সীমান্তের ৩ বিভাগে সরকারি আইসিইউ মাত্র ৯৩টি

জেসমিন মলি

কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নাম নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা আইসিইউ শয্যা। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বারবারই বলা হয়েছে যে দেশে আইসিইউ শয্যার অভাব রয়েছে। গত মার্চে সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হওয়ার পর আবার আলোচনায় আসে বিষয়টি। বর্তমানে করোনার ভারতীয় ধরন প্রবেশের কারণে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বেড়েছে সংক্রমণ মৃত্যুর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, তিন বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা মাত্র ৯৩।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির গত বৈঠকে কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সারা দেশে কতটি আইসিইউ রয়েছে তা জানাতে সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সংসদীয় কমিটির গতকালের বৈঠকে একটি প্রতিবেদন দেয় মন্ত্রণালয়। সে প্রতিবেদনেই সারা দেশের আইসিইউ অবকাঠামোর নাজুক অবস্থার কথা উঠে আসে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিডের চিকিৎসার জন্য সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে মোট হাজার ১২৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৬৫৯টি বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৪৬৬টি। ঢাকা মহানগর ছাড়া ২১ জেলায় আইসিইউ রয়েছে। যদিও পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট জেলায় আইসিইউ শয্যা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সীমান্ত সংলগ্ন রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ৪১টি, খুলনা বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ২৬টি রংপুর বিভাগের হাসপাতালগুলোতে রয়েছে ২৬টি। সব মিলিয়ে তিন বিভাগে সংখ্যা শতকও পূরণ হয় না। অথচ গত মে দেশে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সীমান্তের বিভাগগুলোতে ক্রমেই বেড়েছে সংক্রমণ মৃতের সংখ্যা।

বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মাদ খুরশীদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকার হাসপাতালগুলোতে জনবল বাড়ানো হচ্ছে। সংক্রমণ বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও বাড়ানো হয়েছে। আইসিইউ শয্যাও যথাসম্ভব বাড়ানো হয়েছে। তবে খুব স্বল্প সময়ে আসলে আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া আইসিইউ পরিচালনার জন্য বিশেষায়িত দক্ষ জনবল প্রয়োজন হয়। চাইলেই দক্ষ জনবল গড়ে তোলা সম্ভব নয়, এজন্য সময় প্রয়োজন।

অন্যদিকে গত মার্চে সংকটাপন্ন কভিড রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে জরুরি যন্ত্রপাতির সংকটে পড়েন দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা। সে সময় আট বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কাছ থেকে পাওয়া যন্ত্রপাতির চাহিদার সমন্বয় করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর সমন্বিত চাহিদাপত্রটি ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই চাহিদার কোনো উপকরণ কিনতে ক্রয় আদেশই দেয়া হয়নি। চাহিদাপত্রে অন্য যন্ত্রপাতির পাশাপাশি ৯৩৭টি মনিটরসহ আইসিইউ শয্যার কথাও উল্লেখ আছে।

স্বাস্থ্যসেবা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে কভিড-১৯ চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আইসিইউ সেবা পরিচালনা করার জন্য চিকিৎসক নার্সেরও সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময় সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হলেও তা পূরণ হয়নি। করোনা মহামারীর সময় এসব সংকট আরো বড় আকারে সামনে চলে এসেছে।

করোনা বিষয়ে সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থাপনা ভালো করতে পারেনি। বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে পারে। আইসিইউ রোগীদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হলেও তা এখন মহার্ঘ্যে পরিণত হয়েছে। আইসিইউ সংকটের কারণে মৃত্যুসংখ্যা বাড়তে পারে। জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নেও সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে না।

এর আগে করোনা মহামারী শুরু হলে তা মোকাবেলায় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে দেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেজন্য জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ স্থাপনের অবকাঠামো আছে কিনা তা যাচাইয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়। যাচাই শেষে গণপূর্ত অধিদপ্তর গত বছরের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একটি চিঠিতে জানায় দেশের বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের অবকাঠামো না থাকার কথা। অবকাঠামোগত যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তার প্রধান হলো বেশির ভাগ জেলা হাসপাতাল ভবনগুলো পুরনো। সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন বসানো যাবে না। সংক্রমণ প্রতিরোধী যে ব্যবস্থা নিতে হয়, কাঠামোগত কারণে তাও নেয়া যাবে না। পুরনো ভবনগুলো অনেক আগে নির্মাণ করায় আইসিইউর কথা তখন চিন্তা করা হয়নি। সে কারণে এখন চাইলেও এসব ভবনে আইসিইউ ইউনিট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনা মোকাবেলায় জেলা পর্যায়ের সরকারি চিকিৎসা সেবা উন্নত করার লক্ষ্যে নেয়া কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। প্রকল্পের আওতায় টিকা কেনা, জেলা হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ১০ শয্যার আইসিইউ ২০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট স্থাপনের কথা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন