ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়েক বছর ধরেই দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে -কমার্স খাত। যখন খাতটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেছে ঠিক সে সময়ই ইভ্যালি, -অরেঞ্জসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় গ্রাহকদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাতের ওপর আস্থা ধরে রাখতে ডিজিটাল -কমার্স অ্যাক্ট নামে একটি স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন করে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী গতকাল -সংক্রান্ত একটি যুগোপযোগী আইন শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ করতে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে কমিটির কথা জানানো হয়েছে।

কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে ডিজিটাল কমার্স খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দুই মাসের মধ্যে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ করার উপযোগী একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। সময়ের মধ্যে কমিটিকে ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষের কাঠামো কার্যপ্রণালি তৈরি করতে হবে।

অফিস আদেশে বলা হয়, ডিজিটাল কমার্সের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ২২ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্রমবিকাশমান খাতটি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী আইন শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এএইচএম সফিকুজ্জামানকে কমিটির অহ্বায়ক উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

কমিটিতে আরো থাকবেন তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ সংসদবিষয়ক বিভাগের প্রতিনিধি, ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের প্রতিনিধি, এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি, এটুআইয়ের প্রতিনিধি, -কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, বেসিসের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিবুল আলম। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অফিস আদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। ওইসব সংস্থা তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত -কমার্স ব্যবসায় সাম্প্রতিক সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা এবিষয়ক নীতিনির্ধারণী সভা থেকেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপস্থিত থেকে মতামত দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী . হাসান মাহমুদ এবং আইন, বিচার সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

সময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি অনুবিভাগ) এএসএম সফিকুজ্জামান, ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান, উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ আলীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে আলোচনার বিভিন্ন বিষয় এবং থেকে উঠে আসা সুপারিশ সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন বাণিজ্য সচিব।

বাণিজ্য সচিব জানান, সভায় -কমার্স খাতের সুষ্ঠু পরিচালনায় একটি আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা রেগুলেটরি বডি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রতারণা বন্ধে এবং প্রতারণা সংঘটিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিজিটাল -কমার্স অ্যাক্ট নামে একটি স্বতন্ত্র আইন করা হবে। এছাড়া -কমার্স ব্যবসার বিভিন্ন দিক থেকে আসা অভিযোগ গ্রহণ তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ব্যবস্থাপনা রাখা বা সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দাঁড় করানো হবে। এরই মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিষয়ে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে -কমার্স খাতের সঙ্গে দুটো আইনের সামঞ্জস্য রাখতে আইনের কয়েকটি জায়গায় সংশোধনী আনতে হবে, যার কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে। এছাড়া নিবন্ধন ছাড়া কোনো -কমার্স প্রতিষ্ঠান এখন থেকে আর ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন