বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথে থাকছে ৩ জংশন, ৭ স্টেশন

এইচ আলিম, বগুড়া

বগুড়ার কাহালু স্টেশন জংশন হিসেবে পরিণত হবে নতুন রেলপথে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি বেড়েছে। দুই জেলার মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনে তিনটি জংশন সাতটি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনটি জংশন নির্মাণ এবং রেলপথ তৈরি হলে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার রেলপথে যোগাযোগে  দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার। এতে উত্তরের জেলার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় অর্থ সাশ্রয় হবে।

জানা যায়, ২০১১ সালের এপ্রিল সিরাজগঞ্জে এবং ২০১৫ সালে বগুড়ায় দলীয় এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথ উপহার দেয়ার ঘোষণা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ না থাকায় উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে যাত্রী কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার জংশন হয়ে নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হয়ে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছতে হয়। শুধু বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিনটি জেলা ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছতে সময় লেগে যায় - ঘণ্টা। আর প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় - ঘন্টা। আর সড়ক পথে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে করে ঢাকা যেতে সময় লাগে - ঘণ্টা। অথচ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে সরাসরি ট্রেনযোগে পৌঁছতে সময় লাগবে এক থেকে সোয়া ঘণ্টা। বাসে করে ঢাকায় যেতে ২০০ কিলোমিটার ট্রেনে করে পাড়ি দিতে হয় ৪০৫ কিলোমিটার। বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে বগুড়াসহ উত্তরের জেলার ট্রেন যাত্রীদের ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সে সঙ্গে উত্তরের ট্রেন যাত্রীদের সাশ্রয় হবে। এছাড়া সড়ক পথ হয়ে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার ঢাকাগামীরা যাতায়াত করে। কারণে সড়ক রেলপথে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে ঢাকা পৌঁছতে হয় নানা দুর্ভোগ নিয়ে। দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে বগুড়া সিরাজগঞ্জসহ উত্তরের বাসিন্দারা রেলপথ নির্মাণের দাবি তোলেন। রেলপথটি নির্মাণ হলে উত্তরের ১০ জেলার অর্থনৈতিক ভিত্তি আরো মজবুত হবে।

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি হলোবগুড়া স্টেশন থেকে হাজার ৬০০ ফুট পশ্চিমে অবস্থিত বগুড়া শহরের বেলাইল পর্যন্ত। এরপর বগুড়ার বেলাইল থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার এবং অন্যটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য তিনটি জংশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার কাহালু উপজেলায় একটি, বগুড়া সদর রেলওয়ে স্টেশনে একটি অন্য একটি জংশন নির্মাণ করা হবে শাজহানপুর উপজেলার রানীরহাটে। তিনটি জংশন নির্মাণের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পাবে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে পথ।

প্রকল্প অনুযায়ী নতুন ওই রেলপথে জংশন ছাড়াও আরো সাতটি স্টেশন স্থাপন করা হবে। এগুলো হলোরানীরহাট, আড়িয়াবাজার, শেরপুর, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, কৃষাণদিয়া সদানন্দপুর। প্রস্তাবিত ৮৪ কিলোমিটার রেলপথের জন্য মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার সীমানায় ৫২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৫১০ একর এবং সিরাজগঞ্জ অংশের জন্য ৩২ কিলোমিটার। প্রয়োজন আরো ৪৫০ একর জমি। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে হাজার কোটি টাকা। তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি যেহেতু চালু রয়েছে সেহেতু ব্যয় এখনই বলা যাচ্ছে না।

বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, বর্তমানে বগুড়া থেকে রেলযাত্রীরা নওগাঁ সীমানা হয়ে নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। আর বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারবে আগের চেয়ে কম সময়ে কম খরচে। এতে করে যাত্রীসংখ্যাও বাড়বে এবং কৃষিপণ্য সহজে পরিবহনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে। 

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের প্রকল্প পরিচালক প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজ জানান, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ হলে ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে বগুড়াসহ উত্তরের মানুষের আরো উন্নয়ন হবে। রেলপথটি নির্মাণের জন্য বগুড়া এলাকায় তিনটি জংশন করা হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ প্রকল্পের সব কাজ চলমান। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন