অনুমোদন ছাড়াই চলছে আইইউবির সাতটি প্রোগ্রাম

সাইফ সুজন

বেসরকারি উদ্যোগে দেশে যে টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে অন্যতম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) শীর্ষ বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়ের বিরুদ্ধে অনুমোদনবিহীন প্রোগ্রাম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে চারটি ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) ডিগ্রির অনুমোদন থাকলেও আইইউবিতে ধরনের প্রোগ্রাম চলছে সাতটি। আবার ইউজিসি অনুমোদিত বিএ এবং এমএ ডিগ্রি পরিচালিত হচ্ছে বিএসসি এমএসসি নামে। এমনকি কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে একটি স্নাতক প্রোগ্রাম। সব মিলিয়ে আইইউবির স্নাতক স্নাতকোত্তর পর্যায়ের আটটি প্রোগ্রামের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অনুমোদিত একটি বিবিএ প্রোগ্রামের আড়ালে ১০টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করায় আইইউবির ঠিক পাশের প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে (এনএসইউ) কয়েক মাস ধরেই লাল তারকায় চিহ্নিত করে রেখেছে ইউজিসি। কয়েক বছর আগে এমএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রির আড়ালে এমএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পরিচালনা করায় উত্তরা ইউনিভার্সিটিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রোগ্রামের নাম হালনাগাদ করে কমিশনের অনুমোদন নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করায় আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল তারকায় চিহ্নিত করে রেখেছে উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থাটি। তবে আইইউবিতে বেশকিছু অনিয়ম চললেও এখনো লাল তারকা যুক্ত হয়নি তাদের নামের পাশে।

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরুর আগে ইউজিসির অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন বিভাগ বা ইনস্টিটিউট খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসিতে লিখিত আবেদন জমা দিতে হয়। আবেদনের পর বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেয় ইউজিসি। ওই কমিটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো পরিদর্শন শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতসহ সার্বিক সক্ষমতা যাচাই করে। কমিটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সুপারিশ করার পর নতুন বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ইউজিসি। বিভাগের সিলেবাসের অনুমোদনও ইউজিসি থেকে নিতে হয়। ইউজিসির চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে কোনো প্রোগ্রাম বা বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি বা বিজ্ঞাপন প্রকাশও বিধিসম্মত নয়।

যদিও কমিশনের অনুমোদনের বাইরেও বিভিন্ন প্রোগ্রাম খুলে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এজন্য ইউজিসি তাদের ওয়েবসাইটে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত প্রোগ্রামের তালিকা প্রকাশ করে। পাশাপাশি এর বাইরের কোনো প্রোগ্রামে ভর্তি না হওয়ার নির্দেশনাও দেয়। তবে কমিশনের চোখ ফাঁকি দিয়েই চলে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ সনদ বাণিজ্য।

ইউজিসির তথ্যমতে, আইইউবিতে অনুমোদিত বিবিএ প্রোগ্রাম রয়েছে চারটি। এগুলো হলো বিবিএ (অনার্স), বিবিএ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসবিবিএ মেজর অ্যান্ড মাইনর ইন ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এইচআরএম (মেজর অ্যান্ড মাইনর ফর বিবিএ) যদিও আইইউবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, কমিশনের অনুমোদনের বাইরে অ্যাকাউন্টিং, ফাইন্যান্স, জেনারেল ম্যানেজমেন্ট মার্কেটিং নামে আরো চারটি বিবিএ প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। যেহেতু ইউজিসির ওয়েবসাইটে চারটির অনুমোদন নেই, তাই প্রোগ্রামগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একইভাবে কমিশন থেকে বিএ ইন ইকোনমিকস এবং এমএ ইন ইকোনমিকস প্রোগ্রামের অনুমোদন দেয়া হলেও আইইউবিতে দুটি প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে যথাক্রমে বিএসসি ইন ইকোনমিকস এমএসসি ইন ইকোনমিকস প্রোগ্রাম নামে।

ধরনের অসামঞ্জস্যতাকে বড় ধরনের অনিয়ম বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আইইউবির ইউজিসি মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক . মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কমিশন থেকে বিএ ডিগ্রির অনুমোদন নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিএসসি ডিগ্রি দেয়া হলে সেটি অনেক বড় অনিয়ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমৃদ্ধ সিলেবাসে পাঠদান দেয়া সত্ত্বেও আমরা এখনো বিএসসি ইন ইকোনমিক ডিগ্রি না দিয়ে বিএসএস ডিগ্রি দিচ্ছি। যদিও আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। এছাড়া কমিশনের অনুমোদন ছাড়া প্রোগ্রাম পরিচালনার আইনত কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু কমিশন থেকে আমাদের সেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, অবশ্যই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।

অন্যদিকে ইউজিসির কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়েই চলছে আইইউবির বিএ ইন ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচিং নামের প্রোগ্রামটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংলিশ অ্যান্ড মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়েও প্রোগ্রামটির কথা জানা যায়। কিন্তু ইউজিসির ওয়েবসাইটে দেয়া আইইউবির অনুমোদিত প্রোগ্রামের তালিকায় নামের কোনো প্রোগ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

তবে আইন ইউজিসির সব ধরনের নির্দেশনা মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আইইউবির রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ইউজিসির অনুমোদনের বাইরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। আর যেহেতু ইকোনমিকস প্রোগ্রাম অনুমোদিত, তাই বিএ না বিএসসি ডিগ্রি দেয়া হলো, সেটি মুখ্য নয়। আমাদের এখানে অনেক সমৃদ্ধ গুণগত মানের সিলেবাসে পাঠদান করা হয়।

কেবল অনুমোদনবিহীন প্রোগ্রাম পরিচালনাই নয়, অনুমোদিত প্রোগ্রামগুলোও নিয়মিত হালনাগাদ না করার অভিযোগ রয়েছে আইইউবির বিরুদ্ধে। তাই অনুমোদিত অনেক প্রোগ্রামের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি প্রোগ্রাম অনুমোদনের দিন থেকে প্রতি চার বছর পরপর অনুমোদিত সিলেবাস কমিশন প্রণীত গাইডলাইন অনুসরণ করে হালনাগাদ করা বাধ্যতামূলক। যে নিয়মটি অনেক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে মানছে না আইইউবি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো দেখভাল করেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক . বিশ্বজিৎ চন্দ। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই কমিশন অননুমোদিত প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি, পাঠদান কিংবা উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই। অননুমোদিত প্রোগ্রাম থেকে দেয়া ডিগ্রির সনদেরও কোনো বৈধতা নেই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদনবিহীন প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে এমন খবর পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় ইউজিসি। তবে শিক্ষার্থীদেরও এসব প্রোগ্রাম বিষয়ে সতর্ক সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক। তিনি বলেন, ইউজিসির ওয়েবসাইটে সবকিছু পরিষ্কার করেই বলা থাকে। তার পরও যদি কেউ অনুমোদনহীন প্রোগ্রামে ভর্তি হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে সুযোগটি ব্যবহার করে।

সিলেবাস আপগ্রেডেশন বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি তাদের সিলেবাস নিয়মিত হালনাগাদ না করে, তাহলে সেখানকার শিক্ষার্থীরাও নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন থেকে পিছিয়ে পড়বে। দুঃখজনক বিষয় হলো, কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়মিত করলেও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এজন্য দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কমিশনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাগাদা দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন