ভারতের উত্তরাখন্ডে হিমবাহ ধসে ভেঙে পড়েছে নদীর বাঁধ

১৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

হিমালয়ের কোল ঘেঁষে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখন্ডে হিমবাহ ধসের ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল সকালে এখানকার চামোলি জেলার জোশিমঠে হিমবাহ ধসের ঘটনায় বাঁধ ভেঙে গেলে অলকানন্দা ধউলি গঙ্গা নদীর উপত্যকা প্রবল পানির তোড়ে ভেসে যায়। সময় ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী তপোবন বিষ্ণুগড় ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত দেড় শতাধিক কর্মী নিখোঁজ হন বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতীয় সেনা বিমান বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। খবর রয়টার্স এনডিটিভি।

হিমবাহ ধসের পর পরই ঋষিগঙ্গা বাঁধ ভেঙে গেলে ধউলি গঙ্গা নদী হয়ে তুমুল বেগে পানির স্রোত ভাটির দিকে নামতে শুরু করে। ভেসে যায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের অবকাঠামো আশপাশের লোকালয়। বিধ্বস্ত হয় কয়েকটি সেতু সড়ক। প্রবল পানির তোড়ে ভাটির প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তরাখন্ড সরকার। তবে অলকানন্দা অববাহিকা অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়েছে।

স্থানীয় রেনি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় সিংহ রানা বলেন, পানির স্রোত পাহাড়ি ঢল হয়ে এত দ্রুত নেমে এসেছে যে কাউকে সতর্ক করার সময় মেলেনি। আমি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। ভেবেছিলাম গ্রামের সবাই স্রোতে ভেসে যাবে।

উত্তরাখন্ডের পুলিশ প্রধান অশোক কুমার জানান, ঋষিগঙ্গা হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট নির্মাণাধীন তপোবন বিষ্ণুগড় হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের শতাধিক কর্মীর খোঁজ মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রবল স্রোতের তোড়ে তারা ভেসে গেছে। তবে তপোবন প্লান্টের টানেলে আটকে পড়া ১৬ শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারীরা।

হিমবাহ ধসের ঘটনায় সৃষ্ট বন্যায় ১০০-১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছেজানিয়েছেন উত্তরাখন্ডের প্রধান সচিব ওম প্রকাশ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত বলেন, এখন পানির স্রোত অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কেন্দ্র রাজ্য সরকারের যৌথ অভিযানে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেনা বিমান বাহিনীর ৬০০ সদস্য হেলিকপ্টার নিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছেন। এছাড়া ঘটনাস্থলে দুটি চিকিৎসক দল একটি প্রকৌশলী টাস্কফোর্স পাঠানো হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ)

হিমবাহ ধসের পর পরই উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইট বার্তায় শোক জানান তিনি। মোদি লেখেন, পুরো ভারত উত্তরাখন্ডের পাশে রয়েছে এবং জাতি প্রত্যেকের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করছে। টুইটারে শোক জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ দেশটির রাজনৈতিক নেতা সেলিব্রিটিরা।

এর আগে ২০১৩ সালের জুনে অতিবৃষ্টি থেকে উত্তরাখন্ডে তীব্র বন্যা দেখা দেয়। প্রবল পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায় এখানকার জনপদ। মৃত্যু হয় ছয় হাজারের বেশি মানুষের। ওই সময় ঘটনাকে হিমালয়ান সুনামি নামে উল্লেখ করে ভারতীয় গণমাধ্যম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন