বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত

তিন সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে ইভ্যালির দায়দেনার তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনি নোটিসের জবাব দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ছয় মাস সময় চেয়েছিল -কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। তবে মার্চেন্টদের কাছে দায়ের তথ্য দিতে ইভ্যালিকে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ সময় দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর কথা জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান।

বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিন সপ্তাহ সময়ের বিভাজন করা হয়েছে তিনভাবে। ক্রেতাদের কাছে ইভ্যালির দায় কত, তা জানাতে হবে সাতদিনের মধ্যে; মার্চেন্টদের কাছে দায় কত, তা জানাতে হবে তিন সপ্তাহের মধ্যে; আর সম্পদ দায় কত আছে, তা জানাতে হবে তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে।

ইভ্যালিকে মূল্য পরিশোধ করেও যারা পণ্য পাননি কিংবা অন্য অভিযোগ রয়েছে, তাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, যদি কোনো কাস্টমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন বা প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করেন, তাহলে তার উচিত হবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মামলা করা। তাহলে আমরা সিগন্যাল পাব, কী পরিমাণ কাস্টমার প্রতারিত হচ্ছেন এবং কী ধরনের সমস্যা, কী ধরনের লায়াবিলিটিজ তৈরি হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে ইভ্যালি নিয়ে এরই মধ্যে হাজার ৭৫৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হাজার ১৪৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে হাজার ৬১২টি মামলা।

পণ্য উৎপাদন কিংবা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের ইভ্যালি থেকে পাওনার বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, যেসব মার্চেন্ট তাদের পণ্য দিয়েছে, তারা যদি নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পেয়ে থাকে, তাহলে তাদেরও উচিত হবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক বলেন, ইভ্যালিকে যে সময় দেয়া হয়েছে, জবাব দিতে তার চেয়ে বেশি সময় লাগার কথা নয়। এবারো যথাসময়ে তথ্য না দিলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, সময় চাইলে আইনানুযায়ী সময় দিতে হয়। এবার ব্যর্থ হলে কী হবে, তা পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ ইভ্যালি ডটকমের মোট সম্পদ ছিল ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ছিল ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ হাজার ৫৬০ টাকা মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। সেই প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুদকে পাঠিয়ে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদককে অনুরোধ করা হয়।

গ্রাহক মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৯ জুলাই ইভ্যালির কাছে চিঠি দিয়ে কোম্পানিটির ব্যবসার ধরন, সম্পদ দায়, গ্রাহকের দেনা, মার্চেন্টদের কাছে দেনাসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগস্ট এসব তথ্য দেয়ার কথা থাকলেও ইভ্যালি তা দিতে পারেনি।

নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে হিসাব দিতে ছয় মাস সময় চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় ইভ্যালি। সময় বাড়ানোর বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি কেউ নির্দিষ্ট সময়ে কোনো হিসাব দিতে না পেরে সময় চাইলে তাকে সময় দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই সবকিছু বিবেচনায় আমরা তাদের আরো তিন সপ্তাহ বা ২১ দিন সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল হয়তো -সংক্রান্ত নোটিস ইভ্যালির কাছে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন