বর্তমান বৈশ্বিক বাজারে সফল ও প্রতিযোগী রফতানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য বৈদেশিক বাজারের মানসংক্রান্ত কঠোর শর্তাবলি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) রফতানি খাতের সব পণ্যের মান ঠিক করে দিতে হবে। পণ্যের মানোন্নয়ন ও অ্যাক্রেডিটেশন নিশ্চিত করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক মান নিশ্চিত করতে পরীক্ষার সরঞ্জাম ও ল্যাব সুবিধার মান বাড়ানো প্রয়োজন।
আইএফসি-বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহায়তায় বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) আয়োজিত ‘আইডেন্টিফাইং দ্য চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড মেজারিং গ্যাপস অব প্রেজেন্ট স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন ক্যাপাবিলিটি ইন বাংলাদেশ ফর এক্সপোর্ট পটেনশিয়াল প্রডাক্টস’
শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপ থেকে গতকাল এসব কথা বলেন বক্তারা।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগমের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ প্রমুখ অংশ নেন। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সার্কের আওতাধীন সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশনের সাবেক মহাপরিচালক ড. সৈয়দ হুমায়ুন কবির।
সংলাপে বিএসটিআই মহাপরিচালক বলেন, বেশকিছু খাতের জন্য সঠিক টেস্টিং ও স্ট্যান্ডার্ডস সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করতে নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বিএসটিআই। পণ্যের স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন ও সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য ৯০টি ল্যাবরেটরি স্থাপনে এবং আরো ১০টি জেলায় লজিস্টিকস অবকাঠামো নির্মাণ করতে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শিগগির এ প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিল্ডের সিইও বলেন, বৈদেশিক বাজারের চাহিদা মেটাতে স্ট্যান্ডার্ডে নির্ধারিত টেকনিক্যাল রেগুলেশন বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্ধারিত টেকনিক্যাল রেগুলেশন সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মূল প্রবন্ধে ড. সৈয়দ হুমায়ুন কবির সম্ভাব্য রফতানি পণ্যের (পিইপি) স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এসব পণ্যের বর্তমান বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ডে যেসব ঘাটতি রয়েছে, তা তিনি তুলে ধরেন এবং প্লাস্টিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশলসহ বেশ কিছুসংখ্যক পণ্যের আন্তর্জাতিক মান বিষয়ে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ছয়টি বিভাগীয় ও ৭৬টি টেকনিক্যাল কমিটির ঐকমত্যের মাধ্যমে ৩ হাজার ৯৫০টি স্ট্যান্ডার্ড উন্নয়ন করা হয়েছে। ব্যবহারকারী ও ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী এসব স্ট্যান্ডার্ড উন্নয়ন করা হয়েছে। কিছুসংখ্যক পিইপির বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড রয়েছে। কিছুসংখ্যক পিইপির তা নেই। সব পিইপির জন্য, বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল খাতের জন্য বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তুতকরণ ও হালনাগাদ করা জরুরি।
বিপিজিএমইএ সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, খেলনা, গৃহস্থালির আসবাব, ব্যাগ, বস্তা ইত্যাদি প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক রফতানি সম্ভাবনা রয়েছে। এসব পণ্যের রফতানি বাড়াতে হলে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। রফতানি বাজার সম্প্রসারিত করতে অন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিএসটিআইকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিইআইওএ) সভাপতি মো. আবদুল রাজ্জাক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. অলোক কুমার মজুমদার, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতিনিধি মো. তৌহিদুর রহমান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিনিধি মো. সালাহউদ্দিন, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের প্রতিনিধি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) নির্বাহী পরিচালক কাজী রওশন আরা সুমি, লেদার টেকনোলজিস্ট সিকদার আবু নাসের, বিএসটিআইয়ের পরিচালক নিলুফা হক, বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ হোসনা ফেরদৌস সুমি বক্তব্য রাখেন।