পশ্চিমবঙ্গে বড় জয় তৃণমূলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৃণমূলের হাতেই থাকল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্ব। মোদি-শাহের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয় পেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের সুযোগ পাচ্ছে তৃণমূল।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আট ধাপে নেয়া ভোট গণনা হয় গতকাল। রাত একটা পর্যন্ত ভোট গণনার সর্বশেষ পাওয়া তথ্য বলছে, রাজ্যের ২৯২ আসনের ২১৪টিতেই জয় পেতে যাচ্ছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। বিজেপি এগিয়ে ৭৬টি আসনে।

বিপুল ভোটে তৃণমূলের জয়ের প্রতিক্রিয়ার শুরুতেই রাজ্যবাসীকে অভিনন্দন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, জয় বাংলার জয়, বাংলার মানুষের জয়। জয় ভারতবর্ষের মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২২১ আসনে জয়ের। এবার আমাদের প্রথম কাজ হবে করোনা মোকাবেলা করা।

মমতা বলেন, এবার সত্যিই খেলা হয়েছে। আর সেই খেলায় আমরা জিতেছি। তাই আমি গ্রামের বিভিন্ন ক্লাবকে ৫০ হাজার ফুটবল উপহার দেব। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন চাইব। না দিলে আন্দোলনে নামব। করোনার কারণে এখন বিজয় উৎসব নয়। করোনা গেলে আমরা কলকাতার ব্রিগেডে বিজয় উৎসব করব।

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আসন ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকে রেকর্ড সংখ্যক ফল ঘরে তুলতে যাচ্ছে তৃণমূল। এর আগে কোনো বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে এত আসন পায়নি তারা। শতাংশের হিসাবেও এবারই মমতার দলের ঝুলিতে সবচেয়ে বেশি ভোট। ভোট গণনার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪৮ শতাংশের বেশি ভোট পেতে চলেছে তৃণমূল। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ছয়টি লোকসভা পাঁচটি বিধানসভা ভোটে লড়েছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের দিক থেকে পর্যন্ত সর্বোচ্চ ফল হয়েছিল ২০১৬ সালে। ৪৪ দশমিক ৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে ২১১টি আসনে জিতেছিল জোড়াফুল। ভোট শতাংশের পাশাপাশি আসন প্রাপ্তির হিসাবেও এবার সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে তারা। এর আগে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮৪টি আসন দখল করেছিল তৃণমূল। তবে সেবার তারা লড়েছিল ২২৬টি আসনে।

তৃণমূল কংগ্রেসের বড় জয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক টুইট বার্তায় মোদি বলেন, মমতা দিদিকে পশ্চিমবঙ্গে তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের জন্য অভিনন্দন। কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জনগণের প্রত্যাশা কভিড-১৯ মহামারী থেকে বের হয়ে আসতে সব ধরনের সম্ভাব্য সহযোগিতা দিয়ে যাবে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরুর পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক দলের নেতারা। এর মধ্যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইটে মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, জয়ের জন্য অভিনন্দন। কী অসাধারণ লড়াই! পশ্চিমবঙ্গের মানুষকেও আমার শুভেচ্ছা।

একই দিন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের আরো চারটি রাজ্যেরও ভোট গণনা হয়। এগুলো হলো কেরালা, তামিলনাড়ু, আসাম কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মতোই বিজেপি বড় ব্যবধানে হারছে কেরালা তামিলনাড়ুতে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেরালায় ১৪০টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) এগিয়ে রয়েছে ৯৯টিতে। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ৪১টি আসনে এগিয়ে ছিল। ভোট গণনার শেষ দিকেও কেরালায় একটি আসনেও জয়ের পথে ছিল না বিজেপি।

এদিকে তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হতে চলেছে। ভোটে হেরে এক দশক পর ক্ষমতার বাইরে যাচ্ছে জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে। তাদের জায়গায় ক্ষমতায় আসছে ডিএমকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তামিলনাড়ুতে ১৫৪ আসনে এগিয়ে রয়েছে এম কে স্টালিন নেতৃত্বাধীন ডিএমকে। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এআইএডিএমকে এগিয়ে রয়েছে ৭৫ আসনে। রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৮টি আসন।

আসামে সরকার গড়ার পথে এগিয়ে রয়েছে মোদির দল বিজেপি। ১২৬টি আসনের মধ্যে ৭৫টিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর কংগ্রেসের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিল ৪৯টি আসনে। রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৬৪টি আসন।

এছাড়া কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরি রাজ্যে ৩০টি আসনের মধ্যে বিজেপির জোট এনআরসির প্রার্থীরা এগিয়ে ছিল ১৬টিতে। আর ৯টি আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। রাজ্যে সরকার গঠন করতে হলে ১৬টি আসন পেতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন