কারণে বিদেশী বিনিয়োগ সেভাবে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। সে জায়গায় একটা কাজ করা যেতে পারে—বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল যেগুলো রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু উদ্যোগ যদি নেয়া হয়, সে জায়গাগুলো কেন্দ্র করে বিদেশী বিনিয়োগ আনা, এক্ষেত্রে আমাদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস যদি আরো স্মুথ হয়। বিনিয়োগগুলো আরো বেশি দ্রুত করতে হবে। রফতানির ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে হয়তো খুব বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কী করণীয় রয়েছে? আমাদের এক্সপোর্ট বাস্কেটটা পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে বিভিন্নমুখী কমোডিটিকরণ, নতুন নতুন যে খাতগুলো রয়েছে—আমাদের চিন্তা করতে হবে অন্য কী খাত রয়েছে? বড় ধরনের প্রোসপেক্টিভ রয়েছে। নতুন ধরনের প্রণোদনা দেয়া, নতুন সুযোগ দেয়া—সে কাজগুলো করা জরুরি। এটা একদিনে হবে না। এ প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছে, কিন্তু এখানে রফতানীকরণে খুব একটা আশাব্যঞ্জক সাফল্য লক্ষ করিনি। এ জায়গায় বড় ধরনের কাজ করার জায়গা রয়েছে। 

প্রণোদনা দেয়ার পরও প্রবাসীদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ প্রেরণে কেন আগ্রহী করা যাচ্ছে না?

মানুষ কেন অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে? বৈধ পথটাকে আকৃষ্ট করার বিভিন্ন পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে। কিন্তু আমাদের যে বিষয়টি দেখতে হবে—যতক্ষণ পর্যন্ত বৈধ এবং অবৈধ পথের মধ্যে একটি পার্থক্য থাকে, ততক্ষণ আমি একজন প্রবাসীকে দোষ দিতে পারব না, যদি তিনি অবৈধ পথে টাকা পাঠাতে চান। কারণ তার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ডলারের বিষয়টা যদি অ্যাডজাস্ট হয়, তখন বৈধ পথে আসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যাবে। আরেকটি বিষয়, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে অনেক প্রবাসী আছে—যে দুটো কারণে তারা অবৈধ পথে যায়, এক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ক্ষেত্রে দেখেছি ইনিশিয়ালি কিছু উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে, যেগুলো আমি প্রশংসনীয় বলব। সে ইনিশিয়েটিভগুলোকে ব্যাপক হারে নেয়া উচিত। এমএফএসগুলো আসার ক্ষেত্রে একটা ইকোসিস্টেম তৈরি হওয়া দরকার। এটার কিন্তু প্রযুক্তি আছে, বিভিন্ন রেগুলেশন আছে। এ জায়গাগুলো যদি আরো সহজ করা যায়, তাহলে একজন প্রবাসী চিন্তা করবে যে ব্যাংকগুলো অনেক দূরে। যদি সে বৈধপথে পাঠাতেও চায়, তার জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা হয় না। তখন আমরা যদি তার জন্য কিছু ইনিশিয়েটিভ দিতে পারি, এমএফএসের মাধ্যমে দ্রুতই করতে পারবে, সরকার এ জায়গায় যদি কাজ করে, তাদের যদি ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে কিছু প্রণোদনা দেয়া যায়, যেটার মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য তৈরি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে এবং সিস্টেম তৈরি করে তাদের জন্য কাজটা সুলভ ও সহজ করে দেয়া দুটোই করা জরুরি। এজন্য বৈধ পথে যাওয়া সহজ করা এবং বৈধ পথে অর্থনৈতিক সুবিধা বাড়ানো, যাতে তারা আকৃষ্ট হয়। এছাড়া সরকার তো সবসময় প্রণোদনা দিতে পারে না, এজন্য দীর্ঘমেয়াদে বিনিময় হারটা ঠিক করা। আরেকটা বিষয়, অবৈধ পথটাকে, হুন্ডির যে সরবরাহ, সেটি বন্ধ করা। এটাকে আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কমিয়ে আনতে পারব। অর্থাৎ, আমাদের এখানে যত অবৈধ আর্থিক লেনদেন—এ জিনিসটা কঠোর নজরদারি দরকার আছে, যার মাধ্যমে রেমিট্যান্সের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারব। যে কারণে আমরা দেখেছি, করোনার সময় বৈধপথে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। কারণ অবৈধ পথে সম্ভব ছিল না। এখন তো আর সে বিষয়টি নেই, কিন্তু তার পরও যত বেশি কড়াকড়ি হবে, স্ক্রুটিং হবে, যত বেশি ট্রান্সপারেন্সি আসবে, তত বেশি হুন্ডির বিষয়টায় টান পড়বে। এটা যদি জটিল করে দেয়া যায়, তাহলে বৈধপথে একটা আকর্ষণ তৈরি হতে পারে। রিজার্ভ সংকট এড়াতে এ জায়গাগুলোয় চেষ্টা করা দরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিক্ষুদ্রঋণের তহবিল আকার বাড়িয়েছে, এটিকে কীভাবে দেখছেন? 

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে আমরা মানুষকে স্বনিয়োজিত কাজে আগ্রহী করতে পারি, সেটি সংসারকে যেমন সহযোগিতা করবে, পাশাপাশি গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সাহায্য করবে। আমাদের যেটা দেখতে হবে—ফান্ডামেন্টাল কিছু সমস্যা আছে, ক্ষুদ্র ঋণে যেটা ঘটে, দেখা যায় যে ফরমালিটি ও ইনফরমালিটি। অনেক সময় তারা আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আসতে চায় না। যদি আসে তাহলে তারা সরকারের অনেক সুবিধা অ্যাভেইল করতে পারবে। এজন্য তাদের আনুষ্ঠানিক স্কিমের মধ্যে আনতে হলে সহায়তা করতে হবে। এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, কিছু কিছু যদি ইনসেনটিভ দেয়া যায়, যেমন আমাদের ট্রেড লাইসেন্স লাগে, এটি অনেক সময় জটিল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে যাদের ক্যাপিটাল টার্নওভার বা রেভিনিউ তাদের জন্য যদি ভিন্ন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করি। ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে দুটো কাজ করা যেতে পারে। একটা হতে পারে, যারা মাঝারি আকারের রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে চিন্তা করতে হবে। যারা ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র এবং যারা কটেজ তাদের নীতিগুলো আলাদা হতে পারে। দ্বিতীয় গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে আবার আরেকটা ভাগ করা যেতে পারে। তাদের আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আনা, ইনসেনটিভ দেয়ার ব্যাপারে তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়া, এক্ষেত্রে যেটা হতে পারে ট্রেড লাইসেন্সের ব্যাপারে নমনীয় হওয়া, আগামী এক বা দুই বছরের জন্য একেবারে মিনিমাম কিছু ডকুমেন্টেশন, বেসিক কিছু কাগজপত্র যদি সাবমিট করা হয়, ন্যাশনাল আইডি, ছবি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কাগজ বা এ রকম কিছুর মাধ্যমে তাকে একটা প্রভিশনাল ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হোক, এতে যেটা হবে যারা ছোট তাদের জন্য সহজ করে দেয়া। দ্বিতীয়ত, ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক ডকুমেন্টেশন নয়, ডকুমেন্টেশনের ক্ষেত্রে আমরা যদি বলি যে ইনিশিয়াল পাঁচটা স্টেজের মধ্যে দুটো স্টেজ থাকল। তাহলে যেটা হবে ছোট, ক্ষুদ্রদের মধ্যে এতটুকু টার্নওভার বা রেভিনিউর নিচে যারা আছে, তাদের আমরা এ সুযোগ দিলাম। ট্যাক্সের ক্ষেত্রে প্রথম বছর আপনারা রিটার্ন সাবমিট করেন, সে বছর ট্যাক্সেবল হলেও ট্যাক্স দেয়া লাগবে না। এভাবে তাদের সুবিধা দিয়ে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের আওতায় আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। 

ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বলুন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেমন অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে পারে?

ব্রিকস একটি এক্সক্লুসিভ জোট, সেখানে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক ক্ষেত্রে পজিটিভ সিগন্যাল দেবে যে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বা ব্রিকসে যারা রয়েছে তাদের কাছ থেকে কারিগরি সুবিধা—এসব নেয়া বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক হবে। এটা যেমন সত্য, তেমনি বাইরে থেকে কেউ যদি ঋণ নিতে চায়, বিনিয়োগ করতে চায়, ব্রিকসের সদস্য এটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে ব্রিকসের সাফল্য অভ্যন্তরীণ যে ভূরাজনৈতিক রসায়ন সেটার ওপরও নির্ভর করবে। এখানে যে রাষ্ট্রগুলো রয়েছে, তাদের আন্তঃসম্পর্ক কেমন তার ওপর নির্ভর করবে ব্রিকস কতটা সফল। আবার ব্রিকসে যোগদানের ফলে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশগুলো রয়েছে—তাদের ব্রিকসে যোগ দেয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য থাকতে পারে। বিষয়টা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্ভর করবে, সুতরাং সাফল্যটা নির্ভর করবে যতটা না বাংলাদেশের তার চেয়ে ব্রিকসের ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের রসায়ন কেমন। দ্বিতীয় হচ্ছে, বাইরের অন্য রাষ্ট্র যারা রয়েছে তারা পুরো ব্রিকসকে কীভাবে দেখছে তার ওপর নির্ভর করছে। এটির ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কিছু জায়গায় সতর্ক থাকার দরকারও রয়েছে। যাতে করে ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে সুবিধা যেগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন আমরা পরিপূর্ণভাবে নিতে পারি। সে কারণে ব্রিকসে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সুবিধা নেয়ার জন্য বাংলাদেশেরও এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে, বাংলাদেশ কতটুকু নিতে পারবে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের জোট, সে কারণে পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিও বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটিও বিবেচনা করতে হবে।

বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত? এক্ষেত্রে নারীরা যেন যথাযথ নিরাপত্তা পায়, সেজন্য কী পদক্ষেপ নিতে হবে? 

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুটো জিনিস, যখন আমরা কিছুটা হলেও দক্ষ জনশক্তি রফতানি করব। তাহলে নারী-পুরুষ উভয়ের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়বে। তারা যদি তাদের নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়, যদি মিনিমাম লেভেলের শিক্ষা থাকে, যদি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের পাঠানো হয়, তাদের যদি অধিকার সম্পর্কে শেখানো হয়, এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সার্বিক দিক ইতিবাচক। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশগুলোর দিকেও দেখতে হবে আমরা কাদের কাছে পাঠাব? যেখানে নিরাপত্তার বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, সে জায়গাগুলোর বিকল্প আমাদের চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক যে গ্যাপ রয়েছে, সেগুলো দেখতে হবে। তৃতীয় হচ্ছে, আমাদের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আমাদের যে ডেমোগ্রোফিক প্রোফাইল আছে সেটা যদি চিন্তা করি, তাহলে অনেক দেশ আছে যেখানে নারী শ্রমিকরা অনেক ভালো অবদান রাখতে পারেন, আমরা যদি বিষয়টাকে কেয়ারফুলি উপস্থাপন করতে পারি। তখন কিন্তু জাপানের মতো দেশ, পশ্চিমা দেশ সেখানে বয়স্ক জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে, তাদের দেখভালের জন্য মানুষের দরকার আছে। কিছু বেসিক হাইজিন ট্রেনিং যদি দেয়া যায়, এর মাধ্যমে যদি তাদের প্রোফাইল উন্নত করা যায়, তাহলে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। পাশাপাশি আমাদের যে সার্টিফিকেশন, এ সার্টিফিকেটগুলোর অ্যাক্রেডিটেশন প্রোপারলি আন্তর্জাতিক মানের কিনা, ট্রেনিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের কিনা—এ জায়গাগুলোয় কাজ করার প্রয়োজন আছে। এখানে আমরা কিছু পদক্ষেপ দেখেছি, এর বাইরে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন আছে। 

অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বর্তমানে কেমন? 

আমরা যদি শ্রম জরিপ দেখি, সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি—একেবারে তাত্ত্বিকভাবে বললে নারীর অংশগ্রহণের হার বেড়েছে, কিন্তু শহরাঞ্চলে কমেছে। যদিও আমরা শ্রম জরিপে সম্পূর্ণ তথ্য পাইনি, তার পরও কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতি এবং কাজের গুণগত মান যদি আমরা চিন্তা করি, সেদিক থেকে আমরা যে খুব বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কিন্তু নয়। বহু নারী কিন্তু গ্রামে অবৈতনিকভাবে পারিবারিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। যার জন্য তিনি শ্রমশক্তির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন, কিন্তু পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। এটি অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নেও খুব একটা কাজ করছে না। যদিও তিনি তার শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। নারীর অপ্রদর্শিত যে শ্রম, অর্থাৎ গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র মূল্যায়ন করার দরকার আছে। এ কাজগুলো মূলধারার অর্থনৈতিক কাজে আসার ক্ষেত্রে যেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে, এজন্য পদক্ষেপ নেয়া দরকার আছে। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন জেলায় ডে-কেয়ার সেন্টারের কথা বলা হচ্ছে, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপগুলো আরো বাড়াতে হবে। এগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, সরকারের পার্টনারশিপ হতে পারে। শহরাঞ্চলগুলোয় শুধু কর্মসংস্থানভিত্তিক ডে-কেয়ার থাকবে তা নয়, এলাকাভিত্তিক যেন হয়, যাতে যারা নিম্ন আয়ভিত্তিক তাদেরও যেন অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেক্ষেত্রেও আমাদের চেষ্টা করতে হবে। নারীর উচ্চপর্যায়ে অংশগ্রহণ এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। একটি হচ্ছে বাল্যবিবাহ, এটি রোধ করতে হবে। কারণ এটি শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ পিছিয়ে দেয়, এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও রয়েছে। এছাড়া নিরাপদ বাসস্থান এবং যাতায়াতের ব্যবস্থা করা। এ কাজগুলো করা গেলে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন