তীরে এসে তরী ডুবল মাহমুদউল্লাহদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্বকাপে গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হার শেষে মাঠ ছাড়েন বিমর্ষ বাংলাদেশ দলনায়ক মাহমুদউল্লাহ ছবি: ক্রিকইনফো

খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা দুই দল চলতি টি২০ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জমজমাট ম্যাচটি উপহার দিল। শারজায় গতকাল বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুর্দান্ত এক থ্রিলারে হার মানল বাংলাদেশ। ১৪৩ রানের টার্গেটে তীরে এসে তরী ডুবল মাহমুদউল্লাহদের, তারা হার মানলেন মাত্র রানে। হারে কার্যত শেষ হয়ে গেল সেমিফাইনালের আশাও। মিরাকল না হলে নিজেদের বাকি দুটি ম্যাচ জিতলেও আর শেষ চারে ওঠা সম্ভব নয়। অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দুটি তাই রূপ নিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতায়।

৪৩ বলে ৪৪ রান করে ১৯তম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন লিটন দাস। ডোয়াইন ব্রাভোকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে একেবারে সীমানার কাছে ধরা পড়েন দীর্ঘকায় জেসন হোল্ডারের হাতে। বলা যায়, এখানেই বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়।

শেষ ওভারে জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৩ রানের। বহু যুুদ্ধের সফল নায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে উইকেটে যোগ দেন তরুণ আফিফ হোসেন। লক্ষ্যটা ছোঁয়া তাই অসম্ভব ছিল না। আন্দ্রে রাসেলের প্রথম দুই বল থেকে আফিফ মাত্র তিন রান নিতে সমর্থ হন। এরপর টানা তিন বলে ডাবলস নেন মাহমুদউল্লাহ। ফলে শেষ বলে প্রয়োজন পড়ে রানের। কিন্তু বাউন্ডারি হাঁকাতে মরিয়া মাহমুদউল্লাহ অভিজ্ঞ রাসেলের শেষ বলটি খেলতে ব্যর্থ হন। অফ স্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে রাসেলের দুর্দান্ত ইয়র্কারে ব্যাট-বলের সংযোগ ঘটাতে পারলেন না বাংলাদেশ দলনায়ক। এতে রানের জয় পেয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা। হারে বিফলে যায় লিটনের অনবদ্য লড়াই মাহমুদউল্লাহর আশা দেখানো ২৪ বলে ৩১ রানের ইনিংস।

ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচে বোলিং, কি ব্যাটিংপ্রতিটি লড়াইয়ে বারবার ব্যাটন হাত ঘুরেছে। কখনো ম্যাচটি ঝুঁকে ছিল বাংলাদেশের দিকে, কখনোবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে। যদিও শেষ হাসিটা হাসল বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। রানের এই স্নায়ুক্ষয়ী জয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখল কাইরন পোলার্ডের দল। 

টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর পরিকল্পনা ছিল চাপে থাকা ক্যারিবিয়ানদের অল্প রানের মধ্যে আটকে ফেলা। ৩২ রানের মধ্যে ক্যারিবিয়ানদের উইকেট তুলে নিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করেন বোলাররা। ১০ ওভার শেষে ৪৮/, আর ১২. ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬২/৪। চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ায় কাইরন পোলার্ডের ফের নামাও অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে বুক চিতিয়ে লড়ে দলকে ১৪২ রানের পুঁজি এনে দেন নিকোলাস পুরান। তার আগে টি২০ ক্রিকেটে অভিষিক্ত রোস্টন চেজের ৪৬ বলে খেলা ৩৯ রানের শম্বুক গতির ইনিংসটিও দলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ছিল। শেষ ওভারে জেসন হোল্ডার আর পোলার্ড মিলে ১৯ রান তুলে ক্যারিবিয়ানদের সংগ্রহটা ১৪০ পার করেন। মুস্তাফিজুর রহমানের শেষ বলে মারা আহত পোলার্ডের ছক্কাটিও ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে বলাই যায়।

এমন হার শেষে হতাশ মাহমুদউল্লাহ বলেন, আমি মনে করি লিটনের উইকেটটি চূড়ান্ত ব্যবধান গড়ে দেয়, কেননা আমরা দুজনই সেট ছিলাম। ওইটা যদি ছয় হতো... আসলে দীর্ঘকায় ফিল্ডার থাকলে সুবিধাটা আপনি পাবেন। এটা স্বীকার করতে হবে যে বোলাররা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে, যদিও আমরা কয়েকটি ক্যাচ ফেলে ১০-১৫টি রান বেশি দিয়ে ফেলেছি। শেষ দিকে বলে হিট করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছি আমরা, কিন্তু এটি সেই উইকেট না যেটিতে আপনি ইচ্ছে করলেই মারতে পারবেন। ভালো লেংথে বল ফেললে মারা কঠিন ছিল।

তিনি আরো বলেন, বোলাররা দারুণ করেছে, কিন্তু ব্যাটিং ভালো হয়নি...যদিও ম্যাচটি খুব কাছাকাছি ছিল, আমরা বোলার কিংবা ব্যাটারদের দোষারোপ করতে পারি না। টি২০ ক্রিকেটে কিছু ম্যাচ আপনি জিতবেন, আর কিছু ম্যাচ হারবেন। (ক্যাচ ড্রপ) এটা নিয়ে আমাদের কাজ করা দরকার।

মুহূর্তে দারুণ সুখী মানুষ নিকোলাস পুরান। আগের দিন বলছিলেন, বাংলাদেশে লিগ খেলে তিনি তার ক্যারিবিয়ান সতীর্থরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন তা ম্যাচে কাজে লাগবে। ২২ বলে চার ছক্কায় ৪০ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়া পুরান হয়েছেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ও। পোলার্ডের ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিই নেতৃত্ব দেন ক্যারিবীয়দের। নেতৃত্বে সফল, ব্যাট হাতেও সফল।

একটু নিচের দিকে ( নম্বর) ব্যাট করা পুরান বলেন, এটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত। আমরা সবার দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করছিলাম। আমাদের ব্যাটিংটা এখনো জ্বলে উঠছে না, কাজেই সবাইকে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। একজন ক্রিকেটার ব্যাটার হিসেবে আমাকে এগিয়ে আসতে হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে আমি কঠোর পরিশ্রম করে এসেছি, কিন্তু যা চেয়েছি তা যেন আমার মতো হয়নি। অনেক সময় আমি নিজের প্রতি সুবিচার করিনি, উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছি। তবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি আর স্কিল নিয়ে কিন্তু আমি সব সময়ই ইতিবাচক।

টি২০ বিশ্বকাপে গতকাল রাতের ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার পর জিতেছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানকে হারাতে শেষ ১২ বলে ২৪ রানের প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানের। করিম জানাতের করা ১৯তম ওভারে চার-চারটি ছক্কা মেরে ওই ওভারেই জয় নিশ্চিত করেন হার্ড হিটার আসিফ আলী। বলে করা ২৫ রানের ইনিংস দিয়েই তিনি হয়েছেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়।

দুবাইয়ে গতকাল গ্রুপ-টুর ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে উইকেটে ১৪৬ রান তোলে আফগানিস্তান। অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ৩২ বলে ৩৫ গুলবাদিন নায়েব ২৫ বলে ৩৫ রান করেন। ইমাদ ওয়াসিম ২৫ রানে দুটি উইকেট নেন।

রান তাড়া করতে নেমে বাবর আজম ৪৭ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেললেও মুজিব উর রহমান (/১৪) রশিদ খানের (/২৬) ঘূর্ণি বলের মুখে মাঝপথে বিপদেই পড়ে পাকিস্তান। নিখুঁত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয় আফগানরা। যদিও শেষ মুহূর্তের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানকে উদ্ধার করেন আসিফ আলী।

এটা তিন ম্যাচে পাকিস্তানের তৃতীয় জয়। এর আগে ভারত নিউজিল্যান্ডকে হারায় বাবর আজমের দল। তিন জয়ে সেমিফাইনাল প্রায় সুনিশ্চিত করে ফেলল পাকিস্তান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন