অভিমত

প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা, মহামারী ও মানুষের আচরণ

বিধান চন্দ্র পাল

আচরণ বদলটাই সময়ের মুখ্য আলোচনার বিষয়। কভিড-১৯-এর সংক্রমণ সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে আবার বাড়তে শুরু করেছে, তাতে বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্যবিদ, দার্শনিক, মনস্তাত্ত্বিক, সমাজতত্ত্ববিদসহ অনেকের অভিমত একটাই সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় কিংবা রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম উপায় হলো মানুষের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।

আমরা অহরহ দেখতে পাচ্ছি, মানুষ পরিবেশ প্রকৃতির আচরণ মুহূর্তেই পরিবর্তন করে দিচ্ছে এবং দিতে পারে। কিন্তু কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিস্থিতিতে মানুষের যেসব আচরণের পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, তা কি খুব সহজে করা যাবে? সেটাই এখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হবে!

চোখের নিমেষে এখন মানুষ পরিবেশ প্রকৃতিকে পরিবর্তন করছে। জোর করে, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে, অবৈধ অন্যায়ভাবে, এমনকি আইনের প্রশ্রয়েও হচ্ছে অনেক কিছুই। বনভূমি উজাড় করে তৈরি হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি শিল্প-কারখানা, শুরু হচ্ছে চাষাবাদ। ফসলি আবাদি জমি পাল্টে হচ্ছে ইটভাটা, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নদী ভরাট হয়ে সেখানে তৈরি হচ্ছে সড়ক, সরকারি পুকুর ভরাট করে রাতারাতি তৈরি হচ্ছে বসতভিটা কিংবা দোকান, চলছে প্লট বরাদ্দের বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের মাঠে হঠাৎ পুকুর তৈরি করে হচ্ছে মাছ চাষ।

জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে হচ্ছে সড়কপ্রতিনিয়ত মারা পড়ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী, অবিরাম পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা এবং বিনোদনের ক্ষেত্রসহ আরো কত কিছু, টিলা কেটে তৈরি করা হচ্ছে কলাবাগান হাউজিং কমপ্লেক্স। রকম অনেক উদাহরণ তুলে ধরা সম্ভব। নির্ভরযোগ্য মিডিয়ার সাহসী ভূমিকায় কল্যাণে এসব খবর নিশ্চয়ই আমাদের অজানা নয়। চোখের সামনেই এসব পরিবর্তন আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, যা অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রয়োজনীয়, অশোভনীয়, বেআইনি এবং চরম নিন্দনীয় কাজ। একই সঙ্গে তা অনেক কারণের পাশাপাশি কভিড-১৯-এর মতো রোগ সৃষ্টির পেছনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  

পরিবেশ প্রকৃতি কথা বলতে পারছে না, দুর্বলের ওপর সবলের অর্থাৎ মানুষের আঘাত তাই ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। ফলে এটা সুস্পষ্ট পরিষ্কার যে মানুষ চাইলেই এখন নিজের প্রয়োজনে স্বার্থে প্রকৃতি পরিবেশের আচরণে বড় বড় পরিবর্তন ঘটিয়ে দিচ্ছে। সমস্যা হলো আচরণ পরিবর্তনের ফলটা যদি মানুষ তাত্ক্ষণিকভাবে দেখতে পেত বা দেখানোর কোনো ব্যবস্থা ব্যবস্থাপনা থাকত তাহলে মানুষ হয়তো এসব আচরণ পরিবর্তন থেকে নিজেদের অনেকটাই নিবৃত নিয়ন্ত্রিত করত।

আমরা জানি পরিবেশ একটু একটু করে পরিবর্তন হয়, ফলে পরিবেশের ক্ষতির ফল যারা ক্ষতি করছে তারাই যে ভোগ করবেএমনটা না- হতে পারে; হতে পারে সেটা ভোগ করবে অন্য স্থানের মানুষ, সারা দেশ অথবা পরবর্তী প্রজন্ম। এজন্যই তাত্ক্ষণিকভাবে মানুষকে তার ভুল বা করণীয় সম্পর্কে উপলব্ধি করানোর একমাত্র সর্বোত্কৃষ্টতম উপায় হলো আইনের সফল প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এজন্য বিশেষভাবে পরিবেশ প্রকৃতি সুরক্ষার ক্ষেত্রে আইনের সফল প্রয়োগের সব ধরনের ব্যবস্থা ব্যবস্থাপনাও থাকা প্রয়োজন। ধরনের ব্যবস্থা ব্যবস্থাপনার ঘাটতি নানামুখী দুর্বলতা আমাদের রয়েছে, যা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সময়ে দূর করাটা অত্যন্ত জরুরি।  

সাধারণভাবে বলা হয়, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু সব মানুষ কি সৃষ্টির সেরা? আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, না। প্রতিটি মানুষকে অনুশীলন চর্চার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়; সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে উঠতে হয়। আর সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে ওঠার যেসব বৈশিষ্ট্য, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে বিবেক আচার-আচরণ অন্যতম।

অবশ্য কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তির আচরণ পরিবর্তনটাই জরুরি নয়। জরুরি সামষ্টিকভাবে মুহূর্তে সবার স্বাস্থ্যবিধি দৃষ্টিকোণের আচরণগুলো পরিবর্তন হওয়াটা। সাধারণত রোগ-জীবাণু যেসব মাধ্যমে ছড়ায়, সে সম্পর্কে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করা যায় কীভাবে, কার্যকর পদ্ধতিতে সহজভাবে স্বল্প সময়ে স্বাস্থ্যবিধিগুলো আয়ত্ত করা যায় কীভাবে, জনপরিসরে একজন মানুষের আচরণ কেমন হবে, অন্যের সঙ্গে ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে কৌশল কী হবে, বাস রেলস্টেশনের মতো জনসমাগম স্থলগুলোর নকশা কেমন হওয়া চাইপ্রতিটি বিষয়ের সঙ্গেই মানুষের আচরণ পরিবর্তনের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

ধারণা করা হচ্ছে, কভিড-১৯-এর ভোগান্তি থেকে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি নিস্তার পাবে না। এজন্য সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে এগিয়ে যেতেও আমাদের অনেকটা সময় পাড়ি দিতে হবে। ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতেও দীর্ঘ সময় লাগবে। উপরন্তু যোগ হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ভাইরাসের আবির্ভাব। ফলে সব প্রজাতির ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর একক ভ্যাকসিন আবিষ্কার করাটা দীর্ঘ সময় গবেষণার ব্যাপার। তাই সামগ্রিকভাবে একটি এলাকার মানুষ, একটি সমাজের মানুষ, একটি দেশের মানুষ যত দ্রুত সম্ভব নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি সমুন্নত আচরণগুলো আয়ত্ত সঠিকভাবে চর্চা করবে, ততটাই রোগ ওই নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ন্ত্রিত থাকবে, ওই এলাকার মানুষ সুরক্ষিত হবে।

অন্যভাবে বলতে গেলে কভিড-১৯ মোকাবেলা করাটা একদিকে বৈজ্ঞানিক, অন্যদিকে সামাজিক চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত বিজ্ঞানীরা কভিড-১৯ মোকাবেলায় তিনটি কৌশলের কথা গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই কৌশলগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার অধিকাংশ মানুষকে টিকা প্রদান করাটা অনেকটাই দুরূহ যথেষ্ট ব্যয়বহুল পরিকল্পনা। কারণ কোনো একটি দেশে সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এলেই দেশব্যাপী সুরক্ষাবলয় তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হয় (সূত্র: বিবিসি জানুয়ারি, ২০২১)

বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়া এবং নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার বিষয়টিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়াসহ নানা কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সর্বোত্কৃষ্টতম যে উপায়টি গ্রহণ করাটা আমাদের জন্য সমীচীন হবে সেটি হলো, স্থায়ীভাবে মানুষ সমাজের আচার-আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসা।

কভিড-১৯ আসার পর থেকে গত এক বছরে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব তুলে ধরতে অনেক কিছুই করা হয়েছেচলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা, গণজমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ ধরনের অসংখ্য সরকারি নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প সচেতনতামূলক উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।

রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, টকশো, সামাজিক মাধ্যম প্রভৃতিতে ফলাও করে আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে। তার পরও এখনো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না। যারা জানে, তারাও সেটা সঠিকভাবে মানছে না। সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সমীক্ষা গবেষণায় চিত্রই আমরা খুঁজে পেয়েছি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ভেতরে জন্ম নেয় যে মানুষের আচরণ পরিবর্তন করাটা কি এতটাই সহজ? নাকি সঠিক পদ্ধতির অভাবে আমরা সেটা পারছি না। সম্পর্কিত একটি মূল্যায়ন হওয়াটা বোধ হয় জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব পর্যায়ের মানুষ যাতে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেজন্য প্রয়োজনে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করারও দরকার।

প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি প্রশ্নও সামনে চলে আসে। সেটি শিক্ষা নিয়ে। একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়ারও পূর্বশর্ত হলো নৈতিকতা মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদ। দেশে পাঠ্যশিক্ষার হার বাড়ছে, তাতে সন্দেহ নেই; কিন্তু নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ কি আসলেও তৈরি হচ্ছে? আমরা কি আসলেও আগামী প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারছি? আমার মতে, তৈরি হচ্ছে না এবং তুলতে পারছি না। যদি সেটা আমরা পারতাম তাহলে আচরণ পরিবর্তনের কাজটি হয়তো আরো সহজ হতো।

কভিড-১৯-এর মতো জাতীয় বৈশ্বিক দুর্যোগের সময়কালে মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার অধঃপতনের দৃষ্টান্তগুলো (উদাহরণস্বরূপ আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা, পরিবেশ প্রকৃতির প্রতি অন্যায়-অবিচার, নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ ইত্যাদি) নোংরাভাবে আমাদের দেখতে হতো না। আমাদের বিরাট এক ব্যর্থতা। অনৈতিকতা মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলেই সমাজ রাষ্ট্র কাঠামোয় অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, যা শিক্ষার গুণগত ঘাটতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে পাঠ্যক্রমে কিছু সংস্কার আনার কথা আমরা শুনেছি, সেখানে আচরণ পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক শিক্ষার মতো বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আদৌ সেগুলো কতটুকু কার্যকর পদ্ধতিতে করা হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ের অবকাশ থেকে যায়। ফলে এসব বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে মূল্যায়ন যথেষ্ট ভাবনার প্রয়োজন আছে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কভিড-১৯-এর সময়কালে শিক্ষার্থীরাই হতে পারত পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার। তাই সময়কালে শিক্ষার্থীদের সবার আগে স্বাস্থ্যবিধি সমুন্নত আচরণ বিষয়ে সঠিক জ্ঞানদান করা প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ অগ্রাধিকার দিয়ে করা উচিত ছিল। অথচ কাজটি এত দিনেও আমরা ভালোভাবে করতে পারিনি, করেছি বিচ্ছিন্নভাবে।

কাজটি করার জন্য আমার মতে দেশব্যাপী জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেখানে স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরাসহ বিভিন্ন পেশার ধর্মের সবাই একযোগে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সচেতন করে তুলবে। কাজটি করার জন্য অবশ্যই প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে। আরো অনেক সহায়ক উপায় (উদাহরণস্বরূপ স্থানীয় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় মিডিয়া, বিভিন্ন যুব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতাকে কাজে লাগানো প্রভৃতি) খুঁজে বের করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে শহর থেকে গ্রাম, ধনী থেকে দরিদ্র সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব। তারা যদি বিষয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে তাহলে এর মাধ্যমে সবার আচরণগত পরিবর্তন আনার বিষয়টি অনেকটাই সহজ হবে। 

প্রসঙ্গত, ১৮ মার্চ ২০২০ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে শিক্ষা প্রদান বন্ধ আছে (সূত্র: ওয়েবসাইট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়) পরবর্তী সময়ে আমরা জানি, ধীরে ধীরে অনলাইনে শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম চালু করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব অনলাইন ক্লাসের শুরুতেও যদি বাধ্যতামূলকভাবে অন্তত মিনিট স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হতো, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার যে সংস্কৃতি বর্তমানে গড়ে উঠতে শুরু করেছে, তা অনেকাংশেই দূর হয়ে যেত। কারণ একজন শিক্ষার্থীই পারে তার পুরো পরিবারের আচরণবিধি নিমেষে পরিবর্তন করতে। কভিড-১৯ সংক্রমণ আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখতে অনুরোধ করব। 

অবশ্য একথা সত্যি যে যেকোনো ধরনের আচরণগত পরিবর্তন আনাটা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর যদি সেটা বড় পরিসরের জন্য হয় (অর্থাৎ বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন এলাকার ইত্যাদি) তাহলে সেটা আরো কঠিন, কিন্তু কঠিন হলেও সেটা অসম্ভব নয়।

দল, স্বার্থ এসবের ঊর্ধ্বে উঠে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আরো জোরালো কর্মসূচি জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা এজন্য জরুরি হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সম্মিলিত কার্যক্রম এজন্য প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে মিডিয়াসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতাকেও এজন্য কাজে লাগানোর।

পরিশেষে, কভিড-১৯ থেকে পরিত্রাণের জন্য সহজ কোনো উপায় আসলেও নেই। আচরণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা সবসময় পরিবেশ প্রকৃতিকে বিপদে ফেলে এসেছি। এখন যে বিপদের মধ্য দিয়ে আমরা হেঁটে চলেছি, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পরিবেশ প্রকৃতির প্রতি যে অন্যায় আচরণ আমরা করছি কিংবা করে এসেছি, সেসব আচরণ নিজেদের সংশোধন করতেই হবে। আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে খেয়াল রাখতে হবে প্রকৃতি পরিবেশের প্রতি এমনসব আচরণ কোনোভাবেই যেন আর না ঘটে।

একই সঙ্গে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হলে নিজেদেরও আচার আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, ধর্মগুরু, মিডিয়া কর্মী, চিকিৎসক, দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিসহ সবার প্রতি আমার আন্তরিক আবেদনআপনারা যখন সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাবেন কিংবা পরামর্শ দেবেন, তখন নিজেরা সেগুলো সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা তা বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। কারণ আপনি নিজে থুতনির নিচে মাস্ক নামিয়ে, মুখ খোলা রেখে সম্পর্কে জনগণকে যদি বোঝাতে বা বলতে চান, তাহলে ব্যাপারটা সত্যিই বুমেরাং হয়ে যাবে। তাই আমাদের সময়ের একমাত্র ব্রত প্রতিজ্ঞা হোকপ্রত্যেকেই একেকজন স্বাস্থ্যবিধি সচেতন সমুন্নত মানুষ হয়ে উঠি!

অনেক কিছুই আমরা জয় করেছি। কভিডকেও আমরা আমাদের আচরণ পরিবর্তন দিয়ে, আমাদের সচেতনতা দিয়ে আরো শক্তভাবে মোকাবেলা করতে পারব, সেটাই আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি। আর আমরা যদি সত্যি সত্যিই সেটা করে দেখাতে পারি, তাহলে বিশ্বের বুকে আমাদের অবস্থান কভিড-১৯ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অনন্যদৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে বলে মনে করি।

 

বিধান চন্দ্র পাল: সদস্য, নির্বাহী পরিষদ, নগর গবেষণা কেন্দ্র (সিইউএস, ঢাকা); যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন