৪১৫ প্রতিষ্ঠানকে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে শুল্ক সুবিধার আওতায় বেসরকারিভাবে প্রায় আট লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সে সুবিধায় ৪১৫ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেদ্ধ নন-বাসমতি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার টন আতপ লাখ ১০ হাজার টন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ১২ আগস্ট চাল আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে এনবিআর। সুবিধা আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। ছাড়কৃত শুল্কহারে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নেয়ার শেষ দিন গতকালও লাখ হাজার টন সেদ্ধ আতপ চাল আমদানির জন্য ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। গতকাল প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আমদানির জন্য বরাদ্দ দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে চাল বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। পাইকারি খুচরা বাজারে চালের দামও কমতে শুরু করেছে।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্ব্বর বেসরকারিভাবে আমদানি করা চালের শুল্ক কমাতে প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিয়েছিলেন। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্কহার কমিয়ে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি উন্মুক্ত করার ঘোষণার দিন’—সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর শুল্কহার ৬২ দশমিক থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে সে সময় চাল আমদানি নিয়ন্ত্রিতভাবে করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। শর্ত উদ্দেশ্যর বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈধ আমদানিকারকরা বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারির মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন। পরবর্তী সময়ে একটা নীতিমালার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল আমদানির অনুমতি দেবে। নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট চাল গম আমদানি হয়েছে ৬৬ লাখ ৫৬ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টন। তার আগের অর্থবছরে মোট চাল আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র হাজার ১৮০ টন, যার পুরোটাই বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়। অর্থবছরে সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। কিন্তু গত অর্থবছরে সরকারিভাবে লাখ ৭০ হাজার ৫৩০ টন বেসরকারিভাবে লাখ ৮৫ হাজার ৮২০ টন চাল আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের ১১ মাসে প্রায় হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার চাল আমদানি হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো। গত মৌসুমে ২০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। মূলত মিল মালিকরা সংগ্রহ মৌসুমে চাল না দেয়ার কারণে সংকট তৈরি হয়। সে সময়ে তারা সরকার নির্ধারিত দামে চাল না দিয়ে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। এছাড়া আমন মৌসুমে সাড়ে আট লাখ টন ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বোরো আমন মৌসুমে গড়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় সরকারের মজুদ সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে আসে। এক পর্যায়ে চালের মজুদ পাঁচ লাখ টনের নিচে নেমে আসে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কয়েক ধাপে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ আগস্ট ৪১ প্রতিষ্ঠানকে লাখ ১০ হাজার টন, ১৮ আগস্ট ৬৯ প্রতিষ্ঠানকে লাখ ১৮ হাজার, ২১ আগস্ট ৯১ প্রতিষ্ঠানকে লাখ ৯১ হাজার, ২২ আগস্ট ৭৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে লাখ ২২ হাজার টন সেদ্ধ আতপ, ২৩ আগস্ট ৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৯৪ হাজার টন সেদ্ধ আতপ এবং ২৪ আগস্ট ৩৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৫৭ হাজার টন সেদ্ধ আতপ চাল আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়। তবে চূড়ান্তভাবে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হলেও চুক্তি তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। এক্ষেত্রে মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়লেও মোট আমদানির পরিমাণ ঠিক রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, চাল আমদানির ক্ষেত্রে বেশকিছু শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে আমদানি করা চালে সর্বোচ্চ শতাংশ ভাঙা দানা থাকতে পারবে। বরাদ্দ আদেশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খুলতে হবে এবং -সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে -মেইলে তাত্ক্ষণিকভাবে জানাতে হবে। বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে। বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু/জারি করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নামে ফের প্যাকেটজাত করা যাবে না। এছাড়া প্লাস্টিকের বস্তায় আমদানি করা চাল বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন