থাইল্যান্ডে তীব্র খরার আশঙ্কা

ঝুঁকির মুখে চাল ও চিনির বৈশ্বিক সরবরাহ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

এল নিনোর প্রভাবে থাইল্যান্ডে বড় ধরনের খরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে এ খরা। যার প্রভাবে চাল ও চিনির বৈশ্বিক সরবরাহ আশঙ্কাজনক হারে সংকুচিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর জাপান টাইমস।

থাইল্যান্ডের সরকারি তথ্য বলছে, এ বছর বর্ষা মৌসুমে দেশটিতে বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ শতাংশেরও নিচে নামতে পারে। এল নিনো আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে আগামী দুই বছরে বৃষ্টিপাত আরো কমার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকেই থাইল্যান্ড তীব্র খরার সম্মুখীন হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আসন্ন খরার প্রভাব মোকাবেলায় এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে থাই সরকার। পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের এককভাবে ধান আবাদ ও চাল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চিনি উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছেন উৎপাদকরা। খরার কারণে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে। কৃষিপণ্য উৎপাদন হ্রাস ও পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবজি, তাজা খাবার ও মাংসের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে।

থাইল্যান্ডের সরকার এরই মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি ও ন্যাচারাল ওয়াটার রিসোর্চ অফিসকে পানি সংরক্ষণের জন্য সম্ভাব্য পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত দেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২৮ শতাংশ নিচে অবস্থান করেছে।

এল নিনোর প্রভাবে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশ শুষ্ক আবহাওয়া ও খরার মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় দেখা দিতে পারে অতিবৃষ্টি। ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর আগেও এল নিনোর কারণে ব্রাজিল থেকে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া অর্থাৎ প্রধান শস্য উৎপাদন দেশগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিল। যার প্রভাবে এসব দেশে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বড় ধরনের ধাক্কা খায় জিডিপি।

বিশ্বজুড়ে খরার প্রভাবে এরই মধ্যে চাল উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। সরবরাহ সংকুচিত হয়ে পড়ায় ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোয় চালের রফতানি মূল্য বাড়ছে লাফিয়ে।

চলতি সপ্তাহে ভারতীয় চালের রফতানি মূল্য বেড়ে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ভিয়েতনাম ও থাই চালের দাম অবস্থান করছে দুই বছরের সর্বোচ্চে। উৎপাদনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মুদ্রার বিনিময় মূল্যে উত্থান-পতন চালের বাজারকে প্রভাবিত করছে।

ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিলের দেয়া তথ্য বলছে, ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে বিশ্বজুড়ে সাড়ে ৫১ কোটি টন চাল উৎপাদন হয়েছিল। সদ্য বিদায়ী মৌসুমে তা কমে ৫১ কোটি ৪০ লাখ টনে নেমেছে। ২০২১-২২ মৌসুমে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৫০ লাখ টন চালের বাণিজ্য হয়েছে। বিদায়ী মৌসুমে তা কমে ৫ কোটি ৪০ লাখ টনে নেমেছে। এদিকে বাণিজ্য ও উৎপাদন কমলেও বেড়েছে শস্যটির ব্যবহার।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানায়, মে মাসে চালের বৈশ্বিক দাম বেড়েছে। কয়েক মাস ধরেই পণ্যটির বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী। শীর্ষ দেশগুলো থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। এর আগের মাসেই শস্যটির সরবরাহ সংকট ও দাম বাড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এফএও।

এল নিনো আবহাওয়া পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে চিনি সরবরাহ হুমকির মুখে বলে মনে করছে এফএও। এতে অন্যান্য পণ্যের দাম কমলেও মে মাসে এটির দাম বেড়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ মাসের মতো দাম বাড়ল। মে মাসে চিনির মূল্যসূচক বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

সরবরাহ সংকটের উদ্বেগে ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক উদ্বৃত্তের পরিমাণ কমার পূর্বাভাস মিলেছে। প্রধান প্রধান উৎপাদক দেশে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এমন পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশন (আইএসও)। 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত প্রান্তিকভিত্তিক এক পূর্বাভাসে আইএসও জানিয়েছেল, ২০২২-২৩ মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪১ লাখ ৫০ হাজার টনে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে তা লক্ষণীয় মাত্রায় কমিয়ে ৮ লাখ ৫০ হাজার টন ধরা হয়েছে।

আইএসও জানায়, বৈরী আবহাওয়া, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন ব্যয়বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় চলতি মৌসুমে ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও ইউরোপের চিনি উৎপাদন আশঙ্কার চেয়েও অনেক বেশি কমতে পারে। উৎপাদন নিয়ে এমন আশঙ্কার কারণে ভোগ্যপণ্যটির দাম ১১ বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন