অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান

সিইসি ও ইসি নিয়োগ আইনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতির নির্দেশে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের সুযোগ রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের মধ্যেই গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর খসড়ার অনুমোদন পায়।

পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিইসি কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, অনুসন্ধান কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। এসব পদের নিয়োগে কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। ওই ব্যক্তিদের কমপক্ষে ৫০ বছর বয়স হতে হবে। এছাড়া সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে ওই ব্যক্তিদের কমপক্ষে ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইনের অধীনে হবে কিনাএমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আশা করা যায়, আইনটি চূড়ান্ত হতে বেশি সময় লাগবে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়া আইনে অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আদালতের মাধ্যমে কেউ অপ্রকৃতিস্থ হিসেবে ঘোষিত হন, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হলে, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, নৈতিক স্খলন এবং সেক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দণ্ডিত হলে রাষ্ট্রীয় পদে থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমিশনার হতে পারবেন না।

এদিকে বৈঠকে জাতীয় লবণ নীতিমালা-২০২২-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন লবণ চাষের ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোর অনেকগুলোয় ট্র্যাডিশনাল সিস্টেম হচ্ছে, সেটার একটা মডিফিকেশন দরকার। মাতারবাড়ী, কক্সবাজার, পায়রায় বেশকিছু জায়গা ডেভেলপমেন্ট কাজে নিয়েছি। সেজন্য নতুন নতুন জায়গায় উদ্বোধন করা এবং নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে আরো প্রডাক্টিভিটি ইফেক্টিভ এবং বড় করার জন্য নীতিমালা নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২০-২৫ মেয়াদি নীতিমালা বাস্তবায়ন করলে আমরা লবণ উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করব এবং আমাদের লবণের ঘাটতি হবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২০-২৫ পর্যন্ত বার্ষিক লবণের খাতভিত্তিক চাহিদা নিরূপণ, পরিবেশবান্ধব উন্নত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, লবণচাষীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অপরিশোধিত লবণের মান মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। ঈদুল আজহার সময় চামড়াগুলো যেন সংরক্ষণ করতে পারি সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণের ব্যবস্থা করতে হবে। গুণগত মান নিশ্চিত, আয়োডিন ঘাটতিজনিত রোগ প্রতিরোধে ভোজ্য লবণে আয়োডিনের পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীদের তালিকা করতে আইন আসছে। এদের তালিকা তৈরি করে গেজেট প্রকাশের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে (জামুকা) সরকারের কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতা দিয়ে নতুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান থাকবেন। সচিব ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন। কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা নয়জনের পরিবর্তে ১১ জন করা হচ্ছে। কাউন্সিলের মহাপরিচালক যিনি থাকবেন তিনি সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে গেজেটভুক্ত সনদপ্রাপ্ত অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগসহ অন্যান্য অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপ দিয়ে মানুষ হত্যা বা তাদের অত্যাচার করেছেন, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছেন তাদের তালিকা তৈরি করে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।

এদিকে বাংলাদেশ গ্যাস, তেল খনিজ সম্পদ করপোরেশন আইন, ২০২২-এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন