বাংলাদেশ সরকার দেশের খাদ্যঘাটতি পূরণে কৃষি উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। প্রতি কৃষি মৌসুমে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের কৃষি উপকরণ বিতরণ, প্রণোদনা প্রদানসহ নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা করছে সরকার। কিন্তু ধানের আবাদ ও উৎপাদনে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চল হাঁটছে উল্টো দিকে। চলতি আউশ মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর আবাদ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমে গেছে। অন্যদিকে আমন মৌমুমে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও বছরের ব্যবধানে আবাদ কমেছে দুই হাজার হেক্টর।
কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে আউশের ব্যর্থতা ঢাকার বড় সুযোগ ছিল আমনের আবাদ বাড়ানোর মাধ্যমে। কিন্তু সেটা করা সম্ভব হয়নি। আবাদ কম হওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আমন ধান উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে বড় কোনো সুসংবাদ নেই বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলায় চলতি মৌসুমে মোট ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উফশী ৪ লাখ ৮৮ হাজার ২২৯, স্থানীয় ৭৩ হাজার ৭৫ ও হাইব্রিড জাতের আমন ধান আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৫১৬ হেক্টর। গত অর্থবছরের তুলনায় এ কৃষি অঞ্চলে আবাদ কম হয়েছে ১ হাজার ৬৫৩ হেক্টর।
জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় তিন জাতের আমনের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৭১ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী জাতের ধান আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর। গত বছর এ জেলায় আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩১৯ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় আমনের আবাদ কমেছে ২ হাজার ৬৪৮ হেক্টর।
কক্সবাজার জেলায় চলতি মৌসুমে তিন জাতের আমন আবাদ হয়েছে ৭৮ লাখ ৯২৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের আমন আবাদ হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৭১ হেক্টরে। গত মৌসুমে এ জেলায় আবাদ হয়েছিল ৭৯ হাজার ১০৮ হেক্টর জমিতে। বছরের ব্যবধানে আবাদ কমেছে ৮৩ হেক্টর জমি। ফেনী জেলায় তিন জাতের আমন আবাদ হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী ৬০ হাজার ২৫২ হেক্টর। গত মৌসুমে এ জেলায় আবাদ হয়েছিল ৬৬ হাজার ৫২৫ হেক্টরে।
নোয়াখালী জেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৬ হেক্টর, স্থানীয় ৩২ হাজার ১১০ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৩৩ হেক্টর। গত বছর এ জেলায় আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৫ হেক্টর। বছরের ব্যবধানে এ জেলায় আবাদ বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪ হেক্টর। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর জেলায় মোট ৮১ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৮৩ হাজার ৭৪৫ হেক্টর। প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর আবাদ বেড়েছে এ জেলায়।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত মৌসুমে আমন আবাদ ও উৎপাদন চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেকর্ড করেছিল। সেই ধারায় চলতি বছর আবাদ আরো বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের ধারায় আমন আবাদের পরিমাণ বাড়ানো যায়নি। তবে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নতমানের সারের ব্যবহার, ক্ষতিকারক পোকা দমনে কৃষকদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে। এ কারণে আমরা হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছি। কারণ জনসংখ্যার চাপ, শিল্প-কারখানার বিপ্লবের কারণে কৃষিজমি প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে, যা কৃষির জন্য হুমকি।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনজুরুল হুদা বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি মৌসুমে আউশ উৎপাদন কমে গেছে। তবে আমন আবাদও কমে গেছে এটা সত্য নয়। আমরা হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এবার আমন উৎপাদন গত মৌসুম থেকে বেশি হবে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের সময়মতো বীজ, সার পৌঁছে দেয়া, পোকামাকড় দমনে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
