আলোকপাত

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম কি ন্যায্য গুরুত্ব পাচ্ছে?

ড. মইনুল ইসলাম

বিশ্বে উন্নয়নেররোল মডেলবাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর এবং একমাত্র স্বাভাবিক পোতাশ্রয় চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনের অন্যতম প্রধান ধারক। কিন্তু ইতিহাস প্রকৃতিনির্দিষ্ট ভূমিকা পালনে রাজনীতিসৃষ্ট বাধা বারবার পথ আগলে দাঁড়াচ্ছে। একটি নব্য-ঔপনিবেশিক ধাঁচের আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ক্রম-কেন্দ্রিকরণের বিষময় ফল হিসেবে উন্নয়ন প্রয়াসের ঢাকাকেন্দ্রিকতা চট্টগ্রাম বন্দরকে বিমাতাসুলভ বৈষম্যের শিকারে পরিণত করছে। চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে অনেকে হতাশাজনক বলে অভিহিত করছেন এবং সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রাষ্ট্রীয় নীতি-প্রণেতাদের অবহেলা বৈরিতাকেই চিহ্নিত করছেন। সরকারের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার নির্ধারণে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রয়োজন যেভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে সে তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্প্রসারণ আধুনিকায়নের আবশ্যকতা যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ এবং রফতানি পণ্যের ৮৫ শতাংশ পরিবাহিত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়টি কর্ণফুলী নদী বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থল থেকে মাত্র নটিক্যাল মাইল অভ্যন্তরে অবস্থিত হওয়ায় নদীপথের নাব্যতা সংরক্ষণ সম্প্রসারণ এবং পণ্য ওঠানামা করানো বেশ সুবিধাজনক বিধায় ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পূর্ব পূর্বাঞ্চলীয় বিশাল অর্থনৈতিক পশ্চাত্ভূমির সহজতম সামুদ্রিক করিডোর হিসেবে চট্টগ্রাম ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করছিল, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বর্তমান ভারতেরসেভেন সিস্টার্সরাজ্যগুলো কিংবা নেপাল ভুটানের বৈদেশিক বাণিজ্যের ট্রাফিক আজও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারছে না। একটি আঞ্চলিক আমদানি-রফতানি কেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রাম গড়ে উঠতে পারলে একটি বিশাল পশ্চাত্ভূমির সুবিধা পুনরুদ্ধারের ব্যাপারটি দেশের পুরো অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।

কিন্তু সম্ভাবনা বাস্তবের মধ্যে যে বিরাট ফাঁরাক সেটা সত্যিই দুঃখজনক। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশের মতো আমদানি ৮৫ শতাংশ রফতানি পণ্য পরিবাহিত হলেও স্বাভাবিক পোতাশ্রয়টি যে এরই মধ্যে একটিলাইটারেজ পোর্টেপরিণত হয়ে গিয়েছে তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। মানে, মিটারের বেশি ড্রাফটের কোনো পণ্যবাহী জাহাজ এখন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করতে পারে না। ওগুলোকে হয়তো বন্দরের বাইরে বঙ্গোপসাগরের আউটার এনকরেজে নয়তো কুতুবদিয়ার কাছাকাছি সাগরে নোঙর করতে হয়, যেখান থেকে লাইটারেজ ভেসেল বা কোস্টারে করে পণ্য খালাস করে বন্দরের জেটিতে নিয়ে আসতে হয়। অথবা আরো বড় মাদার ভেসেলগুলো থেকে সিঙ্গাপুরে বা কলম্বো বন্দরে পণ্যের কনটেইনারগুলো আনলোড করেকনটেইনারবাহী জাহাজেরমাধ্যমে আমদানীকৃত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে নিয়ে আসতে হয়। অন্যদিকে রফতানি পণ্যেরও বেশির ভাগ কনটেইনার জাহাজে ভরে ওই দুই বন্দরের মাদার ভেসেলগুলোয় তুলে দিতে হয়। এসব কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি পণ্য পরিবহনের খরচ প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্দরের তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি পড়ছে, সময়ও লাগছে অনেক বেশি। অথচ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ সম্পর্কে প্রযুক্তি-জ্ঞানের অভাব না থাকলেও স্রেফ সরকারের অবহেলা অমনোযোগের কারণে সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দর এরই মধ্যে একটিলাইটারেজ পোর্টেপরিণত হলেও সরকার বন্দরের সীমাবদ্ধতা নিরসনে প্রস্তাবিতবে-টার্মিনালনির্মাণকে যথাযথ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রায় ১৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বে-টার্মিনালে প্রবেশ করে পণ্য খালাস করতে পারবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে দাবি করা হলেও গত চার বছর রহস্যজনক কারণে বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল। সম্প্রতি বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজে কিছুটা গতিসঞ্চার হয়েছে।

ব্রিটিশ-ভারতে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার্স ছিল চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী এক দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সদর দপ্তরও ছিল চট্টগ্রামেই, কিন্তু এখন তা ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম শহরের যে বিশাল এলাকাজুড়ে রেলওয়ের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল তা অনেকটাই অব্যবহূত বা অর্ধ-ব্যবহূত স্থাপনা হয়ে পড়েছে বলা চলে। ক্রমাগত লোকসানের দরিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ লাকসাম বা কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্তকর্ডলাইনরেলপথ স্থাপনের কাজটি কোনো অজ্ঞাত কারণে ঝুলে রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে ডাবল লাইন ডুয়াল গেজে রূপান্তরের কাজও কেন বিলম্বিত হচ্ছে বোঝা মুশকিল! ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা যাবে চট্টগ্রামের ভৌত অবকাঠামো অর্থনৈতিক-সামাজিকওভারহেড ক্যাপিটালগড়ে তোলার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের আপেক্ষিক বঞ্চনার ব্যাপারটিতে। বিদ্যুৎ, টেলিফোন, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, খাল খনন কিংবা পানি নিষ্কাশন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রতিটি ব্যাপারেই চট্টগ্রামের ন্যায্য হিস্যা পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম শহরের বিদ্যুতের লোডশেডিং, নাগরিক বিনোদন ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রতি সরকারি অবহেলা, উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবএগুলো ইদানীং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক বঞ্চনার ইস্যু হিসেবে সামনের কাতারে চলে এসেছে। ইস্যুগুলো প্রামাণ্য হয়ে দাঁড়ায় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামকে তুলনা করলে। নীতি-প্রণেতাদের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এসব ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে বলেই সমাধানও আসতে হবে ওই দৃষ্টিভঙ্গির আশু পরিবর্তনের মাধ্যমে। চট্টগ্রামকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর মর্যাদা প্রদানের ঘোষণাটি যদি প্রতারণামূলক না হয়, তাহলে আর দেরি না করে ঘোষণাটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করলে এই আঞ্চলিক বৈষ্যমের ইস্যুটি বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হতে পারবে না। বাংলাদেশের মতো একটি নব্য-ঔপনিবেশিক অর্থনীতির বাস্তবতা হলো, এখানকার সমাজ অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরের মধ্যে এক ধরনের কেন্দ্র-প্রান্ত সম্পর্ক কার্যকর থাকার কারণে উদ্বৃত্ত-পাচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়ে গিয়েছে। সম্পর্কের কারণেই গ্রাম থেকে শহরে উদ্বৃত্ত পাচার জোরদার হয়; ছোট শহর থেকে বড় শহরে সম্পদ পাচার হয়ে যায়; দেশের যাবতীয় অঞ্চল থেকে রাজধানীতে উদ্বৃত্ত পুঞ্জীভূত হতে থাকে। ধরনের অর্থনীতিতে তাই আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন খুবই জটিল ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য। বিশেষত চট্টগ্রাম বন্দরকে বঞ্চিত করে কিংবা চট্টগ্রাম বন্দরের ফান্ড স্থানান্তর করে পায়রা বন্দর নির্মাণ এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পায়রা বন্দরকেগভীর সমুদ্রবন্দরহিসেবে গড়ে তোলার জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করার পর ওই প্রকল্প পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ছিল খামখেয়ালি, এর পেছনে কোনো ভালোফিজিবিলিটি স্টাডিছিল না। এভাবে পায়রা বন্দরকে জবরদস্তিমূলকভাবেগভীর সমুদ্রবন্দরহিসেবে গড়ে তোলার খামখেয়ালিপনা শাসক মহলের চট্টগ্রাম-বৈরী মানসিকতার প্রতিফলন কিনা ভেবে দেখা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দরের পঙ্গুত্ব সমস্যার সর্বোত্কৃষ্ট সমাধান পাওয়া যেত যদি কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরটি পরিত্যক্ত না হতো। এখন বিকল্প হিসেবে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাপানের সহযোগিতায় যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ওই কাজ ২০২৫ সালে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর একটি ভালো বিকল্প হবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বঙ্গোপসাগরের তীরে আধুনিক বে-টার্মিনাল, যেখানে প্রায় ১৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

অবস্থায় উন্নয়ন নীতিগুলোর ক্রমবর্ধমান ঢাকাকেন্দ্রিকতার ফলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কেন্দ্রীকরণ চট্টগ্রামের সহজাত সুবিধাগুলোর গুরুত্বকেই লঘুকরণে অবদান রেখে চলেছে সেখানে ২০০৩ সালে ঘোষিতবাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামনিয়ে মাতামাতি অনেকটাই বেফজুল। এরই মধ্যে বলেছি, ব্রিটিশ-ভারতে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার্স ছিল চট্টগ্রামে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী এক দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সদর দপ্তরও ছিল চট্টগ্রামেই, কিন্তু এখন তা স্থানান্তরিত হয়েছে ঢাকায়। বাংলাদেশে ৬৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে, তার একটিরও সদর দপ্তর কি চট্টগ্রামে স্থাপিত হয়েছে? বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের হেড কোয়ার্টার্স নামকাওয়াস্তে চট্টগ্রামে থাকলেও ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা মাসে কতদিন ঢাকায় থাকেন আর কতদিন চট্টগ্রামে থাকেন তার হিসাব নিলে দেখা যাবে প্রকৃতপক্ষে ঢাকার অফিস থেকেই প্রতিষ্ঠানটি চালানো হচ্ছে। কিছুদিন আগেও চা রফতানির একমাত্র নিলাম হতো চট্টগ্রামে, এখন দ্বিতীয় নিলাম হচ্ছে শ্রীমঙ্গলে। চট্টগ্রামের প্রথম সারির ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা চট্টগ্রামে থেকে কি ব্যবসা ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারছেন? চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এদিনেও একটা ব্যস্ত পুরদস্তুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে পারল না কেন? যখন চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিল তখনই আমি ২০০৩ সালের মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ওই ঘোষণা বাস্তবায়িত না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম এবং সত্যি সত্যিই বাস্তবায়ন চাইলে ধারাবাহিকভাবে যেসব পরিবর্তন প্রয়োজন হবে তার জন্য নিচে উল্লেখিত তালিকাটি প্রদান করেছিলাম:

.   সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর চট্টগ্রামে স্থানান্তর;

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং কমপক্ষে পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সদর দপ্তর চট্টগ্রামে স্থানান্তর;

সব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাইভেট ব্যাংকের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক দপ্তরকে ডিএমডির অধীনে ন্যস্ত করে উচ্চক্ষমতায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ;

.   সরকারের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সদর দপ্তর চট্টগ্রামে স্থানান্তর;

পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামকে একটি ফ্রি পোর্টে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ;

বন মন্ত্রণালয়, মত্স্য মন্ত্রণালয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর চট্টগ্রামে স্থানান্তর;

.   চট্টগ্রামে একটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপন;

বাণিজ্য-সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষমতা দিয়ে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন;

প্রস্তাবিত ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে স্থাপন;

১০.          চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে জোরারগঞ্জ পর্যন্ত সমুদ্র উপকূল দিয়ে চার লেনের একটি বিকল্প মহাসড়ক নির্মাণ;

১১. ঢাকার জয়দেবপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর;

১২.          কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ;

১৩.         চট্টগ্রামের টাইগার পাস থেকে ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব পর্যন্ত পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ;

১৪.          আনোয়ারার পারকীতে সি-বিচ, থিম পার্ক হোটেলসহ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা;

১৫.         বাংলাদেশের বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করার জন্য চট্টগ্রামে ওই সব দেশের কনস্যুলেটের ক্ষমতায়ন;

১৬.         চট্টগ্রাম বন্দরকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান;

১৭.          চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিবাহিত সব আমদানির ওপর এক শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ অর্থায়নের ব্যবস্থা করা; এবং

১৮.         চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকেসিটি গভর্নমেন্টেরূপান্তর।

গত ১৯ বছরে ওপরের তালিকার কয়েকটি সুপারিশ বাস্তবায়ন হলেও বেশির ভাগ পরিবর্তন কি অদূরভবিষ্যতে আদৌ বিবেচিত হবে? কর্ণফুলী নদীর টানেল নির্মাণের পাশাপাশি মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের প্রস্তাবিত প্রকল্প তত্প্রসূত শিল্পায়ন কার্যক্রম চট্টগ্রামকে অঞ্চলের দ্বিতীয় সিঙ্গাপুরে পরিণত করায় অবদান রাখবে, কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্পটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে গিয়েছে। ফলে কর্ণফুলী টানেল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালু হলেও টানেলের সড়কপথটি বহু বছর স্বল্প-ব্যবহূত থেকে যাবে। এর মানে চালু হওয়ার পর কয়েক বছর যাবৎ এই টানেলের আয় থেকে প্রকল্পের জন্য গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধ সম্ভব হবে না। আরো দুঃখজনক হলো, জাইকার অর্থায়নে চট্টগ্রাম নগরীর চারপাশে যে চার লেনেররিং রোডপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছিল সে প্রকল্পটির কাজও কয়েক মাস ধরে শ্লথ হয়ে গিয়েছে। অথচ রিং রোডটি চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যার অনেকখানি সমাধান দিতে পারত। সবশেষে বলব, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা এবং অমাবস্যা-পূর্ণিমায় জোয়ারের পানিতে শহরের একাংশ নিয়মিত ডুবে যাওয়ার সমস্যাটি নিরসনে যে ড্রেনেজ-কাম-স্লুইস গেট নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছিল সে প্রকল্পটির কাজও গত কয়েক মাস থেমে আছে। সরকার যে চট্টগ্রাম নগরীর সমস্যাগুলো সমাধানে তেমন আন্তরিক নয়, তারই প্রমাণ কি বহন করছে না ওপরে উল্লেখিত ব্যর্থতাগুলো?                                                 

 

. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন