সহসাই মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরছে না পাম অয়েলের বৈশ্বিক সরবরাহ

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্ববাজারে সরবরাহ চেইনের সংকট কাটছে না। উচ্চ জাহাজীকরণ ব্যয়, শ্রমিক সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা পণ্যবাজারকে বিপর্যস্ত করে রেখেছে।  অন্যান্য পণ্যের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে পাম অয়েলের বাজারও। আগামী বছরও ভোগ্যপণ্যটির সরবরাহ মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।

কৃষি বাণিজ্যবিষয়ক অন্যতম শীর্ষ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান জেমস ফ্রাই জানান, বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক দেশ মালয়েশিয়া। দেশটিতে করোনা মহামারীর পর থেকে শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এছাড়া পাম অয়েল উৎপাদনের জন্য আবহাওয়াও অনুকূলে নেই বললেই চলে। এসব কারণে দেশটিতে পাম অয়েল উৎপাদন মন্দার মধ্যে রয়েছে। এটি বৈশ্বিক উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০১৯-২২ পর্যন্ত পাম অয়েলের বৈশ্বিক সরবরাহ প্রবৃদ্ধির হার খুবই স্বল্প থাকবে বলে জানান তিনি।

জেমস ফ্রাই আরো বলেন, নেতৃস্থানীয় দেশ ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল উৎপাদন আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরও পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ মহামারীপূর্ব প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে আরো এক বছর সময় লাগবে।

এদিকে শুধু পাম অয়েলই নয়, অন্যান্য ভোজ্যতেলের সরবরাহও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সম্প্রতি খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম বেড়ে কয়েক বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ফলে তৈরি হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় খাদ্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্যের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে ভোজ্যতেল। খরা, শ্রমিক সংকট কীটপতঙ্গের আক্রমণ দেশে দেশে ভোজ্যতেল উৎপাদন খাতকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ফলে মহামারী সংকট কাটিয়ে চাহিদায় উল্লম্ফন অনুপাতে সরবরাহ বাড়ছে না।

বিভিন্ন মহাদেশের প্রধান প্রধান উৎপাদক দেশ বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে পাম অয়েল উৎপাদনে মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া, সরিষা উৎপাদনে কানাডা, সূর্যমুখী উৎপাদনে ইউক্রেন এবং সয়াবিন উৎপাদনে ব্রাজিল আমেরিকার কৃষক সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও উৎপাদন ঘাটতির কারণে জোগান দিতে পারছে না এসব দেশ। ফলে হু হু করে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম।

পাম অয়েলের বৈশ্বিক রফতানির ৩৩ শতাংশই আসে মালয়েশিয়া থেকে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটির পাম ফল উৎপাদন কমে হেক্টরপ্রতি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টন। মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের দেয়া তথ্যানুযায়ী, প্রথমার্ধে প্রতি হেক্টর জমি থেকে অপরিশোধিত পাম অয়েল (সিপিও) উৎপাদিত হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টন। অথচ গত বছরের একই সময়ে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৬০ হাজার টন।

এদিকে ক্যানোলা (এক ধরনের তেলবীজ) উৎপাদনে শীর্ষ দেশ কানাডায় খরার প্রভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শুষ্ক মাটিতেই শস্যটির আবাদ করেছেন দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) কানাডার ক্যানোলা উৎপাদন হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে। দেশটির উৎপাদন ৪২ লাখ টন কমে কোটি ৬০ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। এটি ২০১২-১৩ মৌসুমের পর সর্বনিম্ন উৎপাদন। অন্যদিকে খরার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন উৎপাদন খাতেও ধস নেমেছে। ইউএসডিএ আগস্টে দেশটির সয়াবিন উৎপাদনের পূর্বাভাস এর আগের মাসের তুলনায় ১৮ লাখ টন কমিয়ে আনে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন তেলের মজুদ কমে আট বছরের সর্বনিম্নে নেমে যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন