কাঁচামালে শুল্ক কমালেও চিনির দাম কমেনি

বণিক বার্তা ডেস্ক

দোকানে রাখা চিনির বস্তা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চিনি তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমালেও পাইকারি বাজারে দাম এখনো কমেনি। রোজা শুরুর এক মাস আগেই চিনির দাম বাড়িয়েছে মিলগুলো। 

শুল্ক কমানোর পরও মিল থেকে বেশি দামে চিনি কিনে বাজারে বিক্রি করছেন ডিলার ও পাইকাররা। ফলে দাম না কমে পাইকারি বাজারেই চিনির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৯০ পয়সা থেকে দেড় টাকা। যে কারণে বাজারে দাম কমেনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যখন কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সে সময় রোজার সিজন শুরু হয়ে গেছে। শুল্ক কমের কাঁচামাল বাজারে প্রবেশ করেনি। ফলে রোজার মৌসুমে চিনির দাম কমেনি। উল্টো আরো বেড়েছে। এর প্রধান কারণ বাজারে যে চিনি বেচাকেনা হচ্ছে, সে চিনির কাঁচামাল বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করেছে আরো এক-দেড় মাস আগেই।

নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে চিনি বেচাকেনা হচ্ছে ১০৯-১১০ টাকা কেজি দরে। অথচ ভোক্তা অধিকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যনির্ধারণ করেছে ১০৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২২ টাকা কেজি দরে।

নিতাইগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা জানান, সরকার চিনির কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও বাস্তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বর্তমানে বাজারে যে চিনি বেচাকেনা হচ্ছে, তার কাঁচামাল প্রায় এক থেকে দেড় মাস আগে আমদানি করেছেন মিলমালিকরা।

ডলার সংকট ও এলসি খুলতে দেশে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সে কারণে চিনির বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরেই অস্থিরতা চলছে। সরকার রোজার আগে চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু এ শুল্ক যদি আরে দুই মাস আগে কমানো হতো তাহলে ভোক্তারা রমজানে কম দামে চিনি কিনতে পারত বলে জানান তিনি।

নারায়ণ সাহা জানান, চিনির বাজারে অস্থিরতার মূলে রয়েছে মিল থেকে চাহিদা অনুযায়ী চিনি সরবরাহ না করা। ডিও কেটে এক-দেড় মাস চিনির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ডিওতে যে পণ্য সরবরাহের তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়, সে তারিখে চিনি পাওয়া যায় না। চিনি পেতে হলে আরো ছয়-সাতদিন মিলগেটে ট্রাক নিয়ে বসে থাকতে হয়। ফলে সব খরচ মিলিয়ে পাইকারি বাজারে আমাদের ১০৫-১০৬ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে।

চিনি ব্যবসায়ী দীলিপ সাহা বলেন, ‘‌মিলগেট থেকে চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যেসব মিল ১০৫ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করে তাদের মিল থেকে পণ্য পেতে এক থেকে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে যে সব মিল দাম বেশি নিয়ে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখছে তাদের কাছ থেকেই আমাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে। কেনার পর খুবই ছোট পরিসরে পাইকারি দোকানে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী জানান, মিল থেকে ডিও কেটেও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে চিনি বেশি দামে কিনে এনে বাজারের চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দোকানের নিয়মিত ক্রেতাদের কাছে চিনি বিক্রি করতে হয়। না হলে ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, মিল থেকে আমরা যারা দেড় থেকে দুই মাস আগে ডিও কেটেছি, তাদের চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে না। কিন্তু যারা আরো বেশি দামে স্পেশাল ডিও কাটছে, তাদের চিনি দিয়ে দিচ্ছে মিলগুলো। ফলে নিয়মিত ডিও কেটে আমরা যারা অপেক্ষায় আছি তাদের পণ্য আসছে না। মিলগেটে তদারকি বাড়ানো হলে ভোক্তারা কিছুটা হলেও কম দামে চিনি পাবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন