বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলোচনায় এখন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। জাতীয় দলের সাবেক এ কোচকে আবারো হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে তার এ নিয়োগে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারণটা তার সামর্থ্য নিয়ে নয়, বরং প্রথম অধ্যায়ে তার চলে যাওয়ার ধরন ছিল দৃষ্টিকটু। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে তিনি আকস্মিক সিদ্ধান্তে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শ্রীলংকার দায়িত্ব নেন।
দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো অধ্যায় আগেভাগে শেষ হওয়ায় সেই হাথুরুসিংহেকে মসনদে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের হেড কোচ হিসেবে কাজ করবেন ৫৪ বছর বয়সী হাথুরুসিংহে। তাতে টি২০ দলের কনসালট্যান্ট হিসেবে শ্রীরাম শ্রীধরনের দায়িত্বের সমাপ্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র।
গত মঙ্গলবার হাথুরুসিংহেকে নিয়োগের ঘোষণা দেয় বিসিবি। এর চার সপ্তাহ আগেই রাসেল ডোমিঙ্গো পদত্যাগ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ দায়িত্বে থাকাকলেও বিসিবি নতুন কোচ খুঁজছিল, ফলে ডোমিঙ্গো নিজে থেকেই সরে যান। আবার হাথুরুসিংহে ২০১৭ সালে চুক্তিকে ‘অসম্মান’
করে চলে গেলেও বেশ কয়েক বছর ধরে তাকেই ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছিল বিসিবি।
হাথুরুসিংহেকে কেন ফিরিয়ে আনা? লংকান কোচের চেয়ে তার পরে দায়িত্বে আসা স্টিভ রোডস (২০১৮-২০১৯) ও ডোমিঙ্গো (২০১৯-২২) দুজনেরই রেকর্ড ভালো। রোডসের জয় ৫১.১১ শতাংশ, আর ডোমিঙ্গোর ৪২.৩৪ শতাংশ। ওয়ানডে ও টি২০-তে দুজনেরই রেকর্ড হাথুরুর চেয়ে ভালো। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১০২ ম্যাচ হাথুুরুর সফলতার হার ৪০.২০%। তবে রোডস ও ডোমিঙ্গোর চেয়ে টেস্টে ভালো সাফল্য পান হাথুরুসিংহে। তার সময় ২১ টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ছয়টি।
অনেকেই মনে করেন, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর তাড়াহুড়ো করেই রোডসকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ডোমিঙ্গোর কোচিং স্টাইল নিয়ে বোর্ডের ভেতর সমালোচনার সৃষ্টি হওয়ায় তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। যদিও তার চলে যাওয়ার সময়টা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ২-১-এ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে হেরেছে টাইগাররা।
অবশ্য হাথুরুর প্রথম অধ্যায়ে ঈর্ষণীয় কিছু সফলতা পায় বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা ওয়ানডে সিরিজ জয় ছাড়াও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নকআউট পর্বে ওঠে টাইগাররা। তার সময়েই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। হয়তো সেই তেজোদ্দীপ্ত টাইগারদের ফেরাতেই পরীক্ষিত ‘টেকনিশিয়ান’
হাথুুরুর শরণাপন্ন বিসিবি।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস হাথুুরুর নিয়োগ নিয়ে বলছেন, ‘আমরা খুশি। সে এখানে অতীতে কাজ করেছে বলে খাপ খাইয়ে নিতে কোনো অসুবিধা হবে না। সে ভালো একজন কোচ। আমাদের এমন একজন কোচের প্রয়োজন ছিল যে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এমন এক কোচ যে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে খেলোয়াড়ের সেরাটা বের কর আনতে পারে।’
সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা খানিকটা উদ্বিগ্ন, আবার আশাবাদীও। তিনি এ নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে এটি (হাথুুরুর বিদায়) খুবই খারাপ একটি দৃষ্টান্ত। জেমি সিডন্সও এসেছেন। ট্যাকটিক্যাল ও টেকনিক্যাল দিক থেকে তারা দুজন বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ। হয়তো এ কারণেই বোর্ড তাদের ফিরিয়ে এনেছে। কোচ সংকটও আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কারণে কোচ পাওয়া কঠিন। সেদিক চিন্তা করলে বিসিবির সিদ্ধান্ত সঠিক।’
বাংলাদেশ দলকে ১০২ ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি, যার ৬৯টিই হাথুুরুর সময়। খেলোয়াড়টি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ড্রেসিংরুম হাথুরুসিংহেকে কীভাবে নেবে, সেটি নিয়ে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়। কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। দু-চারজন বাদে বাকি খেলোয়াড়রা কিন্তু আগেরই (হাথুরুর প্রথম অধ্যায়ের)।’
১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছবেন হাথুরুসিংহে।