দখল-দূষণে ডোবায় পরিণত

দিয়াবাড়ি খাল উদ্ধারে উদ্যোগ নেই ডিএনসিসির

আল ফাতাহ মামুন

রাজধানীর উত্তরায় দশমিক ৩৪ মিটার দীর্ঘ দিয়াবাড়ি খালটি এখন দখল-দূষণে রীতিমতো ডোবায় পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে দিয়াবাড়ি খালে কোনো পরিচ্ছন্নতা কিংবা দখল উদ্ধার অভিযান চালায়নি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। খালের প্রায় ছয় বিঘা জমির ওপর ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) কিন্তু খাল দখল করে গড়ে ওঠা ইউনিভার্সিটি উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগই নেয়নি ডিএনসিসি। নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, খালটি দখল করে বিইউএফটি ছাড়াও উত্তরা ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হচ্ছে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ২৬টি খাল ওয়াসা থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে আরো ১৪টি খাল বুঝে পায় দুই সিটি করপোরেশন। তার পর থেকেই খাল পরিষ্কার দখলমুক্ত করতে ব্যাপক অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। তবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সর্বশেষ প্রণীত বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯ বলছে, দিয়াবাড়ি খালটি দখল করে প্রতিষ্ঠিত বিইউএফটি উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সম্প্রতি নদী রক্ষা কমিশন খাল দখলমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে বলেও জানা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, তুরাগ নদীর বাঁধের পাশঘেঁষে বয়ে চলা বাউনিয়া মৌজার অধীনে নিশাতনগর এলাকার দিয়াবাড়িতে ২০১২ সালে দেশে তৈরি পোশাক খাতে দক্ষ মানবসম্পদ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সে বছরের ১৪ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে সরকারি প্রশংসাপত্র জারি করেছিল। এর ছয়দিন পর ২০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেয়ে বিইউএফটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা করে।

ইউজিসির তথ্য বলছে, বিইউএফটির নিজস্ব জমির পরিমাণ দশমিক ৮৮ একর। নিজস্ব ভৌত অবকাঠামোর পরিমাণ পাঁচ লাখ বর্গফুট। ১০ তলা ভবনটিতে পাঁচটি অনুষদ আটটি বিভাগ নিয়ে মোট ১৫টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিইউএফটির মোট আসন সংখ্যা হাজার ৬৮০। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৯ সালে ভর্তি হয়েছেন হাজার ৩১৪ শিক্ষার্থী। বর্তমানে অধ্যয়নরত হাজার ৪৬২ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন ২০৬ জন শিক্ষক।

খাল দখল করে ইউনিভার্সিটি গড়ে ওঠার বিষয়ে নদী রক্ষা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বিইউএফটিসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান দিয়াবাড়ি খাল দখল করে রেখেছে। সম্প্রতি নদী রক্ষা কমিশন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা ওয়াসা, ডিএনসিসি ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে অবিলম্বে খাল দখল করে গড়ে ওঠা ভবন প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে খালের প্রবাহ সচল করার জন্য জোরালো ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানায়, ২০১৯ সালে বিআইডব্লিউটিএ তুরাগ তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়, বিইউএফটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দিয়াবাড়ি খাল দখল করে গড়ে উঠেছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়টি ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আরো যাচাই-বাছাই করার জন্য সময় নেয়া হয়। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা উচ্ছেদ ঠেকাতে বিভিন্ন তদবির করে কিছুদিনের জন্য উচ্ছেদ ঠেকিয়ে রাখেন। পরবর্তী সময়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র বিইউএফটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আতিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, খাল দখল করে ইউনিভার্সিটি গড়ে ওঠার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিইউএফটির কাজ শুরু হয়েছে ২০০৮ সালে। তখন আমি মেয়র ছিলাম না। কিন্তু তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। খালের জায়গায় ইউনিভার্সিটি নির্মাণের অনুমতি কে দিয়েছে? রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) অবশ্যই এজন্য জবাবদিহি করতে হবে। আমি তাদের চিঠিও দেব, কেন তারা যাচাই-বাছাই না করে অনুমতি দিল।

তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে তা ভেঙে ফেলা কঠিন। যদি ম্যাপ অনুযায়ী খালের ওপর বিইউএফটিসহ সরকারি বেসরকারি আরো কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে, তবে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেকোনো মূল্যেই ঢাকার খালগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। নয়তো নগরবাসী দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবে না।

রাজউকের চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বণিক বার্তাকে বলেন, খালের মাস্টারপ্ল্যান না দেখে মুহূর্তে সঠিকভাবে বলতে পারব না, কতটুকু দখল করে ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠেছে। তবে আমরা ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলে বিষয়গুলো যথাযথভাবে দেখি। বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারব না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউক উত্তরা জোনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক সময় একাধিক সংস্থা একটি সম্পত্তির মালিকানায় থাকতে পারে। এসব জমি নিয়েই পরবর্তী সময়ে বিরোধ শুরু হয়। কিন্তু খালের মালিকানা যে সংস্থারই থাকুক না কেন, তা দখল করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বৈধ কাজ নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন