পিপিআরসি-বিআইজিডির গবেষণা

শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে ৩০% মাধ্যমিক শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারীর কারণে দেশব্যাপী দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। এর প্রভাবে গত ছয় মাসে শিক্ষাক্ষেত্রে আরো অবনতি হয়েছে। সম্প্রতি দেশের গ্রামে এবং শহরের বস্তি এলাকায় করা এক জরিপে দেখা গেছে, কমপক্ষে ২২ শতাংশ প্রাথমিক এবং ৩০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল বন্ধ থাকায় লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ২০২১ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষাজীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে তা জানা। গতকাল পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান . হোসেন জিল্লুর রহমান বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক . ইমরান মতিন এক ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন।

. হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, করোনায় আর্থিক ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো মানবসম্পদের সংকটও গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্বাসন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ব্যতিরেকে শুধু স্কুল খুললে লার্নিং লস এবং ঝরে পড়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করা যাবে না। অন্যদিকে . ইমরান মতিন মনে করেন, শিক্ষা খাতে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা দরকার। একই সঙ্গে খাতে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তার বাস্তবায়নযোগ্য সমাধানও প্রয়োজন। লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতি এবং মানসিক চাপ প্রতিরোধ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনকার অবস্থাকে জরুরি হিসেবে না দেখলে দীর্ঘমেয়াদে আগামী বছরগুলোর উন্নয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

জরিপের তথ্য মতে, অনেক শিক্ষার্থী নিজে নিজেই পড়াশোনা করে, কেউ কেউ অনিয়মিতভাবে পড়াশোনা করে অথবা একেবারেই পড়াশোনা করে না। গবেষকদের মতে, এমন শিক্ষার্থীরাই আছে শিখন ঘাটতি বা লার্নিং লসের ঝুঁকিতে। গ্রাম শহুরে বস্তি এলাকায় চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিখন ঘাটতি বা লার্নিং লসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতির প্রবণতা আবার মাধ্যমিকে পড়ুয়া কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। মার্চে তাদের মধ্যে ঝুঁকি ২৬ শতাংশে থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে ৩৪ শতাংশে দাঁড়ায়।

এতে আরো জানানো হয়, দূরশিক্ষণের মূল উপায় হলো টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস এবং অনলাইন সরাসরি অনলাইন ক্লাস। তবে এসব ক্লাসে থাকার সুযোগ খুব কম শিক্ষার্থীরই হয়েছে। প্রাথমিকে পড়ুয়া ৫৬ এবং মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মার্চে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেও কিংবা কোচিং করলেও আগস্টে সেই হার কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৮ এবং ৪৩ শতাংশে। আগের মতো সবকিছু চালু হওয়ায় জীবিকার তাগিদে কাজে যোগ দেয়ার কারণে মার্চের তুলনায় পরবর্তী সময়ে শিক্ষা খাতে পরিবার থেকে সহায়তার হারও কমেছে। বিশেষত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই এর ভুক্তভোগী। অবশ্য আগস্টে সরাসরি যোগাযোগ করে বা সরাসরি যোগাযোগ না করে দুই পদ্ধতির মিশ্রণে অ্যাসাইনমেন্ট করার ব্যাপারটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। আগস্টে ১৮ শতাংশ প্রাথমিক ৩৮ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সুবিধা পেয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ তেমন না থাকলেও  অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার সময় যোগাযোগ হতো।

দূরশিক্ষণের মূল উপায় হলো টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস এবং অনলাইন সরাসরি অনলাইন ক্লাস। তবে এসব ক্লাসে থাকার সুযোগ খুব কম শিক্ষার্থীরই হয়েছে। প্রাথমিকে পড়ুয়া ৫৬ এবং মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মার্চে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেও কিংবা কোচিং করলেও আগস্টে সেই হার কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৮ ৪৩ শতাংশে।

পিপিআরসি-বিআইজিডির গবেষণায় দেখা গেছে, শিখন ঘাটতি বা লার্নিং লসের এই সমস্যার পেছনে আর্থসামাজিক অসমতার একটি ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় প্রথমে একজন শিক্ষার্থীর লার্নিং লসের সঙ্গে তার মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার সম্পর্ক দেখা হয়। যেমন যে মায়েরা কখনও স্কুলে যাননি, তাদের সন্তানরা শিক্ষিত মায়েদের সন্তানদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। গৃহশিক্ষক কিংবা কোচিং সুবিধা করোনা মহামারীর আগেও পেয়েছে, এমন শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মহামারী চলাকালীনও সেই সুযোগ পেয়েছে। গ্রামে ৪৪ শতাংশ পরিবারে এবং শহরের বস্তিতে ৩৬ শতাংশ পরিবারে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে উপকরণ দরকার, তার ব্যবস্থা নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন