ঈদুল আজহার ছুটির পর গতকাল সূচক ও লেনদেনের ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে দেশের পুুঁজিবাজারে। এদিন দেশের উভয় পুঁজিবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, মুনাফা করার মনোভাব নিয়ে জুন সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করে চলেছেন। তাই লকডাউনে বাজার সীমিত পরিসরে লেনদেনেও ঊর্ধ্বমুখী অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে সূচক ও লেনদেন বাড়লেও গতকাল উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটদর কমেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাভবান হওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে জুনে সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশকে কেন্দ্র করে যেসব কোম্পানি ভালো করতে পারে সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন। এতে কোম্পানিগুলো মুনাফায় থাকলে তার শেয়ারে এর প্রভাব পড়বে এবং শেয়ারদর বাড়বে। যেসব বিনিয়োগকারী মুনাফায় থাকা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন তারা শেয়ারদর বাড়ার মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেইন করবেন। তাই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। লেনদেনের কিছু সময় পরেই সূচকের পতন ঘটে। পরে আবার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় ফেরে সূচক। সারা দিন উত্থান ও পতনের মাধ্যমে দিনশেষে সূচকের উত্থান দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৯ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪২৪ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের কার্যদিবসে ছিল ৬ হাজার ৪০৫ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, জিপিএইচ ইস্পাত, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, বিএসআরএম লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড ও অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালের।
এদিকে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ৬ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৩৮৭ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ১৪ দশমিক ০৯ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ২ হাজার ৩৩৬ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৩২২ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫৪ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর আগের কর্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১১৬টির, কমেছে ২৩৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২২টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ দখলে নিয়েছে প্রকৌশল খাত। ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। আর ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সাধারণ বীমা খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল সাইফ পাওয়ারটেক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিডি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ফু-ওয়াং সিরামিক, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, জিপিএইচ ইস্পাত, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ৬৯ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ২১৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ১৪৭ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩০৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫টির, কমেছে ১৭৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২২টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৪০ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০০ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৪৪ কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৭ টাকার।
