বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে রক্ষায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় যৌথ পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব যখন কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত থেকে পুনরুদ্ধারে লড়াই করছে, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় আঘাত হিসেবে হাজির হয়েছে। এ যুদ্ধের প্রভাবে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই এ যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় যৌথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকেপ) ৭৮তম বার্ষিক সম্মেলনে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে হাইব্রিড পদ্ধতিতে হচ্ছে অধিবেশনটি। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন অভিন্ন লক্ষ্য, এ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল শুরু হওয়া এ অধিবেশন চলবে ২৭ মে পর্যন্ত।
নিজের বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন’ প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের এসডিজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ারে ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতাকে পারস্পরিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখি। সার্ক, বিমসটেক, বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি এবং ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্যোগের সঙ্গে আছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ক্রস-বর্ডার পেপারলেস ট্রেড, এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নেটওয়ার্কিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ইউএন এসক্যাপের অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আমরা এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে এবং অন্যান্য পদক্ষেপের জন্য এসক্যাপের উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছি।
পারস্পরিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প মনে করেন শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে আঞ্চলিক আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করাসহ পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। প্রস্তাবগুলো হলো: জ্ঞান এবং উদ্ভাবন সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে কর্মমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে থাকা দেশগুলোকে আরো বাস্তবসম্মত উপায়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার ব্যবস্থা করা, জলবায়ুু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ও প্রযুক্তি বরাদ্দে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা, আঞ্চলিক সংকট ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জনে আঞ্চলিক আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কর্মসংস্থান তৈরি, তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও তথ্যপ্রযুক্তির সেবা সম্প্রসারণ করা।
এ সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবারো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ নাগরিককে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ মানবিক সংকট মারাত্মক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে। আমরা এ বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা ও সমর্থন আশা করছি।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে ১৩ বছর ধরে আমাদের পরিকল্পিত উন্নয়নযাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারী সারা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর। মহামারী মোকাবেলায় আমরা জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভূমিকা রেখেছে।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ার হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’র খসড়া তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে গেছে।