নির্মাণের ১৪ বছর পর জনবল পেল ফেনী ট্রমা সেন্টার

নুর উল্লাহ কায়সার, ফেনী

সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় ফেনীতে নির্মিত ট্রমা সেন্টার ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নির্মাণের ১৪ বছর পর আংশিক জনবল পেয়েছে ফেনী ট্রমা সেন্টার। ২০০৬ সালে নির্মাণের পর জনবল না দেয়ায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি হাসপাতালে পাঁচজন চিকিৎসক, পাঁচজন সেবিকা একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগের মাধ্যমে হাসপাতালটি সচল হলো। নতুন যোগদানকৃতদের মাধ্যমে সম্প্রতি বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে যন্ত্রপাতি প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে হাসপাতালটি পুরোপুরি চালুর ব্যাপারে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সড়ক পথে দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশজুড়ে সড়ক মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার নামে চিকিৎসালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সে লক্ষ্যে ২০০২ সালে ফেনীর মহিপাল, ফরিদপুরের ভাঙা, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, সাভারের ধামরাই, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, কুমিল্লার পদুয়া, হবিগঞ্জের বাহুবল, ময়মনসিংহের ভালুকা ঝিনাইদহে ১০টি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এসব সেন্টার নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতার পালাবদল হয়। এসে এসব সেন্টারের নির্মাণ কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। শম্বুকগতিতে নির্মাণকাজ শেষ হলেও জনবল প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ট্রমা সেন্টারগুলো চালু করা যায়নি।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ২০০২ সালের মে ফেনী ট্রমা সেন্টারের তিনতলাবিশিষ্ট ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিএনপি দলীয় ফেনী- আসনের তত্কালীন সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভিপি। এক একর জায়গার ওপর ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সেন্টারটি প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। সড়ক মহাসড়কের দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের তাত্ক্ষণিক সেবা দিতে সাতজন সার্বক্ষণিক পরামর্শক চিকিৎসক, তিনজন অর্থো সার্জন, দুজন অ্যানেসথেসিস্ট, দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স, ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ড্রাইভার, অফিস সহকারী, ওয়ার্ড বয়, আয়া ল্যাব অ্যাটেনডেন্টের পদ রয়েছে এসব সেন্টারে। এছাড়াও রয়েছে কুক-মশালচি, দারোয়ান, এমএলএসএস সুইপারের পদ।

সড়কের পাশে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমে আসত দাবি করে ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সামাদ বলেন, ফেনীর মহিপালে একটি ট্রমা সেন্টার রয়েছে বলে শুনেছি। ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় দুর্ঘটনায় পতিতদের ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠাতে হয়। এতে করে রোগীর রক্তক্ষরণ গুরুতর রোগীদের অনেক সমস্যা হয়। অনেক সময় মারাও যায়। মহাসড়ক থেকে সদর হাসপাতালের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। কিন্তু শহরের যানজট পেরিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, ট্রমা সেন্টারের তিনতলা ভবনের নিচতলায় করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে। দ্বিতীয় তলায় চলছে বহির্বিভাগের সেবা কার্যক্রম। বহির্বিভাগে রোগীদের দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সঙ্গে সরকারি বরাদ্দের কিছু ওষুধও দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতালটির আরএমও দায়িত্বে আছেন ডা. এসএম সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, হাসপাতালটিতে আপাতত আউটডোর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ছোটখাটো আহত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি রোগীদের ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস ছালেহীন জানান, সম্প্রতি ট্রমা সেন্টারে ১১ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখানকার আসবাব যন্ত্রপাতি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আপাতত হাসপাতালে আউটডোর চালু করা হয়েছে। বাকি জনবল প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেলে আবাসিক চিকিৎসা চালু করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন