বন্ধের ৫ বছর পরও কার্যক্রম চালাচ্ছে দারুল ইহসান!

সাইফ সুজন

সনদ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৬ সালে আদালতের নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও বন্ধ করে দেয়ার পাঁচ বছর পরও দারুল ইহসানের নামে ওয়েবসাইট অফিস খুলে চলছে সনদ জালিয়াতিসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এলে দারুল ইহসানের ওয়েবসাইট কার্যালয় বন্ধসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, ২০১৬ সালে আদালতের নির্দেশনার আলোকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দারুল ইহসানের নানা অনিয়ম তদন্ত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিশন সনদ বাতিলের সুপারিশ করেছিল।

যদিও বন্ধ করার পরও একটি চক্র দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সনদ বাণিজ্য চলমান রাখে। কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবৈধ কার্যক্রম নিয়ে তথ্য পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় কমিশন।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বলেন, আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার। যদিও এক বা একাধিক চক্র বন্ধ করে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সনদ বাণিজ্যসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ আসে কমিশনে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে দুটি ওয়েবসাইটও সচল থাকার তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

ইউজিসির চিঠি আমলে নিয়ে বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দারুল ইহসানের নামে সনদ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকায় কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৪ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বন্ধ হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অফিস, ওয়েবসাইট, স্থায়ী ক্যাম্পাস, পদ-পদবি ব্যবহার করে সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ স্থাপিত সব অফিস বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এছাড়া এসব অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়দানকারী মো. মেহেদী হাসান রাসেল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পরিচয়দানকারী মুহাম্মদ গনী আউটার ক্যাম্পাস পরিচয়দানকারী মাহমুদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও চিঠিতে বলা হয়।

পাশাপাশি দারুল ইহসানের নামে সচল দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার জন্যও পৃথক একটি চিঠি ইস্যু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৩ জুন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশে এক বা একাধিক চক্র বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন্দ্র করে ওয়েবসাইট চালু করে এখনো সার্টিফিকেট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে মর্মে ইউজিসি বিভাগকে জানিয়েছে। অবস্থায় বন্ধকৃত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে উল্লিখিত ওয়েবসাইট (.িফরঁ-ধপ-নফ.পড়স .িফরঁ-বফঁনফ.পড়স) দুটি বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বণিক বার্তাকে বলেন, বন্ধ করে দেয়ার পর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন