কৃষিতে বিস্ময়কর সাফল্যের কারণ গবেষণা ও তার ফল যথাসময়ে মাঠে প্রয়োগ

. মো. তোফাজ্জল ইসলাম ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতিও। সম্প্রতি স্পেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমাগো কর্তৃক বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকায় বাংলাদেশের ২৮টি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও উঠে এসেছে। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথমে আছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে দেশসেরা হওয়ার অনুভূতি এবং ভবিষ্যতের অগ্রগতি নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আব্দুল মান্নান

সিমাগো বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে, কেমন লাগছে?

স্পেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিমাগো কর্তৃক প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রথম স্থানে দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছি। তবে আরো বেশি আনন্দিত হয়েছি যখন দেখেছি দেশের গণমাধ্যমগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে সংবাদটি প্রকাশ করেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করলেও এখন পর্যন্ত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করতে পারিনি। অথচ অনেক উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ প্রতি বছর তালিকা প্রকাশ করে এবং সে অনুযায়ী সরকারি বরাদ্দ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। বশেমুরকৃবি মূলত গবেষণা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে, যেটা আমি সিমাগো র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি। বিশেষ করে আমার নিজের গবেষণার ক্ষেত্র প্রাণরসায়ন, জেনেটিকস এবং অনুপ্রাণ বিজ্ঞানে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বশেমুরকৃবি প্রথম স্থান অর্জন করেছে। গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়টি ইপসা থাকাকালীন সময় থেকেই এমএস পিএইচডি প্রোগ্রামকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের কয়েকজন গবেষক শিক্ষকতা করছেন। এছাড়া ল্যাব মাঠ গবেষণা অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক কোলাবরেশনের মাধ্যমে স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রগামী ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ২০১৬ সালে দেশের আটটি জেলায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া গমের ব্লাস্ট রোগের উত্পত্তিস্থল নির্ণয়ে অত্যাধুনিক জিনোম প্রযুক্তি ব্যবহার এবং চারটি মহাদেশের ৩১ জন বিজ্ঞানীকে সম্পৃক্ত করে, যার নজির দেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। যদিও গবেষণা সামগ্রিকভাবে বশেমুরকৃবি দেশে চ্যাম্পিয়ন, তবে সামাজিক ক্ষেত্র এবং উদ্ভাবনে প্রথম হয়েছে, ঢাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আর একটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য, আয়তনে অন্যান্য বিবেচনায় বশেমুরকৃবি একটি ছোট বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯০ একরের ক্যাম্পাসে প্রায় হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী এবং দুই শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। তবে এটি সম্পূর্ণ আবাসিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা আমেরিকান কোর্স-ক্রেডিট সিস্টেমে একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে পরিচালিত হয়। সিমাগো যেহেতু প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং প্রকাশ করে. তাই স্থানটি ধরে রাখতে চাইলে বশেমুরকৃবি কর্তৃপক্ষকে গবেষণায় আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।  শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। গবেষণা কাজে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রচলন করা গেলে গবেষণায় আরো গতিশীলতা বাড়বে।

 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাইভেটের তুলনায় র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকছে, এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পদোন্নতি প্রদানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রকাশনা এবং বিভাগীয় বা জাতীয় পর্যায়ের জার্নালে প্রকাশিত প্রকাশনার মধ্যে মূল্যায়নে কোনো পার্থক্য নেই। এমনকি একটি গবেষণা প্রকাশনায় একজন শিক্ষকের যেকোনো স্থানে নাম থাকলেই হয়। এছাড়া গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি বা কোনো মূল্যায়নের প্রচলন নেই। কারণে শিক্ষকদের মধ্যে ইম্প্যাক্টফুল কোনো গবেষণা কাজে প্রতিযোগিতা দেখা যায় না। অথচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় গবেষণার মানকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। ফলে অবকাঠামোগত এবং সুযোগ-সুবিধায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে থাকলেও গবেষণা র্যাংকিংয়ে দিন দিন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যাচ্ছে। ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে সামনের সারিতে চলে আসবে।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলকাজ হচ্ছে জ্ঞানসৃজন, জ্ঞান সংরক্ষণ এবং জ্ঞানের বিতরণ করা, কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক গ্যাপ রয়েছে। তিনটি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে গতিশীলতা আনতে চাইলে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং হওয়া জরুরি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় প্রতিটি বিষয়ে র্যাংকিং করা এখন সময়ের দাবি। প্রতি বছর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, গবেষক এবং প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হলে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা প্রত্যেকের মধ্যে কাজ করবে। ফলে গবেষণা কাজে মানোন্নয়ন একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখা যায় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে গবেষণা কাজের অবদানকে মুখ্য বিবেচনায় নেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এক্ষেত্রে তুলনামূলক কম গুরুত্ব দেয়া হয় এবং রাজনৈতিক বিষয়কে মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা কি এক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারি না? উচ্চশিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে উপাচার্য নিয়োগে বিশ্বমানের ধারা প্রচলিত হোক। পৃথিবীর সব দেশেই ধারা প্রচলিত এবং সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং সম্মানের পেশা।

 

র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী কী করণীয় আছে বলে মনে করেন?

যদিও আমরা আলোচনা করেছি যে দেশের মধ্যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন র্যাংকিংয়ে আছে কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সিমাগো র্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। আমরা জানি, জ্ঞাননির্ভর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যুগে একটি দেশের সমৃদ্ধি সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাংকিং মানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সিমাগো র্যাংকিয়ে প্রথম ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা রাষ্ট্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি। এরা অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী। আমাদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সোনার বাংলায় বাস্তবায়নে চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিশ্বমানের শিক্ষা এবং গবেষণা। সেজন্য যথাযথ পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে আশু ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক গবেষককে বিবেচনা করতে হবে। গবেষণার ভৌত অবকাঠামো সৃষ্টি, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষকদের পর্যাপ্ত গবেষণা বরাদ্দ প্রদান, আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশন, স্বীকৃতি প্রদান এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ জোরদার করতে হবে। সর্বোপরি, একটি নিয়মিত স্বচ্ছ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু করা গেলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচিরেই বিশ্ব র্যাংকিংয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অপরাজনীতি এবং যেকোনো অনিয়মের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষা পদ্ধতিও বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।

 

র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার জন্য আমাদের শিক্ষকদের বা সরকারের কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেয়া উচিত?

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাংকিংয়ে ভালো স্থান অর্জনের জন্য গবেষণায় জোর দিতে হবে। তাহলে আমাদের গবেষণা বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জার্নালে তাদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করতে হবে। গবেষণালব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন নতুন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে। নতুন প্রযুক্তি যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একমাত্র সোপান। আমাদের গবেষকদের মেধা দক্ষতা আছে। গবেষণার জন্য অনুকূল প্রতিবেশ তৈরি এবং বরাদ্দ বৃদ্ধি করা গেলে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভালো করা সম্ভব হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। গবেষণায় বিনিয়োগ খুবই লাভজনক। এটি সর্বত্র স্বীকৃত। আমাদের দেশে কৃষিতে বিস্ময়কর সাফল্যের মূল কারণ ব্যাপক গবেষণা এবং গবেষণার ফলাফল যথাসময়ে মাঠে প্রয়োগ। কৃষির ন্যায় অন্যান্য বিষয়েও দেশের প্রয়োজনের নিরিখে বিশ্বমানের গবেষণা প্রয়োজন। সেজন্য অন্যান্য দেশের ন্যায় জাতীয় আয়ের - শতাংশ গবেষণায় বিনিয়োগ করা দরকার।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বিশ্বমানের করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা নির্মাণে ইদানীং শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে কিন্তু এসব প্রকল্পে গবেষণা অবকাঠামো তৈরি, উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক গবেষণার কোনো টাকা নেই বললেই চলে। ব্যাপারে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেকের সভায় প্রশ্ন তুলেছেন এবং গবেষণা জোরদার করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা আশাব্যঞ্জক। আমি মনে করি, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্তসংখ্যক পিএইচডি পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ থাকা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী পিএইচডি পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মানোন্নয়নে নিয়ামক। অথচ ইউজিসি সব বিষয় মিলে বছরে যে ১০টি পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ দেয়, তাছাড়া দেশে অন্য কোনো পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ নেই। সুতরাং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রকল্পভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পর্যাপ্তসংখ্যক পিএইচডি পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ প্রদান জরুরি। বর্তমানে প্রচলিত বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ নিয়ে বিদেশ গিয়ে অনেকে আর দেশে ফেরত আসতে চান না। সেক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সম্পৃক্ত করে স্যান্ডউইচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় বঙ্গবন্ধু পিএইচডি ফেলোশিপ প্রদান করলে গবেষণাগুলো দেশের প্রয়োজনে হবে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা দেশে সরাসরি অবদান রাখতে পারবেন। সরকার বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণারত বাংলাদেশী পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হাজার ট্যালেন্ট হান্ট প্রকল্প তৈরি করে নির্বাচিত গবেষকদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের মাধ্যমে গবেষণায় গতিশীলতা নিয়ে আসতে পারে। চীন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ এভাবে ব্রেইন গেইন প্রকল্পের মাধ্যমে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে। উচ্চবেতন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রেষণে নিয়োগ প্রদান করলে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মানসম্মত শিক্ষা গবেষণা করতে সক্ষম হবে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে একদল শিক্ষক সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) যোগদান করেছিলেন। ফলে বাকৃবি খুব কম সময়েই বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা পুনরায় প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগ নিতে পারি।

 

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাকি কর্মমুখী শিক্ষায় আমাদের বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত এবং তা কেন?

আমাদের দেশকে উচ্চশিক্ষা কর্মমুখী শিক্ষা দুদিকেই মনোযোগী হতে  হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে দরকার মানসম্মত শিক্ষা। আমাদের পাঠ্যক্রম এমনভাবে পরিমার্জন করতে হবে যেন শিক্ষা শেষে কর্মক্ষেত্রে জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হয়। এছাড়া ইতিহাস, সংস্কৃতি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরিতে পাঠ্যক্রমে যথাযথ পরিমার্জন দরকার। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় জনসংখ্যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। সেজন্য দক্ষ এবং মানসম্মত শিক্ষিত জনসম্পদ দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমাদের মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা ক্ষেত্রেও জোর দিতে হবে। দেশকে ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করতে হলে আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যেন শিক্ষা নতুন প্রজন্মকে মানবসম্পদে উন্নীত করতে পারে।

 

করোনা মহামারীতে দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে করেন?

অনলাইন শিক্ষা নিয়ে এর আগে আমি অনেক কথা বলেছি। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে তাল মেলাতে হলে জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সফল ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারী আমাদের অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে এবং অনলাইন শিক্ষার বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। মহামারীতে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই অনলাইনে নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল থাকায় খুব একটা সফলতা আসছে বলে মনে হয় না। যদিও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে কিন্তু পরীক্ষা গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা এবং অবকাঠামোর স্বল্পতার কারণে সম্ভাবনার অনলাইন শিক্ষা কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাচ্ছে না। এটি ফলপ্রসূ করার জন্য  শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন অবকাঠামো তৈরি, অনলাইন শিক্ষার প্রতি মনঃসংযোগ এবং সারা দেশে উচ্চগতিসম্পন্ন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। তাহলে অনলাইন শিক্ষা শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার এক বিকল্প হিসেবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন